পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের খাদ্যভান্ডার হিসাবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলে দ্রুত বদলে যাচ্ছে তিন ফসলী বোরো আউস আর আমনের জমি। ক্রমাগত ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়ে বাম্পার লোকসানের মুখে নিঃস্ব হচ্ছে কৃষক, আগ্রহ হারাচ্ছে ধান আবাদে। লোকসান কাটাতে সরকারিভাবে ধানের বদলে সেচ লাগে এমন সব ফলদ আর শাকসবজি আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ধানের ক্ষেত দ্রুত বদলে গিয়ে পরিণত হচ্ছে আম লিচু, পেয়ারা, ভুট্টা, মাল্টা, বরইসহ নানা ফলদ আর শাক-সবজির বাগানে। ধানের জমির মাটি কেটে বানানো হচ্ছে পুকুর। সেই মাটি দিয়ে গড়ে উঠছে ইটভাটা। আর নগরায়ন ও শিল্পায়ানের নামে জমি অধিগ্রহণের কোপ পড়েছে সেই ধানের জমিতে। ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে আবাদী জমি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি বিধি মোতাবেক জমির রকম পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে সে বিধি কেউই মানছে না।
বছর দশক ধরে জমির এমন ধরন বদলে যাবার দৃশ্য খুব সহজেই চোখে পড়ছে। একদিন যেসব ক্ষেতে সবুজ সোনালী ধানের সমারোহ ছিল এখন সেখানে ভিন্ন রূপ। আম, লিচু, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের বাগান। হচ্ছে শাকসবজি আবাদ। আম চাষে বেশি লাভ বলে ধানের জমিকে রূপান্তর করা হচ্ছে বড় বড় আম বাগানে। ধান চাষের চেয়ে ঝক্কি ঝামেলা কম আর লাভ বেশি বলে বাগান-পুকুরের দিকে ঝুঁকে পড়েছে জোতদাররা। একবার কোন রকমে আম, লিচুর বাগান গড়ে তুলতে পারলে বছরের পর বছর ধরে ফল পাওয়া যাবে। শুরুর দিকে কিছু পতিত জমিতে ফলের বাগান গড়ে ওঠে। বাগান করে সহজে ভাগ্য বদল করা যায় বলে ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় উৎসাহী হয় জোতদাররা।
কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ, ফল গবেষণা আর নার্সারীগুলো উৎসাহিত করে বিভিন্ন পরামর্শ আর চারা দিয়ে। প্রথমে ধানের জমির আইলে পরে মধ্যে মধ্যে উচু মাটির ডিবি করে গাছ লাগায়। সঙ্গে চলে ধান চাষ। দু’বছর পর আম গাছ গুলো বড় হয়ে পুরোটায় বাগানে রূপ নেয়। হাইব্রীড জাতের কলম গাছ বলে তিন বছরের মাথায় ফলন দেয়া শুরু করে। চাহিদা রয়েছে ভাল দামও পাওয়ায় জোতদাররা ধানের চেয়ে বাগান বেশি লাভজনক বলে তারা বাগানের পরিধি বাড়াচ্ছে।
বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উৎপাদনের উপযোগী বলে আম-লিচুর বাগান বিস্তৃত হচ্ছে। এমন বিস্তৃতি কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ ফল গবেষণা বিভাগ তাদের সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে এমন প্রচারণা বেশ জোরে শোরে চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলে আড়াই হাজারের বেশি আমবাগান গড়ে উঠেছে -যা সবই ধানের জমি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২ সালে রাজশাহী অঞ্চলে আম বাগান ছিল ৪২ হাজার ৪১৭ হেক্টর। আর এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৩৪৬ হেক্টর। এর বাইরে রয়েছে অন্যান্য ফলের বাগান। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ আমের বাগান বেড়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাত বছর আগে আমের রাজধানী চাপাইনবাবগঞ্জে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। এখন সেখান ২৮ হাজার হেক্টর। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায়। রাজশাহীতে ছিল দশ হাজার হেক্টর। আর এখন সাড়ে সতের হাজার হেক্টর। আর নাটোরে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হচ্ছে।
রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে খ্যাত নওগাঁয় অবিশ্বাস্য রকমের আকারে আমের বাগান বেড়েছে। সাত বছর আগে যেখানে আম বাগান ছিল ছয় হাজার হেক্টর জমি। এখন সেখানে আম বাগানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কুড়ি হাজার হেক্টর জমি। প্রতি বছর গড়ে দু’হাজার হেক্টর জমি আম বাগানের পেটে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পোরশা সাপাহার পত্মীতলা, নিয়ামতপুর, ধামুরহাট, বদলগাছি এলাকায় বাড়ছে বেশি। ধানের জমিতে বদলে ফলের বাগান হওয়ায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সেখানকার কৃষি বিভাগ বলছে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক ভূগর্ভস্থ পানি কম ব্যবহার স্বল্প সেচ চাহিদা সম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা।
কৃষি বিভাগ ও চাষীরা বলছে, এক বিঘা জমি থেকে ধান চাষ করে পাওয়া যায় বছরে চার-পাঁচ হাজার টাকা। কখনো আবার তাও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে একবিঘা জমিতে ত্রিশটি জাতসম্পন্ন আম গাছ থাকলে গাছপ্রতি আম পাওয়া যায় দেড় থেকে দুইমণ। বিঘাপ্রতি আম বিক্রি করে পাওয়া যায় ত্রিশ থেকে আশি হাজার টাকা। ধানের জমিতে আম বাগানের ব্যাপারে কৃষি বিভাগের কর্মীরা বলছেন, আমরা পরিত্যক্ত ও সেচ সুবিধাহীন জমিতে আম বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করছি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় অন্য রকম।
শুধু নওগাঁ নয়, বরেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় যেন ফল বাগানের বিপ্লব ঘটেছে। ধানের জমিতে বাগান করা প্রসঙ্গে কৃষকরা বলেন, এখন ধান আবাদ করা অনেক ঝামেলার ব্যাপার। বীজ, সেচ, মজুরী নিয়ে প্রতিবছর চলে তেলেসমাতি কারবার। এরপর রয়েছে বিরূপ প্রকৃতি। সবকিছু মোকাবেলা করেও ধান উৎপাদন করার পর দেখা যাচ্ছে ধানের উৎপাদন খরচ উঠছে না। এরচেয়ে আম, লিচু, পেয়ারা বাগান করা অনেক ভাল। একবার বাগান তৈরি হয়ে গেলে আর কোন ঝামেলা নেই। সামান্য পরিচর্যা করলে ফল ও দাম মিলবে। আর আম বেচে ধান কিনব। আম লিচু বাগানের বিস্তার ঘটছে রংপুরে হাড়িভাঙ্গা আর দিনাজপুরের বেদানা লিচুর।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বিভাগের সাবেক প্রফেসর বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এবনে গোলাম সামাদ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে ভেতরে ভেতরে মহাসর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। এমনিতে উন্নয়নের নামে বিপুল পরিমাণ আবাদী জমি কমছে। আমরা বর্তমানের কথা ভেবে এসব করছি। আগামীর কথা ভাবছি না। এমনটি হলে কোন জাতি টিকে থাকতে পারে না। এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হলো ভাত। প্রবাদ রয়েছে মাছে ভাতে বাঙ্গালী। কিংবা ভেতো বাঙ্গালী। অর্থাৎ ধান। আম-লিচু-পেয়ারা বছরে একবার হয়। আর তা কখনোই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
এদিকে এ অঞ্চলের মাছের উৎপাদন ও বাজার ভাল হওয়ায় মানুষ কৃষি আবাদের চেয়ে মৎস্য খামারের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। কোপ পড়েছে ঐ ধানের জমিতে। মৎস্য বিভাগের প্রচারণা আর অন্যের লাভ দেখে অনেকেই ঐ লাভ ও লোভের দিকে পা বাড়িয়েছে। পুকুরের কাটা মাটি ইটভাটার কাছে বিক্রি হচ্ছে ভাল দামেই। নিজের জমিতে পুকুর করার কারণে পার্শ্বের অন্যের জমিতে পানিবদ্ধতার কারণে ধান আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের মতে রাজশাহীতে গত পাঁচ বছরে সাড়ে তিন হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। যার পরিমাণ পঁচিশ হাজার বিঘা। আর পানিবদ্ধতার শিকার হয়েছে আড়াই হাজার বিঘা। এসব পুকুরে বরেন্দ্রের সেচের পানি দিয়ে মাছ চাষ হচ্ছে। জ্যান্ত মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাক বোঝাই হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য বিভাগ প্রচার করছে মৎস্য বিপ্লব ঘটার। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ তিন ফসলী জমিকে পুকুর করায় নাখোশ। তারা বলছেন এতে করে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যার ফলে হুমকির মুখে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা ও চাষাবাদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।