পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ঢাকা-১০ আসনসহ দেশের তিনটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন। ভোটের জন্য আমরা কোন ভোটারকে ডাকবো না। মানুষ বাজারে যাচ্ছে ভোট দিতে আসলে সমস্যা কি? ভোটাররা যদি কোয়ারেন্টাইন মেইনটেইন করে ভোট দিতে আসেন তাহলে ভোট দেবেন। অনিরাপদ মনে করলে ভোটকেন্দ্রে আসার দরকার নেই। ভোটারদের ভোট দিতে বাধ্য নয়, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ভোটের আয়োজন করা হয়েছে’ (মো. রফিকুল ইসলাম)। গতকাল শনিবার রাজধানীর লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের এই বক্তব্যে বাংলাদেশের নির্বাচনের চালচিত্র ফুটে উঠেছে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিকের ভোটের অধিকার অবাক কান্ড! অবাক নির্বাচন কমিশন!! অবাক নির্বাচন!!!
করোনাভাইরাসের ক্ষমতা জেনে গেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। চীনের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং করোনায় ঘাম ঝড়িয়েছেন। অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ইমানুয়েল ম্যাক্রোন, নরেন্দ্র মোদি, বরিস জনসন, জাস্টিন ট্রুডো, মাহথির মোহাম্মদ, ইমরান খানের মতো বিশ্বনেতারা করোনাভাইরাসের ভয়ে থরথর করে কাঁপছেন। তারা নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের রক্ষায় লকডাউন, কার্ফুসহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। অথচ বাংলাদেশের নির্বাচন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম রুহুল হুদা করোনাভাইরা থোরাই কেয়ার করে জাতীয় সংসদের তিনটি আসনে উপনির্বাচন করলেন। জনগণের ভোটের অধিকার আগেই কেড়ে নেয়া হয়েছে; উপ-নির্বাচনে ভোট দেয়ার নামে এখন জনগণকে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের মুখে ঠেলে দেয়ার অধিকার কে দিয়েছে? বিশ্বনেতাদের চেয়ে কি সিইসি বেশি ক্ষমতাধর!
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিশ্বের ১৮২টি দেশ। মরণঘাতি এই ভাইরাসের কবল থেকে বাঁচতে বিশ্বের অনেক দেশ লকডাউন হয়ে গেছে। রাজা, বাদশা, সম্রাট, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্ব, বিলিয়নিয়ার, দার্শনিক এবং বাঘাবাঘা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে করোনায়। করোনা বিশ্বের শত শত কোটি মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছে ত্রাস। বাংলাদেশে দু’জনের মৃত্যু এবং ২৪ জনের আক্রান্তের খবর বলে দেয় আমরা কতবড় ঝুঁকিতে। এর মধ্যেই ৩টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন হলো। কার জন্য জীবনের ঝুকি নিয়ে এই উপনির্বাচন? শ্রীলঙ্কা করোনাভাইরাস সংক্রমণের মুখে সংসদ নির্বাচন স্থগিত করেছে। দ্বীপরাষ্ট্রটির নির্বাচন কমিশন জনগণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নির্বাচন স্থগিত করে। দেশটিতে রাতে কারফিউ চলছে। শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের কাছে সে দেশে নির্বাচনের চেয়ে ভোটারদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই তারা ভোট স্থগিত করেন। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের কাছে দেশের জনগণের জীবন কি মূল্যহীন? নাকি বাপের বেটা নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন! করোনাভাইরাস তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না!
