২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মানুষের শরীরের প্রত্যেকটি জয়েন্ট বা অস্থি-সন্ধি নড়াচড়ার ক্ষেত্রে মাংসপেশির ভূমিকাই প্রধান। প্রত্যেক মাংসপেশিরই নির্দিষ্ট ফাংশন বা কাজ রয়েছে। মাংসপেশি যতক্ষণ কর্মক্ষম সবল থাকে মানুষ ততক্ষণ সুস্থ স্বাভাবিক কাজ করতে পারে। পেশিবহুল শক্তসমর্থ শরীর গঠনের ক্ষেত্রেও মাংসপেশির ভূমিকাই প্রধান।
মানবদেহের মাংসপেশিগুলির যার যার নির্ধারিত কাজ রয়েছে, যেমন- শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য নির্ধারিত মাংসপেশি, হাত-পায়ের বিভিন্ন জোড়া বা অস্থিসন্ধি নাড়ানোর জন্য নির্ধারিত মাংসপেশি, পেটের মাংসপেশি, ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নির্ধারিত মাংসপেশি । কোনো মাংসপেশি যদি তার নির্ধারিত কাজ করতে না পারে বা কম করে তবে বুঝতে হবে ওই মাসল বা মাংসপেশিতে কোনো সমস্যা রয়েছে। প্রত্যেকটি মাংসপেশির শক্তি নিরূপণের জন্য রয়েছে এক ধরনের গ্রেডিং যার নাম অক্সফোর্ড স্কেল। এই স্কেলে ০ (শূন্য) থেকে ৫ (পাঁচ) পর্যন্ত গ্রেডিং রয়েছে। গ্রেডিং যদি পাঁচ হয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে মাংসপেশিতে শক্তি ঠিক রয়েছে। গ্রেডিং পাঁচ থেকে কম হলে অবস্থাভেদে মাংসপেশির বিভিন্ন রকম সমস্যা রয়েছে বুঝতে হবে। আবার প্রত্যেকটি মাংসপেশির নির্দিষ্ট শুরু এবং শেষ রয়েছে মানে নির্দিষ্ট একটি মাংসপেশি কোথা থেকে শুরু হল এবং কোথায় গিয়ে শেষ হল। সাধারণত প্রত্যেকটি মাংসপেশিই এক একটা হাড়ের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে শুরু হয় আবার একই হাড়ের অন্য নির্দিষ্ট জায়গায় বা অন্য কোনো হাড়ে এসে শেষ হয়। মাংসপেশির মধ্যে আবার ছোট-বড়ও রয়েছে। কিছু মাংসপেশি অনেক লম্বা, আবার কিছু মাংসপেশি অনেক ছোট। বেশ কিছু মাংসপেশি অনেক চ্যাপ্টা আকৃতির, আবার কিছু একদম সরু।
মাংসপেশির ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন -
- কোনো কারণে মাংসপেশির শক্তি কমে গেলে
- অতিরিক্ত কাজ কিংবা অতিরিক্ত ট্রেনিং করলে এনডুরেন্স পাওয়ার কমে যাওয়ার কারণে ব্যথা
হয়।
- মাস্ল ক্রাম্প বা কোনো কারণে মাংসপেশিতে খিঁচুনি হলে
- মাংসপেশিতে ব্রুইজিং বা থেঁতলে গেলে
- মাংসপেশিতে টান পড়লে বা কোনো আঘাতের কারণে যদি মাংসপেশি সম্পূর্ণ বা আংশিক
ছিঁড়ে যায়
- বিভিন্ন রকম বাতরোগের কারণেও মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, যেমন- পলিমায়ালজিয়া রিউমাটিকা,
মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রম,
- কিছু কিছু অসুখ হলে নির্দিষ্ট কিছু মাংসপেশির নির্দিষ্ট পয়েন্টে ব্যথা হয়, যেমন-
ফাইব্রোমায়েলজিয়া সিনড্রম
- বিভিন্ন রকম ট্রমা বা আঘাত ইত্যাদি কারণে হাড় বা জয়েন্ট ডিসলোকেশন বা সাবলাক্সেশন
হলেও নির্দিষ্ট মাংসপেশিতে ব্যথা হয়
- স্ট্রোক বা বিভিন্ন রকম নিউরোলজিক্যাল কারণে নার্ভের সাপ্লাই না পেলে মাংসপেশি অবশ
হয়ে দুর্বল হয়ে যায়।
চিকিৎসা ঃ
