Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইতালিফেরতদের কোয়ারেন্টিনে যেতে অস্বীকৃতি, ঝগড়া ও বাড়ি চলে যাওয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া

সোশাল মিডিয়া ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২০, ৫:৩৯ পিএম

সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। ইতোমধ্যেই করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীন, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে এতে প্রচুর লোক মারা গিয়েছে। বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকরা দেশে ফিরছে। বিমান বন্দরে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে নেয়া হচ্ছে কোয়ারেন্টিনে। শনিবার ইতালিফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হলে ক্ষুব্ধ হন তারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে রীতিমত ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তারা। এসময় অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন হজ ক্যাম্পের প্রধান গেটে এসে বিক্ষোভ ও গেট ধাক্কাধাক্কি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভের পর পুলিশ তাদের ভেতরে সরিয়ে নেয়।

এদিকে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ইতালি থেকে আসা নাগরিকদের নিয়ে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ইতালিয়ান প্রবাসী বিমানবন্দর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন।

বৈশ্বিক এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইতালিফেরতদের এমন আচারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নেটিজেনরা। তিরস্কার ও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অনতিবিলম্বে এদেরকে চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

আবদুস সামাদ তার ফেইসবুকে লিখেন, ‘বেশি লাফালাফি করলে ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নিজেরাই আসছো বিপদগ্রস্ত হয়ে। এখন দেশকে বিপদের দিকে ফেলে দিতে চাও? একটু সময় দিতে চাওনা নিজেদেরকে? দয়া করে ফিটনেস পরীক্ষা করার সুযোগ দিন, তারপর বাসায় যাবেন। তাড়াহুড়ো করার কি আছে? হেফাজতের মালিক আল্লাহ, কিন্তু আমাদের সচেতন থাকতে হবে।’

‘এ সময়ে কেন এরা দেশে এসে দেশের মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলছে? জনস্বার্থে এদেরকে এভাবে রাখাটা উত্তম।’ - এমনটাই মনে করেন এস.এম. শফিউল ইসলাম।

অশোভন আচরণকারী ইতালিফেরতদের উদ্দেশ্য করে রাসেল শেখ লিখেন, ‘তোমরা এই সময় দেশে আসলে কেন? দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তোমাদের উচিত ছিলো, এই সময় দেশে না আসা। এসেই যখন পরেছো, তোমাদেরকে দেশের নিয়ম মেনেই চলতে হবে। ’

নীরা হক লিখেছেন, ‘বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। সর্বনিম্ন দুই সপ্তাহ তাদেরকে এভাবে থাকা উচিত।’

‘নিজে সুরক্ষিত থাকুন, পরিবারসহ দেশের সকল মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকেন।’ - হুমায়ন কবিরের আহ্বান।

মহামারীর ক্ষেত্রে রাসুল (স.)-এর নির্দেশনার কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে আবদুল হালিম লিখেন, “আল্লাহকে ভয় না করে করোনাভাইরাসকে ভয় করে দেশে চলে আসতেছেন, সেইটাও হাদিসের বিরোধী। রাসুল (স) বলেছেন, ‘যেইখানে মহামারি দেখা দেয়, সেইখানে অবস্থান করো। ঐখান থেকে পলায়ন করিও না। আর যেইখানে মহামারি দেখা দিয়েছে, সেইখানে গমন করিও না। ’ এই মুহূর্তে সরকারের উচিত তাদেরকে আলাদাভাবে রাখা। আমাদের বাংলাদেশকে যেন ঝুঁকির মুখে না ফেলা হয়, সেই দিকে সরকারের নজর রাখা উচিত। ”

অনুরোধ জানিয়ে নীল নির্ঝর লিখেন, ‘করোনা আক্রান্ত দেশ বিশেষ করে চীন ও ইতালি থেকে যেন বাংলাদেশের নাগরিকরা ফিরে আসতে না পারে সেজন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি করবেন না।’

ইতালিফেরতদের বিক্ষোভ করা প্রসঙ্গে এম আজিজ উদ্দিন লিখেন, বিক্ষোভ কেন করে বুঝি না। আসলে এরা দেশ চায়, নাকি দেশ ধ্বংস হউক সেটা চায়? আরে ভাই, কিছু দিন হলেও ওখানে থাকেন, আপনার জন্য যেমন উপকৃত হবেন, আপনার পরিবারও উপকৃত হবে। তার চাইতে দেশের জন্য বড় উপকার হবে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের কথা চিন্তা করেন। এরা দেশ রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল। আর আপনারা ১৫ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকতে পারতেছেন না। মাত্র ১৫ দিনের জন্য দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারছে না এরা!’

বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছেন নুর মুন্সী। তিনি লিখেন, ‘তাদেরকে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হোক, অনেক দিন পর দেশে ফিরলে সবারই প্রিয়জনের জন্য মন কাঁদে, তাই কিছুটা উচ্চবাচ্য করা স্বাভাবিক।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রবাসী এমডি রতন খান লিখেন, ‘না থাকতে চাইলে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হোক৷ এই ভাইরাসকে নিয়ে কোন অবহেলা নয়৷ কোন প্রকার ছাড় নয়৷ আমি প্রবাসী ভাইদের অনুরোধ করবো, আপনারা একটু ধর্য্য ধরুন৷ দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে, আপনারা একটু শান্ত থাকুন৷ আল্লাহপাক আপনাদের সাথে আছেন।’

‘সরকার একটা পরিষ্কার ঘোষণা দিয়ে দিলেই তো হয় যে, এখন থেকে যারাই আসবে তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই হবে। যারা এই শর্ত মেনে আসবে ওয়েলকাম, নইলে বিমানে উঠতে পারবে না।’ - সাইফুল ইসলাম চঞ্চলের সোজা-সাপ্টা স্ট্যাটাস।

আশিকুর রহমান লিখেন, ‘এখন বিদেশফেরত কাউকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বিমান বন্দর থেকে বের হতে দেয়া উচিত হবে না। কারণ এদের মাধ্যমে রোগটি সারা দেশে ছড়িয়ে পরতে পারে। আর হোম কোয়ারেন্টিনে যাদের থাকতে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলের উচিত তাদেরকে অত্যান্ত নজরদারিতে রাখা।’

প্রবাসীদের উদ্দেশ্য ফারজানা আক্তার লিখেন, ‘প্রবাসীরা, আপনারাও তো দেশের নাগরিক। আমরা কেন এই পরিস্থিতিতে দেশে আসছেন? দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আপনাদেরও তো কিছু দায়িত্ব আছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে বিপদে ফেলতে দয়া করে দেশে আসবেন না। আর আপনারাও আমাদের জন্য দোয়া করেন, আমরাও আপনাদের জন্য দেয়া করছি।’

‘ইউরোপের দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও ইংল্যান্ডের সাথে কেন এখনও রাখা হয়েছে? মানুষ এখন এগুলো বুঝে, কারণ সেখানে বিশেষ বিশেষ কিছু লোকজন থাকে। তাদের সাথে যোগাযোগে যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সেজন্য এমন করা হয়েছে।’ - সাইদুল ইসলামের মন্তব্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সোশাল মিডিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