পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। রাজনৈতিক কারণে বন্দী দলের প্রধান আইনি লড়াই জামিন পাবেন না বলে দলের সিনিয়র আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অনেকবারই স্বীকার করেছেন। রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন তিনি। এ সত্য জেনেও বার বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় ক্ষুব্ধ দলটির নেতাকর্মীরা। দলের সিনিয়র নেতাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব ও রাজপথে নামতে অনিহার কারণেই বেগম জিয়া মুক্ত হচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সিনিয়র নেতারা স্বীকার করেছেন যে, বিচার বিভাগ সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, রাজনৈতিক মামলায় আইনি লড়াইয়ে দেশনেত্রীর মুক্তি হবে না। কিন্তু বার বার তারা আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন এবং আদালতের প্রতি আস্থা রাখছেন। আর আদালত থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর প্রতিবারই নেতারা নামমাত্র বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়ে দায় এড়াতে চায়। আর এসব কর্মসূচিতে ঘুরে ফিরে কয়েকজন নেতাকেই দেখা যায়। অথচ পদ এবং প্রার্থী হওয়ার জন্য নেতাদের অভাব হয় না, কিন্তু আন্দোলন-কর্মসূচিতে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার বলেন, নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হতে চাইলেন সাড়ে ৪ হাজারের বেশি, তাদের মধ্যে ৩০০ জন মনোনয়ন পেলেন, নির্বাহী কমিটিতে আছেন প্রায় ৬ জন। এদের মধ্যে যদি ১০০জন প্রার্থী ও ৩০০ জন কেন্দ্রীয় নেতা রাজপথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তাহলে যেকোন আন্দোলন সফল হতে বাধ্য। সরোয়ার বলেন, দলের পক্ষ থেকে সার্কুলার জারি করা উচিত যাদেরকে পদ দেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যেককে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। পদের যে দায়বদ্ধতা সেটি দৃশ্যমান হতে হবে।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী রয়েছেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই মানববন্ধন, প্রতীকী অনশন, বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ করেছেন দলটির নেতারা। এই সময়ে তাকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, প্রার্থী হতে রেকর্ড সংখ্যক সাড়ে ৪ হাজার প্রার্থী, বিজয়ীরা শপথ গ্রহণও করেছেন অনেকেই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বার্তা দেয়া হয়েছে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা এসব করছেন। এরপরও নেতাকর্মীদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তি না হওয়ায় সভা-সমাবেশে কঠোর কর্মসূচির অঙ্গীকার করছেন। কিন্তু নির্বাচন, শপথ, সভা-সমাবেশ, আদালত ঘুরে ফিরে আসে কিন্তু দলের প্রধানের মুক্তি না হওয়ায় সিনিয়র নেতাদের এসব কথায় আর আস্থা রাখতে পারছে না কর্মীরা। বিক্ষোভ-মিছিল দিয়ে বেগম জিয়া কোনদিনই মুক্তি পাবে না, কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বাধ্য করার দাবি জানান তারা। দলের জেলা-উপজেলা, বিভাগীয় যে স্থানেই নীতিনির্ধারণী নেতারা সভা-সমাবেশে গেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা দাবি জানিয়েছেন কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার। জীবন বাজী রেখে তারা সেসব কর্মসূচি সফল করার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু দুই বছরেও কার্যকর কোন কর্মসূচি কিংবা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটির দায়িত্বে থাকা নেতারা। নেতাদের এমন নিরব ভূমিকায় অভিযোগ করে অনেকেই বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চান না বেগম জিয়া মুক্ত হন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, শেখ হাসিনা ভালো করেই জানে খালেদা জিয়াকে জামিন না দিলে দুই মিনিটের ঝটিকা মিছিল আর প্রেস কনফারেন্স ছাড়া বিএনপি কিছুই করতে পারবে না।
