চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
অসংখ্য নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত আর খণিজ সম্পদে ভরপুর অপার সম্ভাবনা দেশ বাংলাদেশ। সামুদ্রিক আর খণিজ সম্পদের ভরপুর আমাদের দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। বাংলাদেশে অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটছে প্রতিনিয়তই। এক সময় পিছিয়ে পড়া তালিকায় থাকা দেশটি এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতিতে জায়গা করে নিয়েছে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে। ছোট্ট এ দেশটির অর্থনীতির চাকাকে গতিহীন ও দুর্বল করতে বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজীসহ প্রভৃতি। সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে ১৬ কোটি মানুষের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় আমাদের দেশ আজ বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যারা বলে ১৬ কোটি মানুষ আমাদের জন্য বোঝা, তারা আজও বোকার রাজ্যে বসবাস করছে। প্রাণিসম্পদ, খনিজ সম্পদ, মৎস সম্পদ যেমন আমাদের দেশের অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করেছে, তার চেয়েও অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করেছে আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানব সম্পদের নিরন্তর প্রচেষ্টা। দেশের বর্তমান জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ যুবসমাজ। হোক শিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর। একটি দেশের অগ্রযাত্রাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার মূল হাতিয়ার হচ্ছে যুব সমাজের সঠিক ব্যবস্থাপনা। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অপরিকল্পিত ও অব্যবস্থাপনায় রেখে কখনোই সমৃদ্ধি আশা করা যায় না। আমাদের দেশের জাতীয় সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করেছে বেকার সমস্যা। কাজ করার মতো সকল শক্তি সামর্থ্য, জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেক থাকার পরও যখন একজন যুবক কাজ পায় না, তখন সে বেছে নেয় ভিন্ন পথ। যুব সমাজের এই হাতকে কাজে লাগিয়ে আমরা যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়ন করতে পারি তেমনি সমাজ থেকে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ ইভটিজিংসহ বহুবিধ সমস্যা দুরীভূত করে সমাজকে পরিশুদ্ধও করতে পারি। বিপথে পা বাড়ানো একজন যুবককে সুন্দরভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখানো যেতে পারে। এ লক্ষ্যে সরকারিভাবে এবং সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। খুব কম সংখ্যক মানুষই এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নেওয়াটাও ব্যয়বহুল। সহজলভ্য ও বাস্তবমূখী না হওয়ার কারণে খুব বেশি মানুষ আগ্রহী হচ্ছে না প্রশিক্ষণ নিতে। যার কারণে তারা কর্মসংস্থানেও যেতে পারছেনা। অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলেও এখনও যুব উন্নয়ন ব্যভস্থা রয়েছে আগের মতই। যুগোপযোগী ও বাস্তবমূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবী। কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা যুবকেরা জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অসৎ উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করতে। এমনকি চাকুরি না পাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। সরকারি-বেসরকারি চাকুরির বাইরেও আত্মকর্মসংস্থান, খামার বা ফার্ম তৈরি, ছোট কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে সমাজে যেন সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে তার যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি দেশের একটি বৃহৎ কর্মবিমুখ জনগোষ্ঠীকে সঠিক আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের যুব উন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠকদেরও এগিয়ে আসা উচিত। বিনিয়োগ করতে সহজ শর্তে যুবকদের ঋণ দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকদের কৃষিঋণ, ব্যবসায়ীদের মোটা অঙ্কের ঋণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণ বা বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করা যুবকের জন্য থাকেনা কোনো আর্থিক জোগানের উৎস কিংবা সহজ ঋণ প্রকল্প। যুব সমাজ দেশের বোঝা নয়, তারা দেশের কর্মশক্তি ও চালিকাশক্তি। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও উন্নত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আমাদের সমাজ হতে পারে অপরাধমুক্ত এবং দেশের অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে আরো গতিশীলতার একটি ক্রিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।