দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
অনেক রং বা কালি এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়, যা কোনো প্রাণীর জন্য ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এর মধ্যে একটি পদার্থের নাম এজো ডাই। রংটি এমনিতে কোনো ক্ষতি করে না, কিন্তু অন্য কোনো কিছুর সংস্পর্শে এলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। এ ছাড়া আরও অনেক রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা ব্যবহারে কোনো নিষেধ নেই। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তা মানবদেহে ব্যবহার করা সংগত নয়। এই পদার্থগুলো মানবদেহে ঢুকে কী কী ক্ষতি করতে পারে, তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনায় দেখা গেছে, বর্তমানের মতো আগেকার যুগে নারীরাই বেশি উল্কি অঙ্কন করাত। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা যায়, বিশ্বের ৫৮ শতাংশ নারীর শরীরে অন্তত একটি ট্যাটু রয়েছে। সে তুলনায় পুরুষের রয়েছে ৪১ শতাংশ। ট্যাটুর পথ ধরে অশ্লীলতা চর্চার খবরও দেশ-বিদেশে প্রকাশ পেয়েছে। এসব কারণে তুরস্ক, ইরান ও আরব আমিরাতে উল্কি আঁকানো নিষিদ্ধ।
ট্যাটু প্রথার বিস্তৃতি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভবিষ্যতবাণী:
দু:খ জনক হলেও সত্য, ইদানীং আমাদের মুসলিম সমাজে ট্যাটু প্রথা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ধনীদের আলালের ঘরের দুলাল তরুণ-তরুণী সহ বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ এই অপসংস্কৃতিতে লিপ্ত হচ্ছে। এই অপসংস্কৃতি বিস্তৃতির অন্যতম কারণ হল, বিভিন্ন অমুসলিম বা নামধারী ফাসেক মুসলিম নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, মডেল, খেলোয়াড়দের অন্ধ ভক্তি এবং অন্ধ অনুকরণ। কালের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া কিছু বিপথগামী তরুণ-তরুণী পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হয়ে তাদের মত অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হতে দ্বিধা করছে না।
সত্যি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যতবাণী যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছিলেন যে, কেয়ামতের আগে এক শ্রেণীর মুসলিম ইহুদি-খ্রিস্টানদেরকে প্রতিটি পদে-পদে অনুসরণ-অনুকরণ করবে। এমনকি যদি তারা শান্ডার গর্তে প্রবেশ করে, তারাও তাদের অনুসরণে ওই গর্তে প্রবেশ করবে। (বুখারি ও মুসলিম)
ট্যাটু বা উল্কি আঁকার পদ্ধতি:
দু’টি পদ্ধতিতে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা করা যায়;
(১) স্থায়ী ট্যাটু:
বিদ্যুৎচালিত একটি যন্ত্রে রয়েছে, তার সাহায্যে তা করা হয়। দেখতে তা অনেকটা ডেন্টিস্ট এর ড্রিল মেশিনের মত যা দিয়ে দাঁতের চিকিৎসা করানো হয়। মেশিনের মাথায় রয়েছে অত্যন্ত সূক্ষ¥ একটি সুঁই। এই সুঁইটির মাথায় রঙ লাগানো থাকে। প্রতিবার সুঁইটি যখন চামড়ার ভিতরে প্রবেশ করানো হয় সেই সঙ্গে রঙ ও ভিতরে প্রবেশ করে। রঙের পরিমাণ এক মিলিলিটারেরও কম। চামড়ার যে স্তরে রঙটি লাগানো হয় তার নাম ডের্মিস। এই স্তরে যে কোন রঙ ঢুকাতে পারলে তা সারাজীবন দেখা যাবে।
ভিক্টর আরও বলল, এটা বিশেষ এক পদ্ধতি যা সারাজীবনই থাকবে। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এই উল্কি আপনার গায়ে থাকবে। বিষয়টি দারুণ উত্তেজনার ও বটে। এ ক্ষেত্রে শরীরের যে স্থানে ট্যাটু করা হয় সেখানে রক্ত জমাট বাধে-যা নাপাক এবং রক্তের সাথে বিভিন্ন রঙ কেমিক্যাল, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি মিশ্রণের ফলে সেখানে চামড়ার উপর একটা আস্তরণ তৈরি হয়। যার কারণে ওজু-গোসলের সময় চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে না। তাই ট্যাটু কৃত স্থানটা নাপাক হওয়ার পাশাপাশি ওজু-গোসলের সময় সেখানে পানি পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এ অবস্থায় ওজু-গোসল শুদ্ধ হবে না। ফলশ্রুতিতে নামাজসহ অন্যান্য ইবাদতও শুদ্ধ হবে না। বর্তমানে অস্ত্রোপ্রচারের মাধ্যমে অথবা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে লেজারের সাহায্যে স্থায়ী ট্যাটু রিমুভ করা সম্ভব। অবশ্য লেজারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এ কাজটি সম্পাদন করা হয় এবং এক সময় ট্যাটুর চিহ্ন মুছে যায়। ইদানীং এটি আমাদের দেশেও করা হচ্ছে। কিন্তু কোন কারণে যদি তা রিমুভ করা সম্ভব না হয় বা এতে অঙ্গহানি বা শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে সে অবস্থাই যথারীতি ওজু-গোসল এবং নামাজ অব্যাহত রাখতে হবে। একারণে কোনভাবেই নামাজ পরিত্যাগ করা যাবেনা। সে আল্লাহর কাছে খাঁটি অন্তরে তাওবা করবে। খাঁটি অন্তরে তাওবার কারণে আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ।
(২) অস্থায়ী ট্যাটু:
স্থায়ী ট্যাটুর বিকল্প হিসেবে অনেকে অস্থায়ী ট্যাটু ব্যবহার করে। এটি দু ধরণের। যথা:
ক. এয়ারব্রাশ ট্যাটু:
তুলির সাহায্যে রঙ দিয়ে শরীরে ট্যাটু আঁকা হয়। এটি দু তিন মাসের মধ্যে শরীর থেকে আপনা আপনি মুছে যায়। এ কারণে এটিকে এয়ারব্রাশ ট্যাটু বলে।
খ.স্টিকার ট্যাটু:
ট্যাটুর স্টিকার শরীরের পছন্দ মত জায়গায় বসিয়ে ট্যাটু করা হয়। অবশ্য অস্থায়ী ট্যাটুকে পাশ্চাত্য সভ্যতায় ঠিক ট্যাটু বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে এবং এগুলো হাদিসে নিষিদ্ধ ঘোষিত প্রকৃত উল্কি বা ট্যাটু না হলেও অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনের কারণে তা ব্যবহার করা হারাম। যাহোক, যদি কেবল তুলির রঙ ব্যবহার করে শরীরে ট্যাটু আঁকা হয় আর তাতে চামড়ার উপর প্রলেপ না পড়ে তাহলে তাতে ওজু-গোসল শুদ্ধ হবে। কেননা, মেহদি বা সাধারণ রঙ শরীরে থাকলেও চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে। কিন্তু যদি রঙ ব্যবহারের কারণে চামড়ার উপর আবরণ পড়ে যার ফলে চামড়ায় পানি পৌছতে বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে তা গরম পানি, সাবান, কেমিক্যাল ইত্যাদি ব্যবহার করে কাপড় বা অন্য কিছু দ্বারা ধীরে ধীরে ঘঁষে তুলে ফেলা আবশ্যক। অন্যথায় ওজু-গোসল ও নামাজ শুদ্ধ হবে না। আর শক্ত আঠা দিয়ে শরীরে স্টিকার লাগানো হলে তার ভিতর দিয়ে কখনোই চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছবে না। সুতরাং এই অবস্থায় অজু গোসলও শুদ্ধ হবে না, ফলে ইবাদত শুদ্ধ হবেনা। তাই অনতিবিলম্বে স্টিকার ট্যাটু উঠিয়ে ফেলা আবশ্যক। তবে কোনও মুসলিম যদি এটি হারাম হওয়া সম্পর্কে না জানার কারণে এমনটি করে অথবা বাল্যকালে শরীরে উল্কি আঁকায় তাহলে তা হারাম সম্পর্কে জানার পরে অবশ্যই শরীর থেকে দূর বা তুলে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এতে যদি কষ্ট বা ক্ষতি হয় তাহলে কেবল তওবা-ইস্তিগফার করাই যথেষ্ট। তারপর তা শরীরে থাকলেও ক্ষতি নেই।
পরিশেষে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের দরবারে কায়মানো বাক্যে প্রার্থনা করছি , আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে এ সমস্ত অন্যায়, অশ্লীল, গর্হিত ও পশ্চিমা অসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখেন, আমিন; বেহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
লেখক: সহকারি মাওলানা, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।