মাংসপেশির ব্যথার চিকিৎসার জন্য অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যেসব চিকিৎসক প্রত্যেকটি মাংসপেশির অবস্থান, কাজ ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো অবগত শুধু তাদের কাছেই মাংসপেশির ব্যথার চিকিৎসা করা উচিত। মাংসপেশির ব্যথার চিকিৎসায় সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো। ব্যথানাশক ওষুধ সাময়িকভাবে ব্যথা কমালেও যেসব কারণে মাংসপেশির ব্যথা হয় তা দূর না হওয়ার কারণে মাংসপেশির ব্যথা কখনো সারে না। ব্যথানাশক ওষুধ মূলত কাজ করে প্রোস্টাগ্লােন্ডিন তৈরিতে বাধাদানের মাধ্যমে। প্রোস্টাগ্লােন্ডি শরীর ফোলা ও ব্যথার জন্য দায়ী। ব্যথার ওষুধ শরীরের এনজাইম সাইক্লো অক্সিজিনেজকে বাধা দিয়ে প্রোস্টাগ্লােন্ডিন তৈরি হতে দেয় না। ফলে ব্যথার অনুভূতি হয় না। ব্যথার ওষুধ শুধু ব্যথার অনুভূতি কমিয়ে সাময়িকভাবে মাংসপেশির ব্যথা কমাতে পারে কিন্তু যে সব কারণে মাংসপেশির ব্যথা হয় যেমন মাংসপেশির খিঁচুনি, শক্তি কমে যাওয়া, মাংসপেশি আংশিক বা পুরোপুরি ছিঁড়ে যাওয়া ইত্যাদি কখনো দূর করতে পারে না। তাই মাংসপেশির ব্যথায় সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি কোনো কাজে আসে না।
মাংসপেশির ব্যথার চিকিৎসার জন্য তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাই প্রত্যেকটি মাংসপেশির সঠিক অবস্থান এবং তাতে কোনো ত্রুটি রয়েছে কিনা, ত্রুটি থাকলে তা কোন ধরনের তা নির্ণয় করতে পারেন। মাংসপেশির শক্তি কমে গেলে শক্তি বাড়ানোর জন্য স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ, খিঁচুনি হলে বিভিন্ন রকম স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, মাংসপেশির টেনডন যদি আংশিক ছিঁড়ে যায় তবে ডিটিএফ এবং আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদি মাংসপেশির ব্যথার কারণ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাও প্রদান করা হয়।
মাংসপেশির ব্যথার মেয়াদ অনুযায়ী এবং কারণ অনুযায়ী চিকিৎসাও ভিন্ন ভিন্ন। হঠাৎ মাংসপেশিতে ব্যথা হলে রোগীরা ঘরেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন। মাংসপেশির ব্যথার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি হল জওঈঊ। R= Rest বা বিশ্রাম, রোগীকে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ রেখে বিশ্রামে থাকতে হবে, I= ICE ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে বরফের টুকরা বা বরফকুচি দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাসাজ করবেন। C= Compression বা চাপ, আক্রান্ত মাংসপেশি কোনো কিছু দিয়ে টাইট করে চাপ দিয়ে বেঁধে রাখবেন। E= Elevation বা উঁচু করে রাখা, আক্রান্ত স্থান হার্ট লেভেলের চেয়ে একটু উঁচুতে রাখবেন। তাই হঠাৎ মাংসপেশির ব্যথায় জওঈঊ টেকনিক অবলম্বন করবেন। জওঈঊ টেকনিক ৩ দিন ব্যবহার করলেও যদি ব্যথা না কমে তবে অবশ্যই মাংসপেশির ব্যথার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা নিন।
ডাঃ এম ইয়াছিন আলী
ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ড ও বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ
প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকের কলেজ ও হাসপাতাল,
মোবাঃ ০১৭৮৭১০৬৭০২।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।