২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
নাকডাকা নিয়ে যত গল্পকথা বা রসিকতা থাকুক না, আদতে এটি মজার ব্যাপার নয়। কারণ নাকডাকার সমস্যা নিয়ে ইএনটি বিশেষজ্ঞের চেম্বারে বা হাসপাতালে আসা রোগীদের সংখ্যা নিত্য বাড়ছে।
প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, নাকডাকাকে এক কথায় অসুখ বলে দেওয়া ঠিক নয়। নাকডাকার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যে কারনগুলি সমস্যা তৈরী করতে পারে সেগুলো নিয়ে চিকিৎসকরা ইনভেস্টিগেশন এবং পরবর্তী চিকিৎসার দিকে অগ্রসর হন।
নাক কেন ডাকে: নিশ্বাস প্রশ্বাসের পথে বাধার জন্য নাক ডাকে। তালুর দুটি অংশ- একটি কোমল, অন্যটি শক্ত। প্রশ্বাসের জন্য টেনে নেওয়া বাতাস অবাধ গতিপথ না -পেলে তালুর কোমল অংশে ধাক্কা দেয়। ফলে ওই অংশের ঘন ঘন কম্পন হয়। তখনই নাক ডাকতে শুরু করে।
কাদের নাক ডাকে: নাক সবার ডাকে না। নাকের বা তালুর সমস্যা যাঁদের রয়েছে তাঁদের নাক ডাকে। এছাড়া যাঁরা স্থূলকায়, হ্রস্ব গ্রীবা, মদ্যপানে অভ্যস্ত এবং তার ফলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হন যাঁরা, তাঁদের নাক বেশি ডাকে। আর, নাকডাকার ব্যাপারে মেয়েদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন পুরুষরাই। মেয়েদেরও নাক ডাকে, তবে তুলনায় অনেক কম।
কী কী সমস্যা হতে পারে : যাঁর নাক ডাকে তাঁর শারীরিক সমস্যা হলেও মানসিক সমস্যা হয় না। কারণ নাকের ডাক তিনি শুনতে পান না। সমস্যা হয় তার পাশের মানুষটির। তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত হয়। বিদেশে এ কারনে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত হলেও আমাদের সমাজে ততখানি সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে শয্যাসঙ্গী বা সঙ্গিনীর নিত্য অসন্তোষ কার আর ভালো লাগে? মানসিক সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে এখান থেকে। অর্থাৎ যাঁর নাক ডাকে তিনি হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন।
শারীরিক সংকট: নাকডাকার যেটা বড়ো সমস্যা তা হল বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া। নাকডাকা প্রবল সংকটও ডেকে আনতে পারে। ফলে রাতে গভীর ঘুমে মগ্ন একজন মানুষ বিপন্নতার শিকার হতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, শরীরে যতখানি অক্্িরজেনের প্রয়োজন ততখানি শরীর নিতে পারে না। অর্থাৎ নাক তার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়। সহজে প্রয়োজনীয় বাতাস না-ঢোকায় শ্বাসনালীর কোমল পেশিগুলো সংকুচিত হয়। ফলে ফ্যারিংসের আয়তন ছোট হয়ে যায়। তখন অক্সিজেন কম সরবরাহ হয়। নিঃশ্বাসের কষ্ট শুরু হয়। রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। দমবন্ধ হয়ে আসে। রোগী তখন ধড়ফড় করে ওঠে এবং ঘুম ভেঙ্গে যায়। অপর্যাপ্ত অক্সিজেন নিয়ে শরীর দীর্র্ঘ সময় কাজ চালানোর ফলে ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যায়। বার বার ঘুম ভাঙ্গার ফলে ক্লান্তি মোচন হয় না। বরং ঘুম ঘুম পায়। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে ইনটেলেকচ্যুয়াল বিহেভিয়ার চেঞ্জ হয়। বলা যায় একটা মানুষের ব্যক্তিত্বই পালটে যেতে পারে। ধীরে ধীরে এক ধরনের মানসিক অবসাদ তাকে গ্রাস করতে থাকে। অক্সিজেন ঘাটতির ফলে কখনো কখনো রক্তসল্পতাও দেখা দেয়।
নাকের গঠনগত ক্রটি ও অন্যান্য কারন এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। অনেকের নাকের পার্টিশন বাঁকা থাকে, অনেকের নাকের মাঝখানে পর্দা একপাশে অনেকখানি সরে থাকে, এছাড়া পলিপ থাকার জন্য তো সমস্যা হয়ই। বাচ্চাদের নাকের পেছনে টনসিল থাকলে এবং তা বাড়লে শিশুদেরও নাকডাকার সমস্যা দেখা দেয়। নাকের এসব গঠনগত ক্রটি না-থাকলেও নাক ডাকতে পারে। শ্বাসনালীর কোনো ইনফেকশন হলে যার নাক কোনোদিন ডাকেনি তার নাকও ডাকতে শুরু করে।
সমস্যা যে ধরনের হোক না কেন, নাকডাকা কখনোও কখনোও কাউকে কাউকে সংকটজনক অবস্থার মুখে ঠেলে দিতে পারে। অক্সিজেন ঘাটতি হয়ে হার্ট ও ব্রেনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়ে ব্রেন অ্যাটাক বা হার্টের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে রেগীকে সংকটে ফেলতে পারে। সেজন্য নাকডাকা রোগী এলে চিকিৎসক আগে বুঝে নিতে চান সে কোন স্তরে পড়ছে। নির্দোষ নাকডাকা না বড় কোনো কারণে নাকডাকা, সমস্যাহীন নাকডাকা না সংকটপূর্ণ নাকডাকা তা আগে পরীক্ষা- নিরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেন।
প্রতিকার: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসার দরকার হয় না। কিছু অভ্যাসের পরিবর্তনেই উপকার পাওয়া যায়। শোওয়ার ধরন পালটালে দেখা যায় নাক ডাকা বন্ধ হয়। ধনী দেশগুলিতে এক ধরনের জ্যাকেট পাওয়া যায়। যেটা পরে শুয়ে পড়লে একই পজিশনে বেশিক্ষণ ঘুমানো যায় না, ঘুমের মধ্যে অজান্তেই পাশ ফিরতে হয়। এছাড়া ওজন কমাতেই হবে। স্থূলকায়দের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে ওজন কমালে সমস্যা দূর হবে। তবে, মদ্যপান একেবারে বন্ধ করতে হবে। যাঁরা ঘুমের ওষুধ খান, এই সমস্যা তাঁদের বেশি হয়। সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে ঘুমের ওষুধ কমানো বা বন্ধ করার কথা ভাবা যেতে পারে। এ সবেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তখন বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা: সমস্যাবহুল নাকডাকার জন্য যেসব রোগী আসেন তাদের ক্ষেত্রে আগে জেনে নেওয়া দরকার নাকডাকা তাদের কতখানি বিপদে ফেলতে পারে। তার জন্য দরকার রক্তের পরীক্ষা। প্রেসার চক আপ তো করাই হয়। শরীরে অক্সিজেন ঢোকার পথে বাধার উৎস কোথায়, বাধাটাই বা কী ধরনের তা জানার জন্য পলিসমনোগ্রাফি নামে একটা পরীক্ষা করানো হয়। এত অনেকগুলো ছোট ছোট পরীক্ষা থাকে। তাতে মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায় সমস্যার উৎসটি। সেইভাবে চিকিৎসকরাও তাদের চিকিৎসা শুরু করে দেন।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।