পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কী তার স্পষ্ট চিত্র পরিষ্কার নয়। চিকিৎসকদের ভাষায়, দেশ এখন ১৫ দিনের ইনকিউবেটরে আছে। ৫ এপ্রিল এর মেয়াদ শেষ হবে। তারপর মোটামুটি একটা চিত্র পাওয়া যাবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬১ জন। গতকালই নতুন করে ৫ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৬-এ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দিন দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে করোনার এ পরিস্থিতিতে ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে গত প্রায় এক সপ্তাহে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের যে উপসর্গ তা করোনার লক্ষণের সাথে মিলে যায়। অতীতে সাধারণ জ্বর-সর্দিতে এত অল্প সময়ে এত বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা শোনা যায়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি। সচেতন মহল এতে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। সাধারণ ঠান্ডা, জ্বর, কাশিতে এক সপ্তাহের মধ্যে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা অস্বাভাবিকই বটে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এদের অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
আমাদের দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধরন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নয়। অন্যান্য দেশে যত দ্উত এটি ছড়িয়েছে, আমাদের দেশে তার বিস্তারে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে করোনার আগমন ঘটে ইটালি প্রবাসীর মাধ্যমে। এ হিসেবে এটি ইটালি থেকে এসেছে। অথচ ইটালিতে করোনা যে হ্যাভক সৃষ্টি করেছে তা অভাবনীয় এবং তা একইভাবে আমাদের দেশেও হওয়ার কথা। দেখা যাচ্ছে, এটি ভিন্ন আচরণ করছে। এর যথার্থ কারণ কী, তার ব্যাখ্যা দেয়া এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। যদিও বিভিন্ন সময়ে উষ্ণ আবহাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তবে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে, যারা ছোটবেলায় যক্ষ্মা প্রতিরোধক টিকা নিয়েছে তাদের করোনা কাবু করতে পারে না। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ এ টিকা দিয়েছে বলেই করোনাভাইরাস খুব বেশি সুবিধা করতে পারছে না বলে অনেকের ধারণা। এ ধরনের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এখন চলছে। বাস্তবতা তো এই যে, করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না, দেশ কোন পর্যায়ে রয়েছে। প্রকৃত পরিস্থিতি জানতে হলে, ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষার বিকল্প নেই। যত বেশি পরীক্ষা করা হবে ততই প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। আমরা এখনো এ কাজটি শুরু করেত পারিনি। এখনো শতকের ঘরে আটকে আছি। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনা প্রতিরোধে সাফল্য লাভকারী দক্ষিণ কোরিয়া শুধুমাত্র ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে সফল হয়েছে। চীন, জাপান ও সিঙ্গাপুর একইভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। দেশগুলো যেখানেই করোনা পজিটিভ পেয়েছে সঙ্গে সঙ্গে সে এলাকা লকডাউন করেছে। করোনাভাইরাস শনাক্তের প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও দেশ করোনা পরীক্ষার কাজটি গতি পায়নি। এটা একই সঙ্গে দুঃখ ও উদ্বেগজনক।
শুরুতে পিপিই, শনাক্তকারী কিট এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাসিলিটির অভাবের কথা বলে দায় সারা গেলেও এখন এ সুযোগ কম। এখন পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা সত্তে¡ও দ্রæত পরীক্ষা শুরু করতে গড়িমসি কাম্য হতে পারে না। তবে তার আগে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তারাই যদি নিরাপদ না থাকে, তবে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। রোগীদের চিকিৎসা তাদেরই করতে হয়। করোনা চিকিৎসা করতে গিয়ে এ পর্যন্ত শুধু ইটালিতে সত্তর জনের মতো চিকিৎসক মারা গেছেন। অনেকে অক্রান্ত হয়ে কোয়ারিন্টিনে আছেন। এ পরিস্থিতিতে, সবার আগে চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মূলত আমাদের চিকিৎসকদের জড়তার পেছনে তাদের নিরাপত্তা শঙ্কার বিষয়টিই কাজ করেছে। তাদের স্ত্রী, সন্তান, বাবা, মা, ভাই, বোনদের দিক থেকেও হয়তো বাধার মুখে পড়ছেন। কেউই চায় না তার প্রিয়জনকে জেনেশুনে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে। এদিকে সরকারের তরফ থেকে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে থাকার জন চাপ দেয়া হয়েছে। না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, চিকিৎসকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে নয়, তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের অভিমত ও প্রস্তাবিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করে চিকিৎসা কার্যক্রম সচল ও জোরদার করতে হবে। মানবিক বিবেচনায় চিকিৎসকদেরও আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে এবং দায়িত্ব পালন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।