দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রতি বছর ১৪ ফেব্রয়ারী এলেই ‘আধুুুনিক সভ্য’ দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই মহা ধুমধামে পালিত হয় ভ্যালেনটাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আমাদের এই ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশও এই নষ্ট নদীর স্রােত সমান তালে বহমান। বাংলাদেশে সর্ব প্রথম এর আগমন ঘটে ১৯৯৩ সালে। যায়যায় দিন নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ও তার সম্পাদকের হাত ধরে এ নষ্টামির অশুভ সূচনা হয় বাংলাদেশে। এর আগে এ দেশের মাটি ও মানুষের সাথে এ নষ্টামির কোনো পরিচয় ছিল না। এ দিবসের জন্মের ইতিহাসটি এমন- ২৭০ খৃষ্টাব্দে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের শাসনামলে বিবাহিত পুরুষদের সেনাবাহিনীতে যোগদান নিষিদ্ধ করা হয় এবং অবিবাহিত সৈনিকদের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ বিবাহিতরা ঘর-সংসার ও বিবি-বাচ্চার মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি নিতে পারত না। অথচ সৈনিক জীবনে মৃত্যুর ঝুঁকি না নিলে কাংখিত বিজয় সম্ভব নয়। তাই সম্রাট এ সিদ্ধান্ত নেন। এ দিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক এক ধর্ম যাজক সম্রাটের আদেশ উপেক্ষা করে গোপনে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকার বিয়ে সম্পন্ন করেন। এ জাতীয় এক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে সম্রাট ক্লডিয়াসের সৈন্যরা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে আটক করে জেলে আবদ্ধ করে। জেলে বন্দী অবস্থায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে অনেকেই ফুল দিয়ে তার বন্ধু হয় এবং এ কাজে তাকে সাধুবাদ জানায়। এ দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রয়ারী। এ থেকেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি হয়। কেউ কেউ ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন এভাবে- সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক। সে সময় রোমানরা দেব-দেবীর পূঁজা করত। খৃষ্টধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খৃষ্টাব্দে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। ভ্যালেন্টাইন যখন জেলে বন্দী ছিলেন তখন ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা জেলখানার জানালা দিয়ে তার প্রতি ভালোবাসার কথা বলে চিঠি ছুড়ে মারতো। ভ্যালেন্টাইন বন্দী অবস্থাতেই জেলারের অন্ধ মেয়ের চিকিৎসা করেন। এতে জেলারের মেয়ে দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায়। মৃত্যুর দিন ভ্যালেন্টাইন মেয়েটিকে লিখে যান ‘love from your valentine’। এ দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রয়ারী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পরবরর্তীতে এ দিবসের উদ্ভব হয়। (অপসংস্কৃতির আগ্রাসন, মুফতী হিফযুর রহমান: ২৫-২৭) বিচিত্র এ পৃথিবীতে কারণে অকারণে কত দিবসের যে উৎপত্তি হয়েছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। নতুবা এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদ্ভবের কি অর্থ থাকতে পারে? পাগলামীরও একটা সীমা থাকা দরকার। অন্য সকল জাতির কথা বাদ দিলেও আমাদের তো ভাবা উচিৎ আমরা মুসলমান। আমাদের সকল কিছুতেই রয়েছে নিজস্ব রীতি-নীতি। আছে নিজস্ব দর্শন। আরো আছে কুরআন-হাদীসের নির্দেশনা। আরো ভাবা উচিৎ মুমিনের জীবন তো হলো মুহাসাবা ও আত্মসমালোচনার জীবন। আমি যে কাজটি করছি এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? এতে কি আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের ইতাআত আর আনুগত্য, নাকি নাফরমানী আর অবাধ্যতা? এতে কি খুশি হবেন মহামহিম আল্লাহ ও পরম প্রিয় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নাকি নারাজ হবেন? প্রতিটি কাজেই মুমিনের এভাবে ভাবা উচিৎ। এ প্রসঙ্গে সাহাবী শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. এর বর্ণনায় রাসূল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘জ্ঞানী ঐ ব্যক্তি যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরকালের জন্য আমল করে। আর নির্বোধ সেই ব্যক্তি যে নিজেকে প্রবৃত্তির অনুগামী রাখে আর আল্লাহর কাছে বড় বড় আশা রাখে।’ এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম তিরমিযী র. বলেন, সে কিয়ামতের হিসাবের পূর্বেই দুনিয়াতে নিজের হিসাব নেয় এবং আত্মসমালোচনা করে। হযরত উমর রা. বলেন, পরকালে তোমাদের হিসাব ও মুহাসাবার আগেই তোমরা নিজেদের হিসাব ও মুহাসাবা কর এবং নিজেদের প্রস্থুত ও সজ্জিত কর কিয়ামত দিবসে উপস্থিত হওয়ার জন্য। কিয়ামত দিবসে সেই ব্যক্তির হিসাব-নিকাশ সহজ হবে যে দুনিয়াতে নিজের মুহাসাবা ও আত্মসমালোচনা করে। (তিরমিযী: হাদীস, ২৪৫৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৩৫২০৯; মুসান্নাফে আ. রাজ্জাক: ৩৪৪৫৯) একজন মুমিনের চিন্তা-চেতনা তো এমনটি হওয়াই উচিৎ ছিল। কিন্তু অত্মভুলা উম্মাহর এ সব নিয়ে চিন্তা-ভাবনার ফুরসত কৈ? ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। থাক সে সব কথা। মূল কথায় ফিরে আসি। এ দিবসকে কেন্দ্র করে হোটেল-মোটেলগুলো আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। টিভি চ্যানেলগুলোও আয়োজন করে রকমারি অনুষ্ঠানের। সরব হয়ে উঠে এক শ্রেণীর নষ্ট মানুষ। অগ্র-পশ্চাত না ভেবেই কিছু মুসলিম তরুণ-তরুণী কাম প্রবৃত্তির তাড়নায় এ দিবসে উন্মাদ হয়। ভেসে যায় কাম তারল্যে। অবগাহন করে পাপের নর্দমায়। ফলে পাপ পঙ্কিল হয়ে উঠে মানব জমীন। এই একটি দিবসকে কেন্দ্র করে কি পরিমাণ পাপের মহড়া হয় তার সংক্ষিপ্ত আলোকপাত পত্রস্থ করা হলো। এ দিবসে ইসলামের ফরয বিধান পর্দার বিধান লঙ্গিত হয় চরমভাবে। পর্দা ও মানবিকতার সকল বাঁধন ছিন্ন করে চরম নির্লজ্জতা ও পাশবিকতায় মেতে উঠে এক শ্রেণীর যবুক-যুবতী। অথচ মানব সংসারে পর্দার গুরুত্ব ও উপকারিতা অনস্বীকার্য। পালনের শান্তি ও উপকারিতা বরণীয়। লঙ্গনের শাস্তি ও ক্ষতি অসহনীয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা নবীর স্ত্রীদের নিকট কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এই বিধান তোমাদের এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্রতার কার্যকর উপায়।” (আহযাব: ৫৩) অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা, ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন স্বীয় চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত ও বিরক্ত করা হবে না।” (আহযাব: ৫৯) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “আপনি মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে আর হেফাযত করে স্বীয় যৌনাঙ্গকে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্য অধিকতর পবিত্রতার উপায়।” নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাদের কর্ম সর্ম্পকে অবগত। এভবে আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে আর হেফাযত করে স্বীয় যৌনাঙ্গকে। (এ ব্যবস্থা তাদের জন্যও অধিকতর পবিত্রতার উপায়।)” (নূর: ৩০) সাহাবী আবু সাঈদ রা. বলেন, রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-“কোনো পুরুষ যেন অন্য পুরুষের গুপ্তাংশের দিকে না তাকায়, এভাবে কোন নারীও যেন অন্য নারীর গুপ্তাংশের দিকে না তাকায়। (মুসলিম, মিশকাত: ২/২৬৮)। অপর বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী উকবা বিন আমের থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বলেন, “তোমরা পর নারীদের কাছে যেওনা।” (বুখারী: ২/৭৮৭, মুসলিম: ২/২১৬) অন্য এক হাদীসে আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোনো পুরুষ কোনো বেগানা নারীর সাথে একান্তে অবস্থান করলে তাদের তৃতীয় জন হয় শয়তান।” (তিরমিযী: ১/২২১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন, মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! অনিচ্ছাকৃত প্রথমবারের দৃষ্টি মাফ করা হবে। তবে দি¦তীয় বার দেখা থেকে বেচে থাকো। নতুবা এটা তোমাদের ধ্বংশের কারণ হবে। (আরসালান বিন আখতার কৃত জোয়ানী যায়ে করনে কে নুকছানাত) অন্য বর্ণনায় এসেছে, “যে পরুষ পর নারীর