পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1719622707](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে সে দেশের দেশপ্রেমিক সেনা-জনতা। গত শুক্রবার সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। অভ্যুত্থানকারী বিপথগামী এই সেনা অংশের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, এরদোগান সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। তাদের তরফে সামরিক আইন জারির ঘোষণাও দেয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামরিক অভ্যুত্থান নস্যাতের ঘোষণা দেয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, পরিস্থিতি সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। বিপথগামী সেনাদের পরাস্ত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর বড় অংশটি কুচক্রীদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরাখবর থেকে প্রতীয়মান হয়, অভ্যুত্থানটি ছিল পরিকল্পিত। অভ্যুত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট এরদোগান কৃষ্ণসাগরীয় এলাকার মারমারিসে একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। অভ্যুত্থানের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন। এর পরপরই সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে রক্ষা পান। ওদিকে অভ্যুত্থানকারীরা সেনাপ্রধান জেনারেল হুলসি আকারকে জিম্মি করেন। পরে তাকে রাজধানী আংকারার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আকিনসি বিমানঘাঁটি থেকে উদ্ধার করা হয়। অভ্যুত্থানকারীরা প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট ভবনেও হামলা চালায়। বলা বাহুল্য, অভ্যুত্থানকারীরা তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করার আগেই তারা সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশের প্রতিরোধের মুখে বেদিশা হয়ে পড়েন। এরপর জনগণ সেনাবাহিনীর পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিলে তারা রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্ট এরদোগান অভ্যুত্থানকারীদের প্রতিরোধে নামার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানালে দলে দলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সেনা-জনতার এই যূথবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে অভ্যুত্থানকারীরা সম্পূর্ণ হতাশা হয়ে পড়েন এবং তাদের অনেকে সেনা-জনতার পক্ষে ভিড়ে যান। জানা গেছে, এই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। অভ্যুত্থানকারীদের কমপক্ষে ৫০ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৫৭ জনকে। অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত সেনাবাহিনীর বিদ্রোহী দলটিকে কারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট না হলেও গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। একজন তুর্কি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ২৯ জন কর্নেল ও পাঁচজন জেনারেলকে অপসারণ করা হয়েছে।
সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার কারণে তুরস্ক বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে। এজন্য অবশ্যই সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক ও সরকারের অনুগত অংশ উচ্চ প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়া জনগণ প্রেসিডেন্ট এরদোগানের আহ্বানে যেভাবে রাস্তায় নেমে এসে প্রতিরোধব্যূহ রচনা করে, সেটাও অকুণ্ঠ প্রশংসার দাবিদার। এতে সরকারের প্রকৃত শক্তি কোথায় সেটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোগান অসাধারণ সাহসিকতা, দৃঢ়চিত্ততা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি দ্রুত মারমারিস থেকে ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রবর্র্তী ভূমিকা রাখেন। বিশ্ব পরিস্থিতির বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে দেশ হিসেবে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অধিকার করতে সমর্থ হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে নির্বাচিত এরদোগান সরকারের বাস্তব ও জাতীয় স্বার্থানুকূল নীতি-পদক্ষেপ এবং এরদোগানের গতিশীল ও অগ্রসর নেতৃত্ব। অভ্যুত্থানকারীরা সফল হলে দেশ হিসেবে তুরস্ক তার বর্তমান অবস্থানই হারাত না, একই সঙ্গে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হতো। অন্যদিকে এরদোগানের মতো একজন বিচক্ষণ, দূরদর্শী নেতার নেতৃত্ব থেকেও বঞ্চিত হতো। এরদোগান তুরস্কের উত্থান ও উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তা বিশ্ববাসীর প্রশংসা অর্জন করেছে। তিনি তুরস্কেরই নন, মুসলিম বিশ্বেরও একজন মান্য নেতা। বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ ও স্বার্থে তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা কারো অজানা নেই। যারা তাকে হত্যা করতে চেয়েছেন, বিদ্রোহ করেছেন, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছেন তারা না তুরস্কের মিত্র, না তুর্কি জাতির কল্যাণকামী, না মুসলিম বিশ্বের সুহৃদ। তারা তাদের অপচেষ্টার দ্বারা নিজেদের ইহুদি-খ্রিস্টান ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর হিসেবেই প্রতিপন্ন করেছেন। সঙ্গতকারণেই আমরা এই অভ্যুত্থান চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই। অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই প্রেসিডেন্ট এরদোগান, তার সরকার ও সাহসী তুর্কি জনগণের প্রতি। অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য তাদের জানাই ধন্যবাদ।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার উৎখাত কোনো বিবেচনাতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। যারা এ ধরনের চেষ্টা করেন, তাদের দেশের প্রতি, সরকারের প্রতি ও সংবিধানের প্রতি আনুগত্য আছে, জনরায় ও জন-আকাক্সক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা আছে, মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবেই পরিগণিত হন। প্রেসিডেন্ট এরদোগানও অভ্যুত্থানকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বলেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছে। এটা রাষ্ট্রদ্রোহ। অভ্যুত্থানের পেছনে যারা জড়িত আছেন তাদের কড়া মূল্য দিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, চড়া মূল্যই তাদের প্রাপ্য। সঙ্গতকারণেই আশা করা যায়, তুরস্ক সরকার অতঃপর অভ্যুত্থান চেষ্টার কারণ এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এরদোগান ও তার সরকারের প্রতি যে সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন, তা অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক। আমরা আশা করব, তুরস্ক সরকার আরও সতর্ক হবে এবং সুশাসন ও জনকল্যাণে তার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করবে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তার সরকার যে সঠিক পথে আছে, অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়া এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমর্থনের মধ্য দিয়ে তা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।