পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস ঠেকাতে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী শাটডাউনের কারণে কলকারখানা, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধের পাশাপাশি খেত-খামারের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরাও গৃহবন্দি হয়ে পড়ায় আগামীতে খাদ্য উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আগাম সর্তকবার্তা জারি করে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন তিনটি বিশ্বসংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। গতকাল ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার প্রধান ক্যু ডঙ্গিউ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রস অ্যাধানম গেব্রিয়াসুস এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রধান রবার্তো অ্যাজেবেদোর সই করা বিবৃতিতে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের লকডাউনে আগামীতে খাদ্য উৎপাদনের উপর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। দেশে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে নাগরিক সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত হয়ে পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে ঘরবন্দি থাকা এবং সম্ভাব্য খাদ্যসংকটের আশঙ্কায় মানুষ প্যানিক বায়িং করে সুপার মার্কেটগুলোতে সাপ্লাই চেইনের উপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। অনেক সুপারমলের সেল্ফ খালি হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা এখনো বিদ্যমান। তবে বাংলাদেশে শুরুতে চালের মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও এখন এর প্রভাব খুব একটা নেই বললেই চলে। তবে পরিবহন সীমিত হয়ে পড়া এবং কৃষি শ্রমিকদের একটি অংশের ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় আগামীতে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনি প্রস্তুতি গ্রহণের উপর জোর দিচ্ছেন বিশেজ্ঞরা।
করোনাভাইরাসের প্রভাব ছাড়াও বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণেও খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এহেন বাস্তবতায় আগামীর সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য সংকট উত্তরণ দুরূহ হয়ে উঠতে পারে। খাদ্য রফতানিকারক দেশগুলো রফতানি স্থগিত বা সীমিত রাখলে জনবহুল উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্যনিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আকস্মাৎ বাংলাদেশে ভারতের রফতানি বন্ধ এবং বিভিন্ন দেশে পেঁয়াজের সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধির উদাহরণ আমাদের মনে রাখতে হবে। গত দশকেও বিভিন্ন দেশের চাল রফতানি বন্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র মানুষের জন্য বড় ধরনের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। বৈশ্বিক সংকটের সময় খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় জরুরি প্রয়োজনে শত বিলিয়ন ডলারের রির্জাভও কোনো কাজে আসে না। তবে আশার কথা হচ্ছে, অতীতের সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে যথেষ্ট সফল হয়েছে। গতকাল একটি অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত কয়েক দশকে চাল উৎপাদনে ধারাবাহিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কৃষিজমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বরতা হ্রাস পাওয়ার পরও খাদ্য উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধির পেছনে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, নতুন নতুন কৃষিবীজ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীদের সাফল্য এবং দেশের কৃষকদের সৃজনশীলতা ও নিরলস পরিশ্রম বড় অবদান রেখেছে। প্রায় চার কোটি টন চাল উৎপাদনের পাশাপাশি আলু, ভুট্টাসহ নানাবিধ ফল ও সব্জি উৎপাদনের পাশাপাশি পোল্ট্রি, ডেয়ারি ও মৎস্য উৎপাদনের উপর জোর দেয়ার কারণে কৃষিখাতে বহুমাত্রিক অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে নিজস্ব সক্ষমতা অনেক বড় অর্জন।
ধান ও আলুর বাম্পার ফলন এবং উৎপাদন বৃদ্ধি এসব খাদ্যশস্যের চাহিদা পূরণ করে রফতানি সক্ষমতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে দেশ। করোনাভাইরাসের চলমান সংকটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হচ্ছে সরকার। কৃষক ও আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চালের বড় মজুদ গড়ে তোলার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে শিল্পোৎপাদন ও বিশ্ব পরিস্থিতি যাই হোক, আমাদের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার উপর তা যেন বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে এখন বিশেষ নজর দিতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের পোল্ট্রি খাত বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তবে এ সময়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য না থাকায় বাজারে সব্জির মূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। আগামীতে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় চাহিদা, যোগান ও পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত রাখার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রভাব যেন দেশের কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করতে না পারে তা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই মহূর্তে যেমন শ্রমজীবী মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা জরুরি, একইভাবে আগামীতে সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি উদ্বৃত্ত খাদ্য রফতানি করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও তৈরি পোশাক রফতানিতে ধস নামলে তা যেন দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিতে না পারে, কৃষিখাতকে নির্ভর করে তারই প্রস্তুতি গ্রহণের সময় এখন। দেশের এক ইঞ্চি জমি ও জলাধারও যেন অব্যবহৃত না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এই মুহূর্তে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন অলস সময় কাটাচ্ছেন। এই বিপুল জনশক্তিকে যার যার অবস্থান থেকে আগামীর সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় অবদান রাখতে হবে। বৃক্ষরোপণ, পোল্ট্রি, মৎস্যচাষ ও সব্জি উৎপাদনের সাথে সাথে পরিবেশের উন্নয়ন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।