প্রতি কুদৃষ্টি দেয় এবং যে নারী কুদৃষ্টির জন্য নিজেকে অন্যের সামনে পেশ করে তাদের উভয়ের উপর আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।” (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস: ৭৩৯৯) এ দিবসে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় অসংখ্য তরুণ-তরুণী। এ দিবসকে তারা এ অপকর্মের উপযুক্ত সময় মনে করে। আগে থেকেই তারা স্থান ও সময় ঠিক করে রাখে। অথচ ব্যভিচার সতর্কতার বাধা ডিঙ্গিয়ে সতীত্বের বিপক্ষে চরম সীমায় উপনীত হওয়া ও আল্লাহর বিধানাবলীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণার নামান্তর। ব্যভিচার স্বয়ং একটি বৃহৎ ও ভয়াবহ অপরাধ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেওনা। নিশ্চয় ব্যভিচার অশ্লীল ও নিকৃষ্টতম কাজ এবং যৌন সম্ভোগের কদর্য পথ।” (সূরা ইসরা: ৩২) সাহাবী হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. এর এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম ব্যভিচার থেকে সতর্ক করে বলেন, হে লোক সকল! তোমরা ব্যভিচারকে ভয় কর। কারণ তার ৬টি অশুভ পরিণাম রয়েছে। তিনটি দুনিয়াতে আর তিনটি আখেরাতে। দুনিয়ার তিনটি হলো ১. দেহের সুন্দর্য নষ্ট হয়। ২. চিরস্থায়ীভাবে অভাব অনটন আসে। ৩. আয়ুকাল হ্রাস পায়। আর পরপারের তিনটি হলো, ১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি। ২. বিচার দিবসের হিসাবে মন্দ পরিণাম। ৩. দোযখের চিরস্থায়ী আযাব। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী হাদীস: ৫০৯১) সাহাবী আবু হুরায়রা রা. এর বাচনিক অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যভিচারের ভয়াবহতা সর্ম্পকে বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কিয়ামত দিবসে পরম দয়ালু আল্লাহ কথাও বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। ১. বৃদ্ধ ব্যভিচারী। ২. মিথ্যুক শাসক। ৩. অহংকারী ফকীর। (আস সুনানুল কুবরা, নাসাঈ, হাদীস: ৭১০০ ; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী হাদীস: ৫০২ ) অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মত ততদিন ভালই থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ব্যভিচার ও অবৈধ যৌন সম্ভোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে না পড়বে। আর যখন তাদের মধ্যে ব্যভিচার ও অবৈধ যৌন সম্ভোগ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করবে তখন তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি গ্রাস করবে।” (মুসনাদে আহমাদ) তা ছাড়া ব্যভিচার নিজের সাথে বয়ে নিয়ে আসে আরও শত শত অপরাধ এবং এর অশুভ ফলাফল প্রকাশ পায় সমগ্র মানবতার বির্পযয় ও ধ্বংসের আকারে। পৃথিবীতে যত হত্যা ও লুণ্ঠনের মতো জঘণ্য ঘটনাবলী সংগঠিত হয়েছে বা হয়, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ ঘটনার কারণ কোনো নারী ও তার সাথে অবৈধ সর্ম্পক। এ ছাড়াও ব্যভিচার নারী-পুরুষকে নিক্ষেপ করে সুমহান মর্যাদার আসন থেকে নোংরা নর্দমায়। মানব সমাজকে রুপান্তর করে পশুর সমাজে। মূলত এ কারণেই মানবিক অপরাধ সমূহের যেসব শাস্তি কুরআন-হাদীসে নির্ধারিত রয়েছে তন্মধ্যে ব্যভিচারের শাস্তি সবচে ভয়াবহ ও কঠোরতর। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, “ব্যভিচারী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষের প্রত্যেককে বেত্রাঘাত কর একশ করে। তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকলে আল্লাহর এ বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের দয়ার উদ্রেক না হয়। আর মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের এ শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (নূর: ২) আয়াতে বর্ণিত ব্যভিচারের এ শাস্তি কেবল অবিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য। বিবাহিত নারী-পুরুষের শাস্তি প্রস্তরাঘাতে হত্যা। যা অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সাহাবী জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, ‘আসলাম গুত্রের এক ব্যক্তি (হযরত মায়িয রা.) হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন, তিনি ব্যভিচার করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজের উপর চারবার সাক্ষ্য দিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে রজম তথা প্রস্তরাঘাতে হত্যার নির্দেশ দিলেন আর তিনি ছিলেন বিবাহিত।”