পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নতুন চারটিসহ মোট পাঁচটি প্যাকেজে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এইসঙ্গে দরিদ্র মানুষজনের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বস্তুতপক্ষে অচল হয়ে পড়েছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যাতে করোনার প্রভাব পড়েনি। প্রভাবের মাত্রা ও পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। এমতাবস্থায়, প্রভাব মোকাবেলা করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এরকম প্যাকেজের প্রয়োজন ছিল অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে এটাও বলা দরকার যে, ঘোষিত প্যাকেজগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় এবং সম্পূর্ণও নয়। ভবিষ্যতে এমন হতে পারে, এই সব প্যাকেজে আরো সংযোজন ঘটাতে হবে, পরিপূর্ণতা আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, এটা তার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। শিল্পপতি, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই উৎপাদন, রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত ও বিচলিত হয়ে পড়েছিল সঙ্গত ও স্বাভাবিক কারণে। প্রধানমন্ত্রীর এ সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার পর তাদের সকলের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। পুরো প্যাকেজ ঠিকমত বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতিতে স্বাভাবিকতা ও গতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবাখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি মূলধন যোগান দেয়া হবে। এ প্যাকেজে বরাদ্দ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ঋণসুবিধা দেয়া হবে। সুদ ৯ শতাংশ, যার অর্ধেক ঋণগ্রহিতা দেবে। অপর অর্ধেক ভর্তুকি হিসাবে দেবে সরকার। প্যাকেজ-২ এ বরাদ্দ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর আওতায় আছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে তাদের এ ঋণসুবিধা দেয়া হবে। সুদের হার ৯ শতাংশ। এর মধ্যে ৪ শতাংশ দেবে ঋণগ্রহিতা এবং ৫ শতাংশ দেবে সরকার ভর্তুকি হিসাবে। প্যাকেজ-৩ এ এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ড ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন করা হবে। বাড়বে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন, অর্থাৎ ১২ হাজার ৭৫০। এই ফান্ডের সুদহার ২.৭৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ করা হবে। প্যাকেজ-৪ এ প্রিশিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইনান্স স্কিম নামে নতুন একটি ঋণসুবিধা চালু করা হবে। এ ঋণের সুদহার হবে ৭ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী এর আগে রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার সহায়তা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, পূর্বাপর ঘোষিত আর্থিক সহায়তার প্যাকজসমূহ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমরা কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবো ইন্শআল্লাহ।
করোনাকাল কতদিন স্থায়ী হবে, কেউ বলতে পারে না। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি কতটা দাঁড়াবে এবং তা পুষিয়ে নিতে কত সহায়তা প্রয়োজন হবে, তা বলার উপায় নেই। যাহোক, সম্ভাব্য ক্ষতির একটা ধারণা করেই অর্থনীতিকে উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। আগেই বলেছি, এতে আগামীতে আরো সংযোজন হতে পারে। কাজেই, এই প্যাকেজই চূড়ান্ত নয়। প্যাকেজের ব্রেকআপগুলো দেখলে বুঝা যায়, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য রফতানি ইত্যাদিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অর্থনীতির একটি বড় খাত কৃষি। এই খাতও ক্ষতির শিকার এবং ভবিষ্যতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। দেশব্যাপী বন্দ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার নির্দেশনা কার্যকর করতে গিয়ে কৃষকরাও আবাদ-উৎপাদন, বাজারঘাট করতে পারছে না, উৎপন্ন পণ্যের ন্যায়সঙ্গত মূল্য পাচ্ছে না। তাদের এইসব ক্ষতি মোকাবেলার জন্য সহায়তা প্যাকেজ থাকলে তারাও লাভবান হতে পারতো। ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, করোনাকারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসঙ্কট বাড়তে পারে। খাদ্যনিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়তে পারে অনেক দেশের। আশঙ্কার এই প্রেক্ষাপটে আমাদের উচিৎ, কৃষিতে বড় অংকের প্রণোদনা দেয়া, যাতে কৃষকরা ক্ষতি কাটিয়ে খাদ্যসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে উৎসাহ পেতে পারে। অবশ্য এখনো আলাদাভাবে কৃষিতে প্রণোদনা ঘোষণা করা যেতে পারে। আরো কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে সেসব ক্ষেত্রে প্রণোদনার প্রয়োজন প্রশ্নাতীত। উদাহরণ হিসাবে সংবাদপত্রশিল্পের কথা উল্লেখ করা যায়। এই শিল্পের অবস্থা তুলনামূলকভাবে খুবই শোচনীয়। শিল্প টিকিয়ে রাখাই যেখানে দুষ্কর, সেখানে তার জন্য কোনো প্রণোদনা নেই। করোনাকারণে অন্যান্য শিল্পের মতো সংবাদপত্রশিল্পও একই রকম ক্ষতির শিকার। সবচেয়ে বড় কথা, এই দুর্যোগকালীন সময়ে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা অসাধারণ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তাদের বাড়তি আর্থিক সহায়তা তো দূরের কথা, সংবাদপত্রে প্রকাশিত সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল পর্যন্ত মাসের পর মাস বাকি পড়ে আছে। এই বিলের অর্থ একযোগে পরিশোধ করা হলেও সংবাদপত্র কিছুটা লাভবান হতে পারতো। সরকারি বিজ্ঞাপন কম পাওয়া বা একেবারেই না পাওয়া পত্রিকাগুলো এ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। তাদের কী হবে? এরকম যেসব খাতে সহায়তা প্রয়োজন, সরকারের উচিৎ সেসব খাতে সহায়তা দেয়া।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সহায়তা প্যাকেজের বাস্তবায়নই হলো বড় চ্যালেঞ্জ। প্যাকেজের পুরোটাই ঋণনির্ভর। ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে এই ঋণ নিতে হবে। কিন্তু এত হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার মতো সামর্থ্য ব্যাংকিংব্যবস্থার আছে কি? আছে কি যোগ্যতা, দক্ষতা ও নিষ্ঠা? বর্তমানে ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। সুদহার কমে যাওয়ায় সব ব্যাংকেরই আমানত কমে গেছে। এ অবস্থায় তারা ঋণ দিতে আদৌ পারবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন। পারবে, যদি তাদের তারল্যসংকট দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা রাখতে পারে। বড় আকারে পুনঃ অর্থায়নের কর্মসূচি নিতে পারে। এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যূনতম সুদ ব্যাংকগুলোর কাছে চার্জ করতে পারে। দ্বিতীয়ত সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ ধার নিতে পারে। এই ধার নেয়া মানে নোট ছাপানো। এছাড়া অর্থশাস্ত্রে ‘হেলিকপ্টার মানি’ বলে একটি ধারণা আছে, যা কাজে লাগানো যেতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। মোটকথা, প্যাকেজ বাস্তবায়নে টাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। এইসঙ্গে প্যাকেজের আওতায় যারা সহায়তা পাবে, তাদের তালিকা, প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ইত্যাদি নির্ধারণ করতে হবে। ব্যাংক-গ্রাহক অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি-দুষ্কৃতি সম্পূর্ণ রহিত করতে হবে। তদারকি নিশ্চত করতে হবে দরিদ্র, কর্মহীন, অসহায় এতিম ও ক্ষুদ্র পেশাজীবিদের সহায়তায় হস্ত প্রসারিত করতে হবে যুগপৎভাবে সরকারের ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।