Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র ফেডারেশনের কর্মসূচি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ৭ দফা দাবিতে ধারাবাহিক সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, ভারতে সিএএ ও এনআরসি পাশ, মুজিব শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক হামলার হোতা নরেন্দ্র মোদিকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো, দিল্লী মেঘালয়সহ ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক হত্যাকান্ডের ঘটনায় সংগঠনটি এসব কর্মসূচি ঘোষণা করে। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন।

৭ দফার মধ্যে রয়েছে, ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ করে ফেলানীসহ সীমান্তে সকল হত্যার বিচার; দিল্লী-মেঘালয়সহ ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক হত্যা ও সর্হিসতা বন্ধ করা; বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য বন্টন করা; দেশের তরুণদের বেকার রেখে কর্মক্ষেত্রে ভারতীয় কর্মী নিয়োগ বন্ধ করা; এনআরসি ও সিএএ’র বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা; বাংলাদেশের উপকূলে রাডার স্থাপনসহ অপররাপর রাষ্ট্রের সাথে জনসম্মতিহীন সকল অসম চুক্তি বাতিল ও ভারত-চীনসহ সকল বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিক রেজা, অর্থ সম্পাদক নবীন আহমেদ, ঢাবি সাধারণ সম্পাদক সালমান ফরাজী, ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক সৈকত আরিফ প্রমূখ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ১১ মার্চ বয়কট নরেন্দ্র মোদি এই ডাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করে পরবর্তীতে মোদিকে বাংলাদেশের নিয়ে আসার চেষ্টা করা হলে সকল ছাত্র সংগঠনকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ৭ দফা দাবিতে আমাদের ধারাবাহিক সংগ্রাম চলবে। এসময় তিনি ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিম গঠন করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ওষুধপত্রসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নামমাত্র মুল্যে বিতরণ করতে হবে। করোনা ভাইরাসকে ইস্যু করে দাম বৃদ্ধির সিন্ডিকেট তৈরি হতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, নগর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি আহবান সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে সচেতনতা ও সতর্কতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে জাহিদ সুজন বলেন, ভারত রাষ্ট্রের সাথে নায্যতা ও মর্যাদার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রাষ্ট্র বারবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আমাদের দেশের ওপর ভারতীয় আগ্রাসন বিভিন্নভাবে ক্রিয়াশীল রয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সীমান্ত হত্যা, ৫৪ নদীর পানি বন্টন চুক্তির দিকে তাকালেই দু-দেশের অসম সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্টভাবে সামনে আসে। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশের শাসকশ্রেণি কর্তৃক ভারতীয় শাসকশ্রেণির তাঁবেদারি করা, শাসকশ্রেণির পরজীবী ও লুণ্ঠনজীবী চরিত্র।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের তিনপাশে ভারতের বর্ডার এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র হবার কারণে ভারতের যেকোনো জাতিবিদ্বেষী, বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক নীতিমালার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়ে। এনআরসি ও সিএএ এর মতো “মুসলিম বিদ্বেষী” আইন পাশ হলে ভারতজুড়ে এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে এর প্রভাব পড়বে। বিজেপি সরকার এমন ফাঁদ পেতেছে তাতে যেকোনো দেশে হিন্দুধর্মাবলম্বী কেউ আক্রান্ত হলে সহিংসতার শিকার হলে হত্যা হলে বিজেপি তার সাম্প্রদায়িক চক্রান্তকে জায়েজ করার মশলা পাবে। এই টোটকা গেলার জন্য বাংলাদেশেও সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আছে। ইতোমধ্যে ভারতে মসজিদে হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশে চট্টগ্রামের পটিয়ায় মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমরা বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দিবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নেই। ভারত একতরফা নদীতে বাঁধ দিয়ে নদী শাসন করছে। আন্তর্জাতিক নদী আইন অমান্য করে টিপাইমুখী বাঁধ, ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা বাঁধ, গঙ্গা বাঁধসহ কয়েক শত বাঁধ দিয়ে বাংলাদেকে পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না। শীত মৌসুমে পানি আটকে রাখে অথচ প্রতি বর্ষা মৌসুমে বাঁধ খুলে দিয়ে বন্যাকে দীর্ঘায়িত করে হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে। দু-দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিগত কয়েক বছরে বাণিজ্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখন এই ঘাটতি প্রায় ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। অপরাধ বাজারে এই ঘাটতি কয়েকগুন বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ কর্মক্ষম তরুণ বেকার অথচ প্রায় ৫ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে চাকরিরত যার ১০% বাদে বাকীরা অবৈধভাবে এসেছে।

সীমান্তে হত্যার বিষয়ে বলা হয়, সীমান্ত হত্যার বিষয়টি বাংলাদেশের সরকারের কোনো মাথাব্যথার কারণ নয়। গত জানুয়ারি মাসে বিশ জনের বেশি নাগরিককে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গত বিশ বছরে সাড়ে ১৩’শত বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। কোনো হত্যার বিচার হয় নি। সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষে নিতে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।

ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করে সকল বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক নির্মাণে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এরজন্য দেশের মানুষের সমস্ত নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়ন করা, একচেটিয়া স্বৈরাচারী দুঃশাসন বন্ধ করে দেশের মধ্যে জাতীয় সংহতি তৈরি করা, বাংলাদেশের নাগরিকদের মর্যাদা, দেশের সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সমমর্যাদার সম্পর্ক নিশ্চিত করতে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়।##



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১০ মার্চ, ২০২০, ৬:২৩ এএম says : 0
    সাব্বাস আমাদের সোনার বাংলাদেশের বাংগালী। সালাম জানাই, জানাই ধন্যবাদ। আমি আছি সংগেতে মোহাম্মদ খোয়াজ আলী খাঁন। ভয়, নাই ভয় নাই স্বাধীনতা আমাদের সম্মান। গুড়িয়ে দিবো, উড়িয়ে দিবো বাংলাদেশের যত আছে বাংলাদেশের দুশমন হায়ান। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