দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
একটি সমাজ ও একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যত সম্পদ হলো তরুণ সমাজ। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতি-সমৃদ্ধি নির্ভর করে তরুণ সমাজের ওপর। যেকোনো জাতির প্রাণশক্তি তাদের যুবসমাজ। যুবসমাজই জাতির আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক। যুবসমাজ যেকোনো দেশ ও জাতির সোনালি স্বপ্ন। আজকের যুবকরাই পরিচালনা করবে আগামীর সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতিকে। যুবকদের প্রেমময় রূপ ও শক্তির কারণে দরিদ্র, নিঃসহায় প্রবঞ্চিত ও নিগৃহীত জনতা লাভ করবে নতুন জীবন, প্রদীপ্ত হবে নব উদ্দীপনায়। কিন্তু সম্প্রতি সেই যুবসমাজের প্রতি তাকালে জাতিকে অবাক হতে হয়। কারণ দেশ ও জাতির কর্ণধার সেই যুবসমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের সাগরে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তাদের অনেকেরই নৈতিক কিংবা সামাজিক মূল্যবোধ নেই। এই যুবকদের মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত, কেউ অসামাজিক, কেউ চাঁদাবাজি, কেউ অস্ত্রবাজি, কেউ চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, প্রভৃতি অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত। নানাবিধ কারণ (যেমন- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি, শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য, চাকরিক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, অপসংস্কৃতি, অভিভাবকদের আদর্শহীনতা, সমাজপতিদের অনৈতিকতা, অর্থ, অস্ত্র ও ক্ষমতার লোভ এবং বেকারত্ব) সেই যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে নিপতিত করছে। আমাদের যুবসমাজ আজকে শৃঙ্খলাহীন এক অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা এমন এক রীতিনীতিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে, যা তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবন বিকাশের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমাদের যুবসমাজের মধ্যে যেসব নৈতিক অবক্ষয় অনুপ্রবেশ করেছে, তার মূলে রয়েছে অবাধ দুর্নীতি। দুর্নীতি যে সমাজকে গিলে ফেলেছে, সে সমাজে আর নৈতিকতা থাকতে পারে না। দুর্নীতি যে রাষ্ট্রকে গিলে ফেলেছে, সেই রাষ্ট্রে সংস্কৃতি থাকতে পারে না।
যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ অনবদ্য ভ‚মিকা পালন করতে পারেন। কিন্তু না, যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ হবার কথা, দেখা যায়, সেই ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায়, প্ররোচনায়ই যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসার ঘটছে। সেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজপতিরাই লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঢাকঢোল পিটিয়ে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসার ঘটান। একজন রাজনৈতিক নেতা, তিনি আগামীতে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, কিন্তু তিনি জনগণের কাছে পরিচিত নন। জনগণের কাছে পরিচিত হবেন কিভাবে? তিনি তার পরিচিতির জন্য যা করেন, তা হচ্ছে, বিভিন্ন এলাকার যুবসমাজের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা দেবেন খেলাধুলা ও গান-বাজনার আয়োজন করার জন্য। যুবকরা সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে গান-বাজনার আয়োজন করে এবং বাকি টাকা দিয়ে তাদের পকেট গরম করে। আর সেই খেলাধুলা বা গান-বাজনার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থাপন করা হয় সেই নেতাকে, যিনি জনগণের কাছে পরিচিতির জন্য যুবসমাজের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে থাকেন। এরপর কী করা হয়, তা তো আমাদের সকলের জানা। সেই গান-বাজনা ও খেলাধুলার অনুষ্ঠানে সেই নেতার গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়, জনগণের কাছে তাঁর ভ‚য়সী প্রশংসা করা হয়। যখনই তার ভ‚য়সী প্রশংসা করা হবে, তখন তিনি পরবর্তী খেলাধুলার ও গান-বাজনার জন্য আরও অধিক পরিমাণে টাকা দেওয়ার ঘোষণা করবেন। যুবসমাজ সেই টাকা উদ্ধারের জন্য সেই নেতার পেছন পেছন ঘুরে বেড়ান। কারণ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, টাকা দিয়ে পকেট গরম করা। নেতা টাকা দিয়েছেন খেলাধুলা ও গান বাজনার জন্য। খেলাধুলা বা গান-বাজনার আয়োজন করা হয়। প্রশ্ন হলো, সেখানে কি শুধু গান-বাজনা ও খেলাধুলা হয়? সেই গান-বাজনা ও খেলাধুলার নামে চলে নানা ধরনের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও জুয়া খেলা এবং মদ্যপান। এভাবেই যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের ব্যাপক প্রসার ঘটে। দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হলো, যেসব নেতার মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় রোধ হবার কথা, সেসব নেতার মাধ্যমেই যুবসমাজের অবক্ষয় বৃদ্ধি পায়। এটা শুধু দুঃখজনক নয়; বরং জাতির জন্য কলঙ্কও বটে। বড়দের থেকে নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসার ঘটবেÑ এটা কেমন কথা?
সম্প্রতি সত্য ও সুন্দরের পথ ত্যাগ করে যুবসমাজ উগ্র ও বিকৃত জীবনযাপনে উদগ্রীব হয়ে উঠেছে এবং চরম অবক্ষয়ের মধ্যে জীবন খুঁজে বেড়াচ্ছে। টিভি, সিনেমা, ভিডিও, ডিস এন্টিনায় যেসব ছবি, নাচ, গান, কনসার্ট, রূপচর্চা, ফ্যাশন শো, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, বিনোদনমূলক কুরুচিপূর্ণ ছবি, প্রোগ্রাম, নাটক, ইত্যাদি প্রদর্শিত হচ্ছে, তার অধিকাংশই জীবনধর্মী নয়; বরং তা আমাদের মন-মানসিকতার সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবি আমাদের যুবসমাজকে দ্রæত অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব ছবিই যুবসমাজকে বেশি আনন্দ দান করে বলে তাদের কাছে এগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সমর্থ হয়। এখন অনেক যুবক হাতে মেয়েদের মতো বালা পরে, মেয়েদের মতো মাথায় লম্বা চুল রাখে, পপ গান করে, ডিসকো নাচ নাচে, আর অদ্ভুত যতোসব পোশাক পরে। তাদের এসব আচার-আচরণ যেমন কুরুচিপূর্ণ, তেমনি অপসংস্কৃতির সহায়ক। আমাদের যুবসমাজ আজ এ অপসংস্কৃতির ¯্রােতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।