Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দীর্ঘ মেয়াদী মাড়িরোগ : ক্ষতির কারন হতে পারে

ডাঃ মো: আসাফুজ্জোহা রাজ | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইউনাইট ফর মাউথ হেলথ্” প্রশংসনীয় এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বিশ্বের ২০০টির বেশী দেশের সাথে আমাদের দেশেও আজ ‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ’ পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এ বিষয়ে দেশের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি সদ্য তিন বছরে প্রতিষ্টা প্রাপ্ত দেশের আলোচিত ডেন্টাল সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ ডেন্টাল সাইন্সগ্ধ বিএফডিএস পুরো মার্চ মাস জুড়ে নানা কার্যকরী প্রদক্ষেপ সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশের সর্ব সাধারণের মুখের চিকিৎসা বা ওরাল সচেতনতায় কাজ করে যাচ্ছে । দিবসটি উপলক্ষে দেশের প্রতিটা মানুষকে ওরাল সচেতনতার জন্য বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচার ও প্রচারনার পাশাপাশী দেয়াল পোস্টার, ক্যাম্পিং, ওষুধ বিতরনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে । প্রতিষ্টার শুরু থেকেই এই সংগঠনের প্রতিটি সদস্য বহুমুখি কর্মসূচি ও ওরাল চিকিৎসায় মানুষকে সচেতনতায় কাজ করে যাচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্যের মধ্যে নিম্নােক্ত বিষয় ও লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ডেন্টাল সায়েন্স বদ্ধপরিকর।
১। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সেমিনার পাশা-পাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের তরুন চিকিৎসকদের নতুন উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। ২। ডেন্টাল রোগ প্রতিরোধ ও রোগের কারন, চিকিৎসা আর রোগকে অবহেলা করার কারনে এ রোগের মারাত্বক ক্ষকিকর দিক ও ভয়াবহতা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা। ৩। ডেন্টাল রোগে চিকিৎসা প্রদানের একমাত্র বৈধ ক্ষমতা একজন বিডিএস ডিগীধারী চিকিৎসকের,এ বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং সেই ধারাবাহিকতায় দাঁেতর মাড়ি রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা। আমরা জানি দাঁতের মাড়ির রোগ অতি সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু রোগ হিসেবে এটিকে মোটেও অবহেলা করা উচিৎ নয়। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া এমনকি দাতঁ নড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের মাড়ির রোগে আকান্ত হয়। মাড়ি রোগের প্রধাণ কারন হিসাবে দায়ী করা যায় মুখের যত্নে বা দাঁতের সঠিক যত্নের অসচেতনতাকে । অনেকেই দাতঁ পরিস্কারে সচেতন হলেও “নিয়ম মেনে দাঁত পরিস্কার করছে কিনা তা দেখার বিষয়” এ বিষয়টিও সচেতনতার বিষয় হিসেবে কাজ করা। দাঁতের বা মারির যত্নে মূলত মুখের যত্নে তিনটি একসুত্রে গাঁথতে হবে।
(১) সঠিক নিয়মে দাতেঁর সকল পৃষ্ঠ পরিস্কারের পাশাপাশী ফ্লস ব্যবহার ও চিকিৎসকের পরামর্শে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার। (২) মিস্টি জাতীয় খাদ্যের পরিবর্তে স্বাস্থ্য বান্ধব খাবারে উৎসাহী হওয়া। ৩। ছয় মাস অন্তর অনুমোদিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
উপরোক্ত বিষয়ের পরেও যাদের মুখ শুস্ক থাকে, এলোমেলো দঁতা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপতিক্রিয়া, লিভারের রোগ, ভিটামিন বা মিনারেলের স্বল্পতা, রক্ত স্বল্পতা, রক্তের রোগ ইত্যাদিতে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।আমরা লক্ষ্য করলে দেখি, আমাদের দেশের লোকজন দাঁতের যত্নের মারির রোগের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়না , কারন বেশীরভাগ মানুষের ধারণা নেই, মাড়ি রোগ যেমন শরীরের অন্য অঙ্গে রোগ তৈরী করতে পারে,অনেক ক্ষেত্রে একটু অবহেলার কারনে ওরাল ক্যানাসারও হতে পারে, বিশেষ করে যাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। আবার এ রোগটি অনেক রোগের প্রাথমিক লক্ষনের জানান দেয়। যেমন ঃ
দাতেঁর ধারক কলা ক্ষতিগ্রস্থ : দাতঁ নড়ে যাওয়া, পড়ে যাওয়া, মুখে দূর্গন্ধ থেকে শুরু করে মুখ ফুলে যাওয়া ও চোয়ালের হাড় ক্ষয়ের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী মাড়ি রোগ অনেকটা দায়ী। কামড় দিলে দাতেঁ ব্যাথা অনুভবের কারনে মাড়ি রোগ নিয়ে রোগীরা সঠিক ভাবে খেতে পারে না, ফলে নানা অপুষ্টি জনিত জটিলতা হতে পারে। (২) হৃদ্রোগ : মাড়ির সংক্রমণ সহজেই রক্তবাহিকাতে মিশে হার্ট এ চলে যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস তৈরীর জীবানু ও মুখের অভ্যন্তরের জীবানু এক প্রজাতীর। অথচ হার্ট সুস্থ্য রাখতে আমরা অন্যসব কারন জানলেও মুখের যত্নে অসচেতন। (৩) স্ট্রোক: মাড়ি রোগের ক্ষতিকারক পদার্থ রক্তে সরাবরহে বা প্রবাহিত নালী কে সরু করে মস্তিষ্কে রক্ত সরবারহ কমিয়ে স্ট্রোকের আশংকা বাড়াতে পারে। (৪) অপরিণত শিশুর জন্ম: গর্ভকালীন দাতেঁর ব্যাথা ও মাড়ি রোগ থেকে গর্ভ জটিলতা, অপরণিত বা বিকলঙ্গ শিশুর জন্ম সহ নানা সমস্যার তৈরী করতে পারে। (৫) অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস : মাড়ি রোগ ডায়াবেটিস ওষুধ ও ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। (৬) হাড় ক্ষয় : হাড়ের জয়েন্টে ক্ষয় ও ব্যাথা, মেরুদন্ডে ব্যাথা সহ নানা হাড় ক্ষয়ের জন্য মাড়ির রোগও একটি কারন। (৭)ফুসফুসে জটিলতা : মাড়ির সংক্রমণ আমাদের শ্বাসকষ্টের কারন হতে পারে, ফুসফুস কে সংক্রমিত করতে পারে। (৮) ক্রনিক কিডনীর অসুখ , অগ্নাশয়ের জটিলতা সহ কিছু ক্যান্সারের সাথেও মাড়ি রোগের যোগসূত্র খুজেঁ পেয়েছেন চিকিৎসা গবেষকগণ । সূতরাং মাড়ি রোগ নিয়ে অবহেলার কোন সুযোগ নেই। তাই মারিরোগ বা দাঁতের মারি সংক্রান্ত রোগএকটি সাধারন রোগ হলেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার সাথে সাথে নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে এ বিষয়ে সচেতন হতে উৎসাহি করি।

ডাঃ মো: আসাফুজ্জোহা রাজ
সদস্য সচিব ( বিএফডিএস)
রাজ ডেন্টাল ওয়ার্ল্ড, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি- ১৩।
ও রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা। প্রয়োজনে-০১৯১১৩৮৭২৯১



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাড়িরোগ
আরও পড়ুন