বিএনপি নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ নূর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লিখেছেন, বিএনপির হাইকমান্ডকে বলছি, এয়ার কন্ডিশনের ভিতরে আঙুল চুষেন। যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয়, তাহলে এর দায় সরকার নয়, আপনাদেরকে নিতে হবে। লোকমান হোসেন নামে আরেক কর্মী লিখেছেন, খালেদা জিয়া যদি আইনিভাবে বন্দী হতেন তাহলে আইনিভাবে মুক্তি পেতেন। আইনের মাধ্যমে কখনো উনাকে মুক্তি করা সম্ভব না। এটা নেতাদের বুঝতে হবে।
অথচ রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের নেতা হয়ে ওঠেছিলেন বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠনের পর দলটির অনেক নেতাই আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন। যে নেত্রীর বদান্যতায় অনেকেই এমপি-মন্ত্রী, ধন-সম্পদের মালিক বনেছেন সেই নেতাদের অনেককেই এখন রাজপথে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে যে ৮জন এমপি হয়েছেন তারাও গত এক বছরে কোন সভা-সমাবেশ-কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। মুন্সিগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বশির উদ্দিন বলেন, কর্মসূচি দিলে একজন নেতাও আসবে না। আমরা সত্যিই অভাগা এক নেত্রীর কর্মী। যিনি শুধু দিয়েই গেছেন, পেলেন শুধু লজ্জা আর অপমান, জেল-জুলুম।
এমপিদের অবস্থানের সমালোচনা করে ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আহসান উদ্দিন খান শিপন বলেন, আগামী শনিবার বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলে দলের মহিলা ও পূরুষ এমপিদের দেখতে চাই। শাহেদ আলম নামে এক ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখেছেন লিখেছেন, ওরা এমপি হতে এসেছেন, রিস্ক নিতে না। ছাত্রদলের গত কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ এরশাদ খান লিখেছেন, তারা যদি কর্মসূচিতে আসেন তাহলে এসি রুমে থাকবে কারা?
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু লিখেছেন, এমপি তো ৮জন। বাকী ৮০০ কই? শুধু বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও সাবেক এমপিরা রাস্তায় নামলেই হাজার হাজার লাখ লাখ কর্মী সমর্থক রাস্তায় নেমে আসবে। তবেই রাজপথ হবে উত্তপ্ত, জনগণ হবে ক্ষিপ্ত। খালেদা জিয়া হবে মুক্ত। মামুন শিকদার নামে বাগেরহাটের ছাত্রদলের এক নেতা লিখেছেন, বিক্ষোভ-মিছিল চাই না, আমরা চাই সারা দেশব্যাপী লাগাতার হরতাল-অবরোধ। এছাড়া দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। কর্মসূচি দিলে তিনি মাঠে নামবেন কিনা এক নেতা প্রশ্ন করলে মামুন বলেন, আমাদের বাগেরহাট জেলার বিএনপির সিনিয়র নেতারা যদি রাজপথে নামে তাহলে অবশ্যই তিনি নামবেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বার বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়া এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ভূমিকার সমালোচনা করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সর্দার নূরুজ্জামান বলেন, আদালতের ভিতরে উনারা শ্লোগানে শ্লোগানে ফাটিয়ে তুলছেন আর ক্যামেরার সামনে কে আগে দাঁড়াবে সেই প্রতিযোগিতায় কুস্তি লড়ছেন। এতো পারেন তাহলে আদালত বর্জনের ডাক দেননা কেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা? পাকিস্তানের আইনজীবীরা পারলে আপনারা পারবেন না কেন? কারণ পাকিস্তানের আইনজীবীদের দেশপ্রেম আছে, উনারা অর্থবিত্তের এতো চিন্তা করেন না। কিন্তু আপনারা আছেন অর্থ আর পদের ধান্দা নিয়ে। পারলে এখনই আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলুন, তাহলে দেশমাতাকে আমরা এই অবৈধ সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করতে পারবো।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দলে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের জবাবদিহিতার কোন উদ্যোগ নেই। যারা নেবেন তারাও কতটা সামনে আছেন? বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব ছিল সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, কিন্তু তারা নিজেরাই অনাগ্রহী। কিছু অভিযোগ করা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যা বলেন সেটি পালন করা ছাড়া নিজেরা উদ্যোগী হয়ে দলের জন্য কেউ কোন কাজ করেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।