করোনায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কাঙ্গালিনী সুফিয়ার ‘নিতাইগঞ্জ’ গানের মতো। ডলি শায়ন্তনির জনপ্রিয় করে তোলা ওই গানটি ‘ঘুমাইয়া ছিলাম, ছিলাম ভালো/ জেগে দেখি বেলা নাই/ কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই/ ও বন্ধুরে ... নিতাইগঞ্জ করব বাসা/ মনে ছিল দারুন আশা গো/ এবার ছয় ডাকাতে চুক্তি করে/ আশার মুখে দিল ছাই’। আসলে আমরা করোনাকে পাত্তাই দেইনি। চীনে অনেক আগে করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাব ঘটেছে। অথচ আমরা অনেক দিন অন্য এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি বেলা নেই। বিদেশ থেকে দুই মাসে ৬ লাখ প্রবাসী দেশে এসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় করোনা দরজায় কড়া নাড়ছে। বিদেশ ফেরতদের মধ্যে মাত্র কয়েক হাজারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও লাখ লাখ প্রবাসী সারাদেশে মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের খাচায় বন্দী করার হাকডাক চলছে সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
করোনা ভাইরাসের পাদুর্ভাবের পর নাগরিকের নিরাপত্তার লক্ষ্যে সরকার একের পর এক আদেশ-নির্দেশনা জারী করছে; যান চলাচল সীমিত করেছে। ঢাকার সঙ্গে অনেক জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ করা হয়েছে। ওয়াজ মাহফিল ও জমায়েত নিষিদ্ধ। জনসমাগম ঠেকাতে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান, বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। অথচ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীলরা এতো বেপরোয়া যে তারা সরকারের আদেশ-নির্দেশ তোয়াক্কাই করছেন না। করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চট্টগ্রামে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যেখানে সরকার ১০ জনের বেশি মানুষকে একসঙ্গে না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে; সেখানে হাজার হাজার কর্মকর্তা জীবনের ঝুকি নিয়ে শুধু চাকরি বাঁচানোর জন্যই ট্রেনিং এ অংশ গ্রহণে বাধ্য হন।
গতকাল ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩, বাগেরগাট-৪ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। ভোটারদের চেয়ে ভোট গ্রহণকারীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। একটি ভোটকেন্দ্রে দুই ঘন্টায় একটি ভোট পড়ার খবর মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। রাজধানীর লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পরিদর্শনে এসে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ইসির অবস্থান তুলে ধরেন। প্রশ্ন হচ্ছে সারাবিশ্ব যখন করোনা আতঙ্কে উদ্বিগ্ন তখন ইসি কেন উপনির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত? এই গোয়ার্তুমির রহস্য কি? তাছাড়া মানুষ নিজেদের নিরাপদ রাখতে সরকারের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। নির্বাচন কমিশন কি দেশের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান? জনগণের ভোটের অধিকার এই নির্বাচন কমিশন কেড়ে নিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু ভোট দেয়ার নামে মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার অধিকার এই ইসিকে কে দিয়েছে? এক নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছেন ভোটার আসুক না আসুক নির্বাচন করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। ইভিএমে ভোট দিলে যে নাগরিকের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায় তার দায় কি কমিশন নেবে? নাকি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা সুপার ম্যান? ইসির চোখ রাঙানিতে করোনাভাইরাস পালিয়ে যাবে?
১৯ মার্চ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করে ভোট দিলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে’। অথচ নির্বাচন কমিশনের সচিব সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রকোপে জনস্বাস্থ্যে হুমকি দেখছে না নির্বাচন কমিশন। ভোটাররা ভোট দেওয়ার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগিয়ে ভোট দিয়ে পরে আবার তারা এটা ব্যবহার করবেন’। অবশ্য নিজেদের গোয়াতুর্মি বুঝতে পেরে দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশন গতকাল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও বগুড়া-১, যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করেছে। তাহলে ভোটারদের জীবন ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩, বাগেরগাট-৪ স্থগিত হয়নি কেন? শুধুই কি সংবিধানের ৯০ দিনের বাধ্যবাধকতার দোহাই; নাকি এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে?
কাজী রকিব উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বিগত নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা বোনের সম্ব্রমহানির মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে জনগণ ভোটের অধিকার হারিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের ক্যারিশমায় কখনো রাতেই ভোট হয়ে যায়, কখনো নিজেরাই জনগণের ভোট দিয়ে দেন। দেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলেও নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা এই নির্বাচন কমিশনকে কে দিয়েছে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।