Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাহাড় কাটার মহোৎসব : ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ

আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৩ এএম

হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্য চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। এতে করে একদিকে পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীক‚ল হারাচ্ছে নিরাপদ আবাসস্থল। তবে এ ব্যাপারে কোন প্রকার কার্যকারী পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন। তাদের নির্বিকার ভ‚মিকা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে স্থানীয়দের মনে। 

উপজেলার ও পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েকমাস যাবৎ এলাকার বেশ কিছু প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে পাহাড় কাটার একটি সিন্ডিকেট চক্র স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় পাহাড় ও টিলা কাটা। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অন্তত ১৫-২০টি ট্রলি গাড়িতে করে পাহাড়ের মাটি বিক্রি করছে সিন্ডিকেট চক্রটি। প্রায় ৪৫ ফুট ধারণকৃত প্রতি ট্রলি পাহাড়ি মাটি ৮০০-১০০০ টাকা হারে বিক্রি করে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে চক্রটি। চক্রটি এ পর্যন্ত ৪-৫টি ৬০-৭০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে। পাহাড় কেটে সমতল করে অন্যায় ভাবে ছোট ছোট প্লট তৈরি করে বিক্রয় করছে। এতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় প্রবল বর্ষনে পাহাড় গুলো ধসে যে কোন মুর্হুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
নন্দির হাট এলাকার পশ্চিমে বসবাসরত কয়েক জন প্রবীন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এক সময় সিটি কর্পোরেশনের ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য ছিল হরিণ, বাঘ, ভালুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। চট্টগ্রামের শহরের লাগোয়া হওয়ার কারণে অনেকেই এ পাহাড় বেষ্টিত এলাকাটিকে বনভোজনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু অবৈধভাবে পাহাড় কাটার ফলে ওই এলাকার পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এছাড়া পাহাড় উজাড় হওয়া কারণে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। এতে করে পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলোকে এখন আর দেখা যায় না বলে স্পটটি হারাতে বসেছে তার অতীত ঐতিহ্য।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ফতেয়াবাদ এলাকার পশ্চিমে পাহাড় কেটে সমতল করে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার লোকজনের কাছে সরকারি এই পাহাড় বিক্রি করে টাকার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। চৌধুরী হাটের পশ্চিমে সাধুর পাহাড় সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে অবৈধভাবে সুতার পাহাড় (প্রকাশ ফুতর পাহাড়) কেটে সমতল করে প্লট বিক্রি করে আরেকটি প্রভাবশালী চক্র রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে বলে জনশ্রæতি রয়েছে এবং ফতেয়াবাদের পশ্চিমে, পৌরসভার হাটহাজারী বাসস্টেশন ও সদরের পশ্চিমে সন্দিপ পাড়া, মেখল ঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকায়, মীরের হাটের পশ্চিমে আদর্শ গ্রাম, চন্দ্রপুর, আলমপুরমহ কয়েকটি স্থানে, চারিয়ার পশ্চিমে, সরকারহাট এর পশ্চিমে, ধলই, মনিয়াপুকর পাড়, কাঠিরহাট, ফরহাদাবাদ, নাজিরহাটসহ এসব এলাকার পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে এই পাহাড় কাটার উৎসব। পাহাড়ের মাঠি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভরাট করা হচ্ছে ছোট বড় পুকুর ও জলাশয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাহাড় কর্তনের কোন অভিযোগ আমরা এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড় কাটা

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