পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের কাজের উন্নয়ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, রাস্তা মেরামতের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সড়ক যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ফোরলেন আর আট লেন করার দরকার কি? যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয় সেটা ঠিকমত পালন করা হয় না। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় তিনি আরো বলেছেন, আমরা যখন রাস্তায় চলি শৃঙ্খলা মেনে চলি না। যাত্রীরাও মেনে চলে না, চালকরাও মেনে চলে না। আর রাস্তার শৃঙ্খলা মেনে না চললে ফোরলেন ও আটলেন করে লাভ কি হবে? রাস্তার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাবার পাশাপাশি রাস্তার কাজের মান উন্নয়নে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাবারও ঘোষণা দেন তিনি।
সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকদিন থেকেই আলোচনা হচ্ছে। গত কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে সারা বছর সড়কের বেহাল দশা নিয়ে লেখালেখি হলেও ঠিক ঈদের আগে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। এধরনের সংস্কার কাজের প্রকৃতি নিয়ে অনেক দিন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। চলতি বছরেও তার কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। এবছরও চলমান কাজ নিয়ে টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এসব ছবিতে দেখা গেছে যে, কোথাও কোথাও যেভাবে কার্পেট গুটিয়ে নেয়া হয় সেভাবেই সড়কের কার্পেটিং গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে। এর ভিত্তি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কথাতেও রয়েছে। এটা অনেকদিন থেকেই বলা হয়ে আসছে যে, এসব কাজের সাথে দুর্নীতির একটি বড় ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। মূলত টাকা ভাগাভাগির অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি রয়েছে, তার সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে ক্ষমতার। গোটা নির্মাণ ব্যবস্থাপনার মধ্যেই ত্রুটি ও দুর্নীতির বিষয়টি রয়েছে। কিছুদিন আগেই ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এসবের সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। সড়কের অনিয়ম নিয়ে বছর জুড়েই খবর প্রকাশিত হয়ে আসছে। এসব খবরের মধ্যে রয়েছে কাজের দীর্ঘসূত্রতা। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা অনিয়মের খবর। সড়কের চলমান নির্মাণ সংস্কারে ব্যবহৃত বিটুমিনের মান নিয়ে অনেক দিন থেকেই প্রশ্ন রয়েছে। পীচঢালা সড়ক-মহাসড়কেই শুধু নয়, খোদ রাজধানীতেও পীচের মান এবং পীচ গলানোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এটা অনেকদিন থেকেই বলা হয়ে আসছে যে, নিম্নমানের বিটুমিনে সংস্কারের অল্পদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায় দেশের সড়ক-মহাসড়ক। যথাযথ তদারকির অভাবে অবৈধভাবে আসা মানহীন বিটুমিন ব্যবহৃত তচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক। এ কারণে প্রতিবছর এ খাতে সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। বলা হয়েছে, সরকারের জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই বিদেশ থেকে ড্রামে ভর্তি করে নিম্নমানের বিটুমিন অমদানি করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথ তদারকি না থাকায় অথবা করতে না পারার কারণেই সাধারণত যেখানে ১১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেই বিটুমিন গলাতে হয়, সেখানে দ্রুত গলানোর জন্য তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এতে বিটুমিনের গুণগতমান অবধারিতভাবেই কমে যায়। গুটি কয়েকের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়েই নিম্নমানের এসব বিটুমিনে দেশ ছেয়ে যাবার কারণে দেশে উৎপাদিত মানসম্পন্ন বিটুমিন অবিক্রীতই থেকে যাচ্ছে। এ কথা বলার প্রয়োজন নেই কেন এবং কি কারণে এসব হচ্ছে। দেশের মিডিয়াতে এ নিয়ে প্রায় প্রতিবছরই রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। প্রতি বছর ঈদের দোহাই দিয়ে এসব নিম্নমানের কাজ সম্পন্ন করে কার্যত বিলও তুলে নেয়া হয়। পর্যালোচনা করে বলা যায়, এসব নিম্নমানের কাজ প্রসঙ্গে যখনই কথা হয়, তখনই দেখা যায় মুখরক্ষামূলক কিছু ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে নেয়া হয় বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয় বা হতে পারেÑ এমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই না নেয়ার প্রতিক্রিয়াই মূলত ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে এক ধরনের অসয়াত্বও ফুটে উঠেছে। সড়কের কাজের মান নিয়ে মন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণার পর সংগত প্রশ্নই উঠতে পারে এসব কাজের তদারকির দায়িত্ব কার বা কাদের? এ প্রশ্নও উঠতে পারে এখন কেন মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? নির্মাণের সময় এ প্রশ্ন তোলা হয়নি কেন?
সংগত বিবেচনা থেকেই মন্ত্রী মন্তব্য করেছেন কাজের মান নিম্নহলে চারলেন আটলেন যত লেনের কথাই বলা হোক তাতে জনগণের কোন উপকার হবে না। আর জনগণের কোন উপকার না হলে এসব সড়ক থেকে প্রকৃতই কোন উপকার পাওয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে এসব সড়ক থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে কোনকিছু যোগ হবার খুব বেশি কিছু নেই বরং এসব নিম্নমানের সড়ক-মহাসড়ক জতীয় অর্থনীতিতে আরেকটি বোঝায় পরিণত হবে। সুতরাং সড়ক-মহাসড়কের কাজের মান নিয়ে হেলাফেলা করার কোন সুযোগ নেই। কাজের মান নিয়ে খোদ মন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন সে প্রেক্ষিতে দেখার সময় এসেছে যারা এরজন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যদি ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে এক ধরনের দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেয়া হবে। এ ধরনের দুর্নীতির সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় সম্পদ নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা কোনভাবেই বরদাশত করা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।