( বুখারী, হাদীস: ৬৮১৪; মুসলিম, হাদীস:১৬৯১) গান-বাজনাও ভালোবাসা দিবসের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। অথচ ইসলামে গান-বাজনা হারাম ও ভয়াবহ অপরাধ। এ ব্যাপারে এসেছে বড় কঠোর ও নির্মম হুশিয়ারী। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-“ এক শ্রেণীর লোক এমন রয়েছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে ‘লাহওয়াল হাদীস’ তথা অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে করে ঠাট্টা-বিদ্রুপ। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরা লুকমান: ৬) সাহাবী আব্দুলাহ ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাস, জাবের রা. ইমাম বুখারী, বায়হাকী, ইবনে জারীর রহ. প্রমুখ আয়াতে উল্লেখিত ‘লাহওয়াল হাদীস’ এর তাফসীর করেছেন গান-বাজনা করা। অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদগণ এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন- গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, অনর্থক গল্প, উপন্যাস ও কিস্যা-কাহিনীসহ যে সকল বিষয় মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণ থেকে গাফেল করে দেয়, সে সবই ‘লাহওয়াল হাদীস’ এর অন্তর্ভুক্ত। (মাআরিফুল কুরআন: ৭/৪) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বলেন-“আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। তাদের সামনে গায়িকারা গান-বাজনা করবে বিভিন্ন ধরণের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে। আল্লাহ তাআলা এদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন আর কতকের আকৃতি বিকৃত করে বানর ও শুকরে পরিণত করে দিবেন।” (তবারানী-কাবীর: ৩৪১৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী হাদীস: ৪৭৫৯; ইবনে মাজা: ২/৪০২০; ইবনে হিব্বান, হাদীস: ৬৭৫৮) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে-ইবনে আব্বাসের রা. বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া, তবলা ও সারেঙ্গী হারাম করেছেন। (আবু দাউদ, হাদীস: ৩৬৮৫) এছাড়াও বহু প্রমাণ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস রয়েছে যাতে গান-বাদ্য হারাম ও নাজায়িয বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে রয়েছে বিশেষ সতর্কবাণী ও কঠিন শাস্তির ঘোষণা। ভালোবাসা দিবসের আরেকটি জঘন্য দিক হলো, এটি একটি বিজাতীয় সংস্কৃতি। যা তার জন্মের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পেরেছি। বিজাতীর অন্ধ অনুকরণের উন্মাদনায় এক শ্রেণীর আত্মবিস্মৃত মুসলিম তরুণ-তরুণীও উন্মাদ হয় এ দিবসে। কোনো আত্মমর্যাদাবান জাতি নির্বিচার পরানুকরণের শিকার হতে পারে না। অধিকন্তু স্বমহিমায় ভাস্বর আমাদের গর্বের ধন ইসলামে বিজাতীয় অনুকরণ হারাম ও নিষিদ্ধ। রাহমাতুল্লিল আলামীনের ভাষায় এভাবে- “যে বিজাতীয় সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন পরিগণিত হবে।” (আবু দাউদ: ২/৫৫৯, হাদীস: ৪০৩১) অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা পথ-পন্থা, রীতি-নীতি, চাল-চলন ও লেবাস-পোশাকে পৌত্তলিকদের প্রতিকূলে চলো; অনুকূলে নয়। (বুখারী, হাদীস: ৫৮৯) শেষকথা হলো, রুচির বিকৃতি না ঘটলে কোনো মানুষ পাপ-পঙ্কিলতা ও নোংরামীতে ভরপুর ভালোবাসা দিবস নামের এই বিজাতীয় উৎসব পালন করতে পারে না। মুসলিম পিতা-মাতার সন্তানেরা তো নয়ই। এই পাপাচার ও নোংরামী বন্ধ করতে সচেষ্টে হওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের অপরিহার্য কতর্ব্য। আর একটি মুসলিম দেশের অভিবাক হিসেবে দেশের সরকারের দায়িত্ব হলো, এই ধরণের চরিত্র বিধ্বংসী ও ঈমানঘাতী বিজাতীয় উৎসব কঠোর হস্তে রোধ করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আল্লাহ তাওফীক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।