পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঝালকাঠির নেছারাবাদ দরবার শরীফে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ও ওয়াজ মাহফিল সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সকালে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন উপমহাদেশের বুযুর্গ-ওলী, দার্শনিক ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান কায়েদ সাহেব হুজুরের একমাত্র সাহেবজাদা আমীরুল মুসলিহীন মাওলানা খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর।
আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করা হয়। জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করা হয় মোনাজাতে। মোনাজাত শুনে মুসল্লিরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। আল্লাহ আল্লাহ ধ্বনিতে মুখরিত ছিল পুরো মাহফিল ময়দান। আখেরি মোনাজাতের আগে বাদ ফজর সমাপনী বয়ানে নেছারাবাদী হুজুর বলেন, কেয়ামতের শাস্তি ভয়ংকর। এ শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে হলে পরিপূর্ণ ইমানদার হতে হবে, নামাজ শুদ্ধভাবে আদায় করতে হবে।
মাওলানা খলীলুর রহমান বলেন, যাদের অর্থায়নে ও ত্যাগে মাহফিল সম্পন্ন হয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ আপনি কবুল করে নেন। তিনদিন যারা মাহফিলের জন্য পরিশ্রম করেছেন, তাদের নেক আশাগুলো আল্লাহ আপনি পূরণ করে দিন। মুসলিহীনের নেতৃবৃন্দ মাহফিলে অনেক কষ্ট করেছেন, মেহমানদের খেদমত করেছেন যারা, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ আপনাদের খেদমতকে কবুল করুন।
নেছারাবাদী হুজুর আরো বলেন, যাহেরী ও বাতেনী দুশমন এবং বিঘ্ন-বিপদ ও প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করার জন্য যাহেরী ও বাতেনী সর্বপ্রকার শক্তি সঞ্চয় করার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। তাই আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তাদের মোকাবেলা করার নিমিত্তে যথাসাধ্য শক্তি সঞ্চয় কর’।
সুতরাং ইসলামী জিন্দেগী যাপনকারীর জন্য যে সকল শক্তি অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন তন্মধ্যে ঐক্য, সংহতি ও সংঘবদ্ধতা একটি প্রধান শক্তি। অতএব, ইসলামী জিন্দেগী যাপনকারীকে এই শক্তিও অবশ্যই অর্জন করতে হবে। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা দ্বীন-ইসলামকে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’
রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মুসলমানদেরকে হামেশা দ্বীনের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করার জন্য বিশেষভাবে তাম্বীহ ও তাকীদ করে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দ্বীনের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ ও দলবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করা যাতে আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয় তার জন্য দৈনিক পাঁচবার নামাযসহ জুমা, ঈদ ও হজ প্রভৃতি ইসলামের প্রধান প্রধান রোকনসমূহে জামায়াতকে অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে। রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তি কোন স্থানে অবস্থান করলে তাদের একজনকে আমীর নির্বাচন করে জামাত করতে হবে।’
এ হাদীস দ্বারা আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি যে, ইসলামে সংঘবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব কত বেশি। বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নির্জন প্রান্তরেও তিনজন লোক থাকলে সেখানে একজনকে আমীর না বানিয়ে থাকা জায়েয নেই।’ আসুন, আমরা দল-মত-ছেলছেলা নির্বিশেষে ‘ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ’ নীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঈমান ও ইসলামকে রক্ষা করি।
উল্লেখ্য, গতকাল বাদ ফজর লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লির উপস্থিতিতে হযরত নেছারাবাদী হুজুর দুই দিনব্যাপী মাহফিলের তানফীযী বয়ান ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতে হুজুর নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসীর মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া করেন। আখেরি মোনাজাতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ সাইয়্যেদ, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বির আহম্মেদ মোমতাজী, পিএইচপি কুরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাফেজ ক্বারী মো. আবু ইউসুফ, হযরত শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)-এর সাহেবজাদা হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন সাহেব এবং হযরত নেছারাবাদী হুজুরের সাহেবজাদা ও বাংলাদেশ ফোরকানিয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আযীযুর রহমান তাকী (ছদর ছাহেব হুজুর) উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।