Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভর্তির জন্য ডোপটেস্ট একটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আগে ডোপটেস্ট বা বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশক্রমে মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। গত রোববার জাতীয় সংসদে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে, এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই ডোপটেস্টে উর্ত্তীর্ণ হতে হবে। স্মরণ করা যেতে পারে, দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতাধীন সকল অধিদফতর ও সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সকল শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে ডোপটেস্ট অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে বলে জানা গেছে। মাদক, বলা বাহুল্য, দেশের জন্য মারাত্মক অভিশাপ হিসাবে দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায়, চাকরির ক্ষেত্রে কিংবা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করা অত্যন্ত সহযোপযোগী ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত হিসাবে গণ্য হওয়ার দাবি রাখে।

মাদকের উৎপাদন, অনুপ্রবেশ, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা ও সেবন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকার মাদকের উৎপাদন-অনুপ্রবেশের পরিমাণ কত, কীভাবে মাদকসমগ্রী সেবনকারী পর্যায়ে পৌঁছে এবং দেশব্যাপী মাদকসক্তের সংখ্যা কত এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বা নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। দেখে শুনে কেবলমাত্র ধারণা করা যায়। মাদকসামগ্রীর দেশীয় উৎসেব চেয়ে বিদেশী উৎস যে অনেক বেশি শক্তিশালী, তাতে সন্দেহ নেই। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে স্রােতের মতো মাদক আসছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিস্তর রির্পোট প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে ভারত ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেন্সিডিল ও ইয়াবার বিপুল সংখ্যক কারখানা গড়ে উঠেছে, এটা সংবাদপত্রপাঠকদের কারো অজানা নেই। কদিন আগে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা ফেন্সিডিল কারখানা সম্পর্কে জানাজানি বেশি হওয়ায়, কারখানাগুলো বিহার অঞ্চলে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইয়াবার প্রধান উৎস মিয়ানমার হলেও ভারত থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইয়াবা অনুপ্রবেশ করে। অন্যান্য মাদকও প্রধানত মিয়ানমার ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। সমুদ্রপথেও কিছু মাদক আসে বিভিন্ন দেশ থেকে। বাইরে থেকে আসা মাদক একটি সুনিয়ন্ত্রিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে কেবল মাদক বহনকারী ও কারবারিরাই জড়িত নয়, অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী ও বিত্তবৈভবের অধিকারী একটি শ্রেণী, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের একাংশও এই নেটওয়ার্কভুক্ত। ফলে মাদকের দৌরাত্ম্য ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা কত জানা যায় না। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা ৮০ লাখ থেকে এক কোটি হতে পারে। মাদকসেবীর বয়সের কোনো বাছবিচার নেই। কিশোর থেকে বৃদ্ধ-সব বয়সী মানুষই এর মধ্যে রয়েছে। এক খবরে প্রকাশ, প্রতিদিন ১১৪ জন মাদকসেবী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, মাদকাসক্তের সংখ্যা কত এবং কীভাবে এ সংখ্যা বাড়ছে।

মাদকাসক্তের বড় অংশই যে তরুণ বা যুবক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তরুণের সংখ্যা বেশী হওয়ার অন্যতম কারণ এই হতে পারে যে, মাদকাসক্তির দিক দিয়ে কিশোররাও পিছিয়ে নেই। কিশোর থেকেই তো তরুণ; সুতরাং তরুণের সংখ্যা বেশি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যেও ক্রমবর্ধমানহারে মাদকাসক্তি বাড়ছে। আমরা জাতির ভবিষ্যত বলে যে শিশু-কিশোর ও তরুণদের কথা উল্লেখ করি, তাদের একটি বড় অংশই মাদকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ মাদকাসক্তির শিকার। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতেও মাদকাসক্তের সংখ্যা কম নয়। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম মাদকে নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাদককে না বলা বা মাদককে রুখে দেয়ার জন্য নানা কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। মাদকবিরোধী লাগাতার অভিযানে কয়েক’শ মাদক কারবারি আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। তারপরও মাদকের কারবার এতটুকু কমেনি। আমরা বহুবার বলেছি, আবারও বলছি মাদকমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়তে হলে মাদকের উৎপাদন-অনুপ্রবেশ, বাজারজাতকরণ ও বেচাকেনা ডেডস্টপ করতে হবে। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মাদকাসক্তদেরও রেহাই দেয়া যাবে না। আমাদের মতো দেশ ও সমাজে মাদকের এই ব্যাপক বিস্তার ও ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। আমাদের ধর্মে সর্ব প্রকার মাদকদ্রব্য সেবন ও গ্রহণ হারাম। সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধের শক্ত অবস্থান থাকলে এ অবস্থা হতে পারতো না। অতএব, সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নিলে আপনা আপনিই মাদক প্রতিরুদ্ধ হয়ে যাবে। সরকারি-বেসরকারি চাকরি ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপটেস্টে উর্ত্তীণ হওয়া বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত মাদক প্রতিরোধে বড় রকমের ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমরা মনে করি। সঙ্গতকারণেই আমরা আশা করবো, ডোপটেস্ট যাতে যথাযথ স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকাসক্ত


আরও
আরও পড়ুন