Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিরামহীন শক্তি যোগান দিচ্ছে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

মো. জাকির হোসেন, পটুয়াখালী থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

চলমান করোনা সঙ্কটে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছে যথানিয়মে। প্রতিদিন এ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হচ্ছে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজওয়ান ইকবাল খান জানান, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে ১২ থেকে ১৩শ’ চীনা নাগরিক কর্মরত রয়েছে। তারা সকলেই সুস্থ এবং মেডিক্যাল টিমের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এপ্রিলের ৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ১৭০০ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজের জন্য প্রবেশ করে। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল থেকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বনে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
রেজওয়ান ইকবাল খান আরও জানান, জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে কয়লা আমদানির কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে চলছে। গত ২২ মার্চ ইন্দোনেশিয়ার বালিকপানান বন্দর থেকে এমভি বাল্ক বিওথাক নামে একটি কয়লাবাহী জাহাজ প্রায় ২২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে নোঙর করে। সে সময়ে বিদেশিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করা হয়।
পরবর্তীতে গত ৩১ মার্চ ২২ হাজার ২২০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে জাহাজটি তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়ে। জাহাজে থাকা ক্রুসহ ২২ জন কর্মচারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর কয়লা খালাসের কাজ শুরু করা হয়। এসময় কাউকেই জাহাজ থেকে নামতে দেয়া হয়নি। আনলোডিংয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সেফটি জ্যাকেট, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, সেফটি সু, মাথায় হেলমেট পড়ে কাজ করতে দেয়া হয়। এছাড়াও শ্রমিকদের জাহাজ থেকে নামার সময় এবং ওঠার সময় হাত ধুয়ে আনলোডিংয়ের কাজ করানো হয় । বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যখন ১৩২০ মেগাওয়াট পূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে, তখন প্রতিদিন ১৩ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে।
প্রাথমিকভাবে আগামী ৪ বছরের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহসহ জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ৯ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ হাব তৈরির পরিকল্পনায় এগিয়ে চলছে পায়রা বিদ্যুৎ হাব। এছাড়াও পায়রা বন্দরকে ঘিরে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে একাধিক মেগা প্রজেক্ট। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণকল্পে ইতোমধ্যে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি পায়রা বন্দর সংলগ্ন এলাকায় ৯১৫ একর জমি অধিগ্রহণ পরবর্তী পুনর্বাসন কাজ চলছে।
গত ১৩ জানুয়ারি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে পায়রা-গোপালগঞ্জ সঞ্চালন লাইনে সফলভাবে চালু করার মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। এ জন্য প্রায় ১৩৬ কি.মি. দীর্ঘ ডাবল সার্কিটের হাই ভোল্টেজ লাইনটি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পটুয়াখালী সদর হয়ে গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলায় নবনির্মিত ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র পর্যন্ত টানা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও দ্বিতীয় পর্যায়ের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দ্বিতীয় ইউনিটের কমিশনিং চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে কেন্দ্রের একটি সূত্র জানায়।
এ সকল মেগা প্রজেক্টে টেকনিক্যাল কাজে বিদেশি এক্সপার্টদের অংশগ্রহণ বেশি, যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে যাচ্ছে তা দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন এখানকার প্রকৌশলীরা।

 



 

Show all comments
  • *হতদরিদ্র দিনমজুর কহে* ১২ এপ্রিল, ২০২০, ১০:২৭ এএম says : 0
    আশার আলো।এ।সরকারের বড় সফলতা বিদ্যুৎ খাতে।বর্তমান মহামারীতে ত্রান,প্রনোদনা ঘোষনা বলিষ্ঠ পদখ্খেপ।কিন্তু বন্টনে অনিয়ম দুর্নিতি কতটুকু সফল হয়,তা এখন দেখার বিষয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তাপ বিদ্যুৎ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