পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত শনিবার সকালে ইতালী থেকে আসা ১৪২ জন বাংলাদেশীকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশকোনায় হজ ক্যাম্পে আনা হয়। অত:পর দিনভর কোয়ারেন্টাইন নিয়ে নাটকীয়তার পর তাদের একাংশকে রাতেই ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এই ১৪২ জনের কারো দেহেই করোনা ভাইরাসের আস্তত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে তাদের চলে যাওয়ায় অনুমতি দেয়া হয়। যারা নিরাপত্তার কারণে যেতে পারেননি, তাদের হজ ক্যাম্পেই থাকতে দেয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তারা বাড়ি যেতে চাইছেন। তাই যেতে দেয়া হচ্ছে। তবে এই ১৪২ জনই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, বিকেলে আরো ৫৯জন ইতালী থেকে দেশে ফিরেছেন। তাদের গাজীপুর মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে রাখার কথা। রোববার আরো ১৫৫ জনের ইতালী থেকে আসার কথা রয়েছে। ওদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, নতুন করে দু’জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের একজন ইতালী ও অন্যজন জার্মানি থেকে এসেছেন। ইতালী থেকে ফেরৎ আসা ১৪২ জন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে ইচ্ছুক বলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের শরীরে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত খবরাদি থেকে প্রতীমান হয়েছে, আশকোনায় সুব্যবস্থা বলতে যা বুঝায়, তার প্রচন্ড অভাব রয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও অপ্রতুল। অব্যবস্থাপনা ও বিশৃংখলা প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে। ফেরৎ আসাদের আত্মীয়-স্বজনরা অবাধে তাদের সঙ্গে মেলা-মেশা করেছেন, অবস্থান করেছেন। তাদের মধ্যে কম সংখ্যকই মাস্ক ব্যবহার করেছেন। এমন কি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মাস্ক ব্যবহার করেননি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা সবার ঠিকমত হয়েছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্তত দু’জন একটি ইংরেজি দৈনিককে জানিয়েছেন, তাদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়নি। উপযুক্ত শৃংখলা ও সুব্যবস্থা না থাকা, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ত্রু টি থেকে যাওয়া কিংবা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অভাব থাকা নি:সন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। হোম কোয়ারেন্টাইনও ঝুঁকির বাইরে নয়। সন্দেহভাজন হোম কোয়ারেন্টাইনের ঠিকমত থাকবেন কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই। হোম কোয়ারেন্টাইনে তত্ত্বাবধান ও মনিটারিংয়ের ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার মতে, এইভাবে ইতালীফেরতদের ছেড়ে দেয়া এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের ওপর ভরসা করা ঠিক হয়নি। তারা যে নিয়ম মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন, আক্রান্ত হবেন বা এবং তাদের থেকে অন্যদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে না, তার নিশ্চয়তা কি? এই পদক্ষেপ জনগণকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষেপ করতে পারে। কে না জানে, চীনের পর ইতালীতে করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা বেশি এবং মুত্যুর সংখ্যাও বেশী। প্রায় পুরো জনগণই আক্রান্ত। সেখান থেকে বাংলাদেশী যারা এসেছেন, তারা সে ভাইরাসমুক্ত, সেটা কোনোভাবেই ভাবা যায় না। পূর্ব বর্ণিত ইংরেজি দৈনিককে অন্তত : পাঁচজন যাত্রী বলেছেন, রোম ও কেটানিয়ায় তাদের প্রতিবেশীদের অনেকের মধ্যে এই ভাইরাস পজিটিভ বলে সনাক্ত হয়েছে ও তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। এমতাবস্থায়, তারা দেশে ফিরে এসেছেন। বলা বাহুল্য, তাদের কারো কারো দেহে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে। উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ই সেটা শনাক্ত হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা যদি যথাযথভাবে না হয় কিংবা তাদের বিষয়টি উপেক্ষার শিকার হয় এবং একারণে দেশ ও মানুষ বিপদে-সংকটে পড়ে তবে তার দায়িত্ব কে নেবে? পরীক্ষা-নিরীক্ষার যাবতীয় আয়োজন ও ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া উচিৎ ছিল। এজন্য টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্ক্যানার নেই। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাকি মাত্র ৬টি স্ক্যানার ছিল, যার ৫টিই ছিল অকেজো। পরে অকেজোটিও নষ্ট হয়ে যায়। স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় বিমানযাত্রীদের অশেষ কষ্ট ও হয়রানির শিকার হতে হয়। এও শোনা গেছে, এ অবস্থায় ৫০০ টাকা দিয়ে যাত্রীদের অনেকেই নাকি ছাড়া পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের ভয় দেখিয়ে জনপ্রতি ৫০০ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। সরকারের তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে থাকলে সেখানে খাওয়া-দাওয়া, থাকা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদির ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। সেখানেই বা অভাব, অপ্রতুলতা কেন? তাহলে টাকা গেল কোথায় বা যাচ্ছে কোথায়?
সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণা, লিফলেট, নির্দেশিকা ইত্যাদি বিদেশ-ফেরতদেরই নয়, দেশের সকল মানুষের মধ্যে বিতরণ-বিলিবন্টন করার আবশ্যকতা প্রশ্নের অতীত। এক্ষেত্রেও অপ্রতুলতা ও দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চিন্তা ও উদ্বেগর কিছু নেই। অথচ ইতালীফেরৎ ১৪২ জনের ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে যে বিশৃংখলা ও দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেলো, সেটা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেদিনই বলেছেন, আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ ফিরলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তাঁর একথা বলার এক ঘণ্টার মধ্যে অত্যন্ত গুরুতর এফেক্টেড দেশ ইতালী থেকে আসা ১৪২ জনকে নামকাওয়াস্তে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, এই নিয়মের ব্যতয় ঘটলে দায়ী ব্যক্তিদের জেল ও জরিমানা হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্তে যারা দায়ী বলে সাব্যস্থ হবেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতালী থেকে আরো যারা এসেছেন বা আসবেন, তাদের ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অন্য দেশ থেকে আসাদের ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতোমধ্যে ইউরোপ থেকে সকল ফ্লাইট ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা একটি ভালো সিদ্ধান্ত। উল্লেখ্য, এখন হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া সব দেশই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের অসতকর্তা, অসাবধানতা, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে দেশে যদি করোনার বিস্তার ঘটে ও লোক মারা যায়, তবে সরকার কোনো অজুহাতেই তার দায় এড়াতে পারবেনা। চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ, ভারত প্রভৃতি দেশ কীরকম দুর্ঘট পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, সেদিকে খেয়াল রেখে আমাদের সতর্কতামূলক ও প্রতিরোধমূলক যাবতীয় ব্যবস্থাই নিশ্চিত করতে হবে। এর বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।