২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণই শুধু করে না রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভারত উপ-মহাদেশে এর উদ্ভাবন হলেও আজ সারা বিশ্বে ইয়োগা চর্চার বিকাশ ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোটি মানুষ ইয়োগা চর্চা করছেন। ইতিবাচক চিন্তা, প্রাণায়াম, নিউরোবিক জিম, মেডিটেশনের সমন্বয়ে ইয়োগার পরিপূর্ণ প্রয়োগ মানুষকে তার ভেতরের সুপ্ত অসীম শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারে। জাতিসংঘ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ১৯০টি দেশের ২৬০টিরও বেশি শহরে তা পালিত হচ্ছে। যোগব্যায়ামকে জীবনযাপনের অংশ করে তুলুন, দেহ-মনের সুস্থতা ও শান্তি নিশ্চিত হবে।
ওজন কমানো, শক্তিশালী নমনীয় শরীর, উজ্জ্বল ত্বক, শান্ত মন, ভালো স্বাস্থ্য ইত্যাদি যা কিছু আমরা পেতে চাই সব কিছুর চাবি আছে যোগাসনে। এতে অনেকরকম শারীরিক সমস্যা যথা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি বকেজ ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব। যোগ হল এক জীবনদর্শন, যোগ হল আত্মানুশাসন, যোগ হল এক জীবন পদ্ধতি। যোগ শুধু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিই নয়, বরং যোগের প্রয়োগ ব্যাধিকে নির্মূল করে। এটি এক বিধাতা প্রদত্ত শুধু শরীরেরই নয়, সমস্ত মানসিক রোগেরও চিকিৎসা শাস্ত্র। যোগ অ্যালোপ্যাথির মতো কোনো লাক্ষণিক চিকিৎসা নয়, বরং রোগের মূল কারণকে নির্মূল করে আমাদের ভেতর থেকে সুস্থ করে তোলার এক উপায়। নিয়মিত যোগাভ্যাসের অসংখ্য উপকারিতার মধ্যে কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক-
ফিটনেস : শারীরিকভাবে সুস্থ মানেই কিন্তু পুরোপুরি ফিট থাকা নয়। তখনই পুরোপুরি ফিট যখন মানসিক, আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও সামাজিকভাবেই আপনি সুস্থ থাকবেন। আপনার আবেগ থাকবে আপনার নিয়ন্ত্রণে। কথায় বলে, রোগের অনুপস্থিতি কিন্তু স্বাস্থ্য নয়, স্বাস্থ্য হল জীবনের বহুমুখী বহিঃপ্রকাশ। আপনি কতটা আনন্দ এবং উৎসাহের সঙ্গে জীবনকে উপভোগ করতে পারছেন সেটাই কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের প্রমাণ। যোগাসন আপনাকে দেয় পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য। আপনাকে সর্বদা ফিট রাখে শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক সবভাবেই।
স্ট্রেস বা চাপ কমায় : সারাদিনের কাজের চাপে আমরা সবাই কমবেশি কাহিল হয়ে পড়ি। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত লাগে। অনেক সময়ই মেজাজ খারাপ থাকে। এর কারণ স্ট্রেস। শারীরিক এবং মানসিক দু’ভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। যোগাসন এর থেকে মুক্তি দেয়। যোগাসন, প্রাণায়াম এবং ধ্যান করে স্ট্রেসকে দূরে রেখে প্রাণোচ্ছল জীবনযাপন করা সম্ভব।
মানসিক শান্তি : মানসিক শাস্তি কে না চায়? মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য আমাদের কতই না প্রচেষ্টা। আমরা সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাই, ভালো গান শুনি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে সময় কাটাতে চাই তবে নিয়মিত মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য এত কিছু করার দরকার নেই। নিয়ম করে একটু যোগাসন, ধ্যান, প্রাণায়াম, নিউরোবিক ইত্যাদির মাধ্যমে মনোঃসংযোগ এবং মানসিক শান্তি উভয়ই বাড়ানো সম্ভব। অভ্যাস করে দেখুন, নিশ্চিত ফল পাবেন।
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : নিয়মিত যোগাভ্যাস আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। চারদিকে এখন এত দূষণ যে সবসময় নানারকম জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে এবং ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকা দরকার। যোগাসন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে টিস্যু এবং পেশিকে শক্তি দেয়। শ্বেতকণিকাগুলোকে আরও উজ্জীবিত করে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের টেকনিক এবং ধ্যানও এতে সাহায্য করে।
এনার্জি বাড়ায় : দিন শেষে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। বাড়ি ফেরার পর এনার্জি অবশিষ্ট থাকে না। মাত্র কয়েক মিনিটের যোগাভ্যাস কিন্তু সারাদিনের পরেও এনার্জির জোগান দেবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ যোগাসন করলে কাজের ফাঁকেও ফ্রেশ আর এনার্জেটিক থাকা যাবে।
সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক : যোগাভ্যাস আমাদের কাছের মানুষ অর্থাৎ বাবা, মা, বন্ধু, স্বামী, স্ত্রী, আত্মীয়, পরিজন অফিস কলিগ সবার সঙ্গেই সম্পর্ক ভাল রাখতে সাহায্য করে। সুস্থ, রিল্যাক্সড মন সবসময় সম্পর্কের খুঁটিনাটিগুলোকে ভাল বুঝতে পারে। আর সম্পর্কের বিষয়টি যেহেতু খুব স্পর্শকাতর তাই অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত।
যোগাভ্যাস একটি নিয়মিত অভ্যাস। দু’দিন করে ছেড়ে দিলে হবে না, নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমেই এর সুফল পাওয়া সম্ভব। নিজে নিজে অভ্যাস না করে একজন ট্রেনারের অধীনে এগুলো অভ্যাস করা ভালো। এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগব্যায়াম চর্চাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার সফলতার সঙ্গে যোগব্যায়াম পরিচালনার জন্য অনেক রাজধানীবাসীর কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে (বিশেষ করে ধানমন্ডী লেকে হলিস্টিক ডায়াবেটিস ক্লাব)। প্রয়োজন বুঝে ট্রেনার নির্দেশ দিয়ে থাকেন ঠিক কোন ধরনের আসনগুলো করা উচিত। এর পাশাপাশি নানারকম রোগ যোগাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, অ্যাজমা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তা এবং অবসাদ ইত্যাদি। বিশেষ কয়েকটি যোগাসন (প্রাণায়াম, মেডিটেশন, নিউরোবিক জিম ও আকুপ্রেসার) নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে এই ধরনের রোগগুলো থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। এবং অনেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কলেস্টোরল ও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
ষ অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
পরিচালক, হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার
পান্থপথ মোড়, ঢাকা
ফোন: ০২-৮১২৯৩৮৩, ০১৭২১৮৬৮৬০৬
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।