রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
২০১৯-২০ সালের অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির অধীনে টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাবিখা ও কাবিটা কর্মসূচির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় ৬৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ৫১১ টাকা বরাদ্দ হয়
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় কাজ না করেই টেস্ট রিলিফ (টিআর), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার-কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ না করে সব টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। উপজেলা আ.লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন মাস্টার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস ও স্থানীয় প্রভাবশালী নামধারী সরকার দলীয় লোকজন এ লুটপাটের সাথে জড়িত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ সালের অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির অধীনে টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাবিখা ও কাবিটা কর্মসূচির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় ৬৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ৫শ’১১ টাকা বরাদ্দ হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে টিআর কাবিখা, কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দে সোলার স্থাপনের কাজও রয়েছে। এছাড়াও এসব প্রকল্পের মধ্যে ১০টি প্রকল্পে ৮০ মেট্টিকটন চালও বরাদ্দ দেয়া হয়। যার আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
স্থানীয়রা জানান, প্রকল্প কমিটির সভাপতি সম্পাদকদের নিকট থেকে প্রভাব বিস্তার করে ডিওতে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়া হয়। আবার সোলারের জন্য কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ নিয়েও কাজের কাজ কিছুই করেনি, পুরো অর্থই লোপাট হয়েছে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে চরলরেন্স ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের খালপাড় রোড সংস্কার, মিলন রোড সংস্কার, তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের আলী রোড সংস্কার, মুকবুল রোডসহ প্রায় এলাকায় সংস্কারের নামে পুরো টাকাই লুটপাট করা হয়েছে। এসব লুটপাটের সাথে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের প্রতিনিধি একেএম নুরুল আমিন মাস্টার জড়িত বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরলরেন্স ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের খালপাড় রোড সংস্কারের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই প্রকল্পে কাজ না করে সব অর্থ লোপাট করা হয়েছে। অন্য দিকে চরকাদিরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ব্যাক্তি মালিকাধীন সড়কে প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়াও হাজিরহাট ইউনিয়নের হাজিবাড়ির দরজার মসজিদ হতে মিয়াপাড়া সড়ক নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। ওই সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের কিছু সড়ক দেখানো হয়েছে যাহা মেঘনা নদী গর্ভে বিলীন। সরেজমিন ঘুরে উপজেলার চরমার্টিন, পাটারিরহাট, চরফলকন ও চরকালকিনি ইউনিয়নের প্রায় সকল প্রকল্পেও এমন চিত্র দেখা যায়। চরলরেন্স ইউনিয়নের খাল পাড় রোড সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, এখনো সব টাকা উত্তোলন হয়নি। কিছু কাজ করেছি। বাকিটা পরে করবো।
এদিকে কমলনগর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ প্রতিনিধি মাস্টার একেএম নুরুল আমিন জানান, প্রকল্পের নামে দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য কিছু বরাদ্দ আনা হয়েছে। অফিস খরচ দিলে তেমন থাকে না। তিনি আরও বলেন, চরলরেন্স ইউনিয়নে ৭নং ওয়ার্ডের খালপাড় রোডে আমার একটা প্রকল্প আছে আমি পরে কাজ করবো।
এ ব্যাপারে কমলনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, আমিতো নতুন এসেছি। এর আগের ইউএনও স্যার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজ তদারকি না করে কিভাবে বিল দিয়েছে আমি কিছুই জানি না। তবে কোনো প্রকল্পে কাজ হয়নি এটা নিশ্চিত।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী মোহাম্মদ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান বলেন, প্রকল্প তৈরি করেছে ইউএনও, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও আমার প্রতিনিধি নুরুল আমিন মাস্টার। কাজ না করে টাকা উত্তোলন করলে ইউএনও ও পিআইও কি করে। তাদের কাজ কি? বলে প্রশ্ন ছুড়েন এ সংসদ সদস্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।