মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের প্রাক্কালে জোর কানাঘুঁসা চলছে যে, মোহনদাসের চেয়ে মমতাজ মহলের টানই কি বেশি ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের কাছে! স্থির ছিল, আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে নেমে সোজা সবরমতী আশ্রমে যাবেন ট্রাম্প দম্পতি। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত আশ্রমে আধ ঘণ্টা কাটিয়ে মোতেরা স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠান। তারপর তারা রওনা হবেন আগরায়, তাজমহল দর্শনে।
সূত্রের খবর, শেষ মুহ‚র্তে পরিবর্তন না-হলে ট্রাম্প দম্পতির পূর্ব নির্ধারিত সবরমতী আশ্রম সফর বাতিল হতে পারে। গতকাল বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। ট্রাম্পের না-আসার ইঙ্গিত পাওয়ার পর এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউস চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা শিগগিরই ভারত সরকারকে জানানো হবে। কেন সবরমতী আশ্রমের অনুষ্ঠান বাতিল করার কথা ভাবছে ওয়াশিংটন? কূটনৈতিক সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী প্রথম কারণটি হল, মেলানিয়া ট্রাম্প সূর্যাস্তের সময়ে তাজমহল দেখতে উদ্গ্রীব। আহমেদাবাদে বেশি সময় কাটালে যদি বিমানে আগরা পৌঁছতে দেরি হয়! সূর্য পাটে নামার আগেই তাজমহলে পৌঁছতে চান বলে জানিয়েছেন মেলানিয়া। সম্ভবত তাই আহমেদাবাদে অনুষ্ঠানের সময় কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে হোয়াইট হাউস।
অন্য কিছু কারণেও এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক সপ্তাহ আগেই গুজরাতে গিয়েছেন আমেরিকার গোয়েন্দারা। সব দিক দেখে সবরমতী আশ্রম প্রিজার্ভেশন অ্যান্ড মেমোরিয়াল ট্রাস্টকে তারা অনুরোধ করেছিলেন, নিরাপত্তার কারণে এক দিন আগেই আশ্রম বন্ধ করে দিতে।
সূত্রের খবর, রাজি হননি ট্রাস্টের সদস্যেরা। এ ছাড়া, আশ্রমের সামনের চত্বরটা বাঁধানো নয়, নরম মাটির। আশ্রমের কাছে পর্যন্ত ট্রাম্পের কনভয় পৌঁছবে না, সে ক্ষেত্রে অনেকটাই হেঁটে যেতে হবে তাঁদের। ফলে মেলানিয়ার (বিশেষত তিনি যে ধরনের পয়েন্টেড হিল পরেন) হোঁচট খেয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন মার্কিন কর্তারা।
তবে সবরমতী যদি না-ও যাওয়া হয়, বাকি অনুষ্ঠানকে সফল করতে আহমেদাবাদে সাজো সাজো রব। আর সেই খবর যে কিছুটা চড়া হয়ে অতলান্তিক পার হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে খোদ ট্রাম্পের মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘আমি শুনেছি এক কোটি মানুষ হবে (আহমেদাবাদে)। ওঁরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর থেকে বিশ্বের বৃহত্তম স্টেডিয়াম পর্যন্ত ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ থাকবেন’। এই অবিশ্বাস্য সংখ্যাটি ট্রাম্প কোথা থেকে পেলেন, তা নিয়ে অবশ্য নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করছে সাউথ ব্লক।
গুজরাত সরকার সূত্রের খবর, আহমেদাবাদের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। বিমানবন্দর থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারের রাস্তায় এক থেকে দু’লাখ মানুষকে দাঁড় করানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাজির