পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের বর্তমান মোদি সরকারসহ গত দুইটি সরকারই কথা দিয়েছে। তবে এই ইস্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো সুখবর নেই বাংলাদেশের জন্য। চলমান ঢাকা সফরেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা তিস্তা ইস্যুটি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। যে কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন শেষ পর্যন্ত এই ইস্যুতে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের (বাংলাদেশ-ভারত) বন্ধুত্বে কাজ হচ্ছে না।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গতকাল সোমবার সকালে দুই দিনের সফরে ঢাকা আসেন। দুপুরেই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মন্ত্রণালয়ে। সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমকর্মীরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তিস্তা চুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নদী আপনারা (ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে) বললেন যে সব রেডি আছে, কিন্তু এতটা সময়েও এর কোনো সুরাহা হলো না। উনি (হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা) জানালেন, এ বিষয়ে কিছু অসুবিধা আছে ওনাদের। আশা করছেন, আগামীতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমি তাকে (ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) বললাম, আমরা গণতান্ত্রিক কাঠামোয় নির্বাচিত সরকার এবং জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। মানুষ এ নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করে। এক্ষেত্রে (তিস্তা চুক্তি) আমাদের বন্ধুত্বে কাজ হচ্ছে না। তিনি (ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) বললেন, তারা বিষয়টি দেখছেন।
আবদুল মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আরও বললেন, আমাদের আরও ছয়টি নদী আছে, সেটার আমরা মোটামুটি সমাধান করে ফেলেছি। আশা করছি যে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরে ভালো কিছু হবে। আপনাদের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) ভারত সফরে গিয়ে ফেনী নদীর পানি দিয়ে সহায়তা করেছেন। এখন আমাদের, ভারতের দরকার আপনাদের সহায়তা করা। আমি বললাম, দিস ইজ গুড। তিনি (শ্রিংলা) বললেন, এবারে আমরা (ভারত) আপনাদের প্রতিদান দিতে চাই।
তিস্তা ইস্যু বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতার কারণে ভারতের গত দুইটি সরকার এই ইস্যুটি ঢাকার সঙ্গে মিটিয়ে ফেলতে পারেনি। দ্বিতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে জিইয়ে থাকা তিস্তা ইস্যুতে সহজে সুখবর দিতে পারবে বলে মনে হয় না বলে জানায় একাধিক কূটনৈতিক সূত্র।
নয়াদিল্লির ক‚টনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এবারও তিস্তা ইস্যুতে বাধা হয়ে থাকবে পশ্চিমবঙ্গ। কেননা সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জয়ী হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে ব্যতিক্রম বলা চলে। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিজয়ের পর দলটি এবার আগামী ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের দুর্গ আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিস্তা ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্পর্শকাতরতা রয়েছে। তাই ভোটব্যাংক শক্তিশালী করতে বিজেপি তিস্তা ইস্যুতে অন্তত ২০২১ সালের আগে কথা বলার কথা নয়।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত বছরের ফেব্রæয়ারিতে ভারত সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ওই সফর নিয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি (শুক্রবার) যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। যৌথ বিবৃতিতেও দুই দেশের নদীর প্রসঙ্গটি উঠে আসে (রিভার শেয়ারিং)। তবে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার বিষয় তিস্তা নিয়ে সে বিবৃতিতে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। ঠিক একইভাবে চলতি ঢাকা সফরে এসেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা তিস্তা চুক্তির বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) আয়োজিত সেমিনারে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার কাছে গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকর্মীরা তিস্তা চুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।
জবাবে শ্রিংলা বলেন, পানিবণ্টন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, তা চলতি বছরেই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হবে। এরই মধ্যে পানি সংক্রান্ত দুই দেশের যৌথ কমিটি কাজ শুরু করেছে, যা অগ্রগতির একটি অংশ। ভারতের পানি সচিব গত আগস্টের ঢাকা সফরে দুই পক্ষ এই সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য বিনিময় করেছেন।
নদী নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব অনেক কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তিস্তা শব্দটি যেন মুখে আনতেই নারাজ তিনি। তাতে করে তিস্তা নিয়ে সুখবরের আশাও দুরাশা মনে হতেই পারে, যে ইঙ্গিত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছেন।
গত বছরের ৩১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি ও কিছু প্রত্যাশা’-শীর্ষক সেমিনারেই যেমন বলেন, ‘যারা বলেন যে খুব তাড়াতাড়ি তিস্তার সমাধান হয়ে যাবে, তাদের আগে নদী বিষয়টি বুঝতে হবে। ইংরেজি রিভার ও বাংলা শব্দ নদী এক বিষয় নয়। প্রবাহমান পানিরাশিতে আত্মা-প্রাণ ও শক্তি থাকলেই নদী হবে। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে দ্বিমত পোষণ করেন, তা এক অর্থে ঠিক আছে। কেননা তিস্তার উৎপত্তি সিকিম থেকে, সিকিম থেকে পানিটা পশ্চিমবঙ্গ সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু এই পানিপ্রবাহ পশ্চিমবঙ্গে আসার আগেই সিকিমে প্রায় ২০টি বাঁধ অতিক্রম করতে হয়। এতে করে পশ্চিমবঙ্গের আসার পর তেমন পানি থাকে না। তাই এ বিষয়ের সমাধান করতে হলে মূল জায়গাটি বুঝতে হবে, সেভাবে কাজ করতে হবে। এখানে মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।