Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অর্থনৈতিক ঝুঁকি রোধে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চলমান সন্ত্রাস ও নাশকতার ঘটনার নেপথ্যে সন্ত্রাসীদের যে লক্ষ্যই থাক, এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের দ্বারা সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে দেশের বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতি। স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকা- ও নাগরিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত রাখতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাহীনতা ও আস্থাহীনতার বোধ সৃষ্টি করে। এই নিরাপত্তাহীনতা ও আস্থাহীনতার নেতিবাচক প্রভাব দেশের আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে সরাসরি আঘাত হানে। একদিকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের হুমকি অন্যদিকে জঙ্গিবাদ দমনের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের নামে গণগ্রেফতার ও আতঙ্কজনক পরিবেশ অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নেতিবাচক প্রভাব তৈরী করে থাকে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকা, গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও গোয়েন্দা নজরদারী ছাড়া দেশজুড়ে কম্বিং অপারেশন ও গণগ্রেফতারের মাধ্যমে যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয় তা সাম্প্রতিক গুলশান রেস্টুরেন্ট ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনা থেকেই বুঝা যায়। চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী টার্গেটেড কিলিং-এর শিকার হওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৫ হাজার সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেফতারের পর এই দুই হাই প্রোফাইল জঙ্গি হামলার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, গতানুগতিক ধারার ধরপাকড় করে জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয়। এর ফলে শুধুমাত্র পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পায়।
গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তার পাশাপাশি গুম, খুন ও সন্ত্রাসী নাশকতা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠলেও বৈদেশিক রেমিটেন্স এবং গার্মেন্টস রফতানীতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ফলে অর্থনীতিতে এখনো ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, গত অর্থবছরে রফতানী আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩,৪২৪ কোটি ডলার বা ৯.৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সন্ত্রাস-নাশকতার হুমকি না থাকলে রফতানী বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হয়তো আরো অনেক বেশী হতে পারত। জুলাই মাসের প্রথমদিনে গুলশানের কূটনৈতিক জোনে সন্ত্রাসী হামলায় ৯ জন ইতালীয় নাগরিক, ৭ জন জাপানী নাগরিক, ৩ জন বাংলাদেশী হত্যার ঘটনায় আইএস বা আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার দাবী অনেকটা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রথমবারে আমাদের মত সরকারও এসব ঘটনায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা গ্রহণের চিন্তা-ভাবনাও সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতিউৎসাহী ভূমিকা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে যেমন সন্দেহ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, অন্যদিকে সরকারও জঙ্গি দমনে বিদেশী সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার ইঙ্গিত দিয়েছে। পাশাপাশি সর্বমহল থেকেই দেশে একটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে সম্মিলিত প্রয়াসে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলার তাগিদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।  
বিমান বন্দরসহ দেশে নিরাপত্তাহীনতার কারণে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে তাদের কার্গো উড্ডয়ন বন্ধ করে দিচ্ছে। সেই সাথে বাংলাদেশে তৈরী পোশাক ক্রেতাদের নির্ধারিত সফর ও বৈঠকও বাতিল হয়ে যাওয়ায় দেশের গার্মেন্টস শিল্পের উদ্যোক্তারা এক প্রকার আশঙ্কা বোধ করছেন। তবে সর্বশেষ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস সামগ্রী ক্রেতাদের আন্তর্জাতিক গ্রুপ ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেইফটি’ বলেছে তারা ‘সোর্সিং কান্ট্রি’ হিসেবে বাংলাদেশকে ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অ্যালায়েন্সের এই ঘোষণা আমাদের জন্য ইতিবাচক এবং আশাব্যঞ্জক। তবে বিদেশীদের এই সহায়তার মনোভাব অটুট রাখতে বা তাদের আস্থা ধরে রাখতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দেশে আবারো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এহেন বাস্তব অভিজ্ঞতা সামনে রেখেও আবারো জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরুর কথা শোনা যাচ্ছে। সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে যে, পুলিশী সন্ত্রাস ও দমনাভিযানের মাধ্যমে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এর ফলে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক কর্মকা- ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। সামাজিক-রাজনৈতিক বিভক্তি ও দমন-নির্মূলের রাজনীতি পরিহার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জননিরাপত্তার মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। জননিরাপত্তা ও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে না পারলে বৈদেশিক বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐক্য প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দলনিরপেক্ষ ও জনবান্ধব ভূমিকায় সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে দেশে আস্থার পরিবেশ তৈরী হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনৈতিক ঝুঁকি রোধে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে
আরও পড়ুন