পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বছর হঠাৎ করেই ক্যাসিনো জুয়া ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে যেসব ব্যক্তি ধরা পড়ে তাদের ব্যক্তিগত জীবনালেখ্য সিনেমার গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর বলে প্রতীয়মান হয়। কয়েক বছর আগেও যারা নগণ্য রাজনৈতিক কর্মী এবং সমাজের অতি সাধারণ মানুষ হিসেবে গণ্য ছিল অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তারা কেউ সম্রাট, গডফাদার বা মাফিয়া ডনে পরিণত হয়। তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারগুলোতে টর্চার সেল, মাদকের বার, আগ্নেয়াস্ত্র ও নগদ অর্থের ভান্ডার বেরিয়ে আসে। সরকারি দলের পদ-পদবি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে বলে ভাবতে শুরু করেছিল। এদের মাধ্যমে একদিকে নানাভাবে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে দেশের অর্থনীতি ফোঁকলা হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চরম সামাজিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অবক্ষয়ে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে দেশ। নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার বেপরোয়া জীবন, প্রাচুর্য ও অপরাধের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নানা অভিযোগে যুবলীগ-ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত ও আটককৃতদের পাশাপাশি যুব মহিলা লীগের অপরাধপ্রবণ অংশের এটা বাস্তব উদাহরণ।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একশ্রেণির নেতা-কর্মীর অপরাধ জগতের ফিরিস্তি প্রতিদিনই গণমাধ্যমে উঠে আসছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রভ‚ত সাফল্য ও অর্জন রয়েছে। কিন্তু সরকারি দলের দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের অপকর্মে বড় বড় অর্জনও জাতির সামনে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্যাসিনো জুয়া ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত কেউ কেউ ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। র্যাবের অভিযানের সময় জব্দ হওয়া অর্থ, মাদক, অস্ত্র ও সম্পদের কিছু তথ্য বেরিয়ে এলেও সঞ্চিত ও পাচারকৃত সম্পদ ও অপরাধ জগতের সামগ্রিক চালচিত্র এখনো সাধারণের অজানা। এরা সরকারি দলের তৃতীয় বা চতুর্থ সারির নেতা। এদের নেপথ্যের শক্তি হিসেবে যেসব এমপি-মন্ত্রীসহ বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তাদের নামও কথিত হয়। উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে এসব তথ্য বা গুজবের সত্য-মিথ্যা তুলে ধরা এবং নেপথ্যের নায়কদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারলে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে খালেদ মাহমুদ, ইসমাইল হোসেন সম্রাট, জি কে শামীম বা মক্ষিরানী পাপিয়ারা পাপের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে তারা যদি নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে বলে ভাবেন, তাহলে তাদের ছত্রছায়ায় নতুন নতুন চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্যাসিনো কারবারি গডফাদার বা পাপিয়ার মতো মক্ষিরানী সৃষ্টি হবেই।
দুর্নীতি, মাদক ও ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ত্রাসী-দুর্নীতি বাজের কোনো দল নেই, নিজ দলের নেতাকর্মী হলেও তাদের ছাড় না দেয়ার যে অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী জাতির সামনে রেখেছেন তারই বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। র্যাবের অভিযানে এ যাবৎ যারা ধরা পড়েছে তাদের প্রায় সবাই সরকারি দলের নেতাকর্মী। ছাত্রলীগ-যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা বহিষ্কার, গ্রেফতার হওয়ার পরও পাপিয়াদের পাপের সাম্রাজ্য বন্ধ হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের অপরাধপ্রবণ, দখলবাজ, চাঁদাবাজ নেতাকর্মী কমবেশি সারাদেশেই আছে। স্থানীয় এমপি ও দলের প্রভাবশালী নেতা, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির স্থানীয় কর্মকর্তার যোগসাজশে এমন দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক প্রভাব বলয় গড়ে উঠতে দেখা যায়। মাঠের হোতারা ধরা পড়লেও অন্যরা জবাবদিহিতার বাইরে থাকলে এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। চুনোপুঁটিদের ধরলে হবে না, রাঘব বোয়ালদেরও ধরতে হবে। দলের পদ-পদবি দেয়ার আগে এবং পরে এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া এবং সমাজবিরোধী অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত করা প্রয়োজন। গুরুতর বহুমাত্রিক অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর দল থেকে বহিষ্কার করাই যথেষ্ট নয়। দলের নাম ভাঙিয়ে যারা সারাদেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিছু দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির কারণে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল এবং রাষ্ট্র বিশৃঙ্খলা ও বিচারহীনতায় নিমজ্জিত হোক, এটা কারো কাম্য নয়। পাপিয়াদের উত্থান রুখতে হলে তাদের নেপথ্যের পৃষ্ঠপোষকদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।