পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিরিবিলি পরিবেশ মুগ্ধ করবে সবাইকে। অনেকেই বাইরের চাকচিক্য দেখে আকৃষ্ট হয়ে স্বজনদের ভর্তিও করতেন সেখানে। কিন্তু বাইরের চাকচিক্যের ঠিক উল্টো চিত্র ছিল পুনর্বাসন কেন্দ্রটির ভেতরের কার্যক্রম। ভর্তির পর রোগীদের ওপর চালানো হতো নির্যাতন। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে মাদক ব্যবসা, রোগীদের শারীরিক নির্যাতন, রোগীদের জিম্মি রেখে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা, যৌন হয়রানি, মালিক ও কর্মচারীদের মাদক সেবন যেন ওপেন সিক্রেট ছিলো। দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হওয়া এ অপরাধের স্বর্গরাজ্যের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে গুন্ডা বাহিনী দিয়ে করা হতো অমানবিক নির্যাতন।
গত মঙ্গলবার বিকালে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২ এর একটি দল পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে অভিযান চালিয়ে এটির মালিক নাজনিন ফিরোজা বাঁধনসহ ৫ জনকে গ্রেফতার ও একজন চলচ্চিত্র অভিনেতাসহ ২৮ জনকে উদ্ধারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র্যাব। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, মালিক বাঁধনের স্বামী মনোয়ার হোসেন ওরফে সিপন, কর্মচারী রায়হান খান, দিপংকর শাহ ওরফে দিপু ও জাকির হোসেন আনন্দ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা, নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্টিলের পাইপ, হাতকড়া, রশি, গামছা, খেলনা পিস্তল ও কথিত সাংবাদিকের পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বছিলা র্যাব-২ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ১ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির’ পক্ষ থেকে র্যাব-২ এর কাছে অভিযোগ করা হয়, একজন চিত্রনায়ক দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রমে অনুপস্থিত রয়েছেন। পরে তারা জানতে পারেন, চিত্রনায়ককে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। পরে অভিযোগের সত্যতা পায় তারা এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটির ব্যাপক অনিয়মের সম্পর্কে জানতে পারে। এর ধারাবাহিকতায় পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে অভিযান পরিচালনা করে চিত্রনায়কসহ ২৮ জনকে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার ফিরোজা নাজনিন বাঁধন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানান, তিনি ২০০৯ সালে ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটি অনুমোদনহীনভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০১৩-২০১৪ সালে সাময়িক অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি। তিনি দাবি করেন, এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি নিজেই। এর কর্মী ৪ জন এবং রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ২৮ জন। তিনি ভবনটির ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন।
ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে র্যাব জানতে পারে, ফিরোজা নাজনিন বাঁধন প্রতি রোগীর কাছ থেকে মাসিক চার্জ হিসাবে ১০-৩০ হাজার টাকা করে আদায় করতেন। নিরাময় কেন্দ্রে ২ জন চিকিৎসক থাকার কথা বললেও কোনো চিকিৎসককে সেখানে পাওয়া যায়নি। সেখানে ২০ জন রোগীর চিকিৎসার অনুমোদন থাকলেও ২৮ জন রোগী পাওয়া যায়। উদ্ধার করা ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা করার কথা, চিকিৎসা দেয়ার কথা, রোগীদের সেবা করার কথা, তা এখানে করা হয় না।
ভিকটিম এবং তাদের স্বজনরা মালিক ফিরোজা নাজনিনের বিরুদ্ধে নিরাময় কেন্দ্রে রোগীদের চিকিৎসার নামে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এখানে চিকিৎসার নামে রশির সাহয্যে ঝুলিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হতো বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। ভিকটিম ও কর্মচারীরা জানান, এখানে খাবারের মান অত্যন্ত নিম্ননের। তাছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যে সব নির্দেশনা দিয়েছে, তা এখানে বাস্তবায়ন করা হয় না। গ্রেফতার নিরাময় কেন্দ্রের মালিক এবং কর্মচারীদের তৎক্ষণিক ডোপ টেস্টে প্রমাণ পাওয়া যায় তারা সবাই মাদকাসক্ত। পাশাপাশি এলাকার মাদক সেবীদের কাছে বিভিন্ন মাদক বিক্রি করতেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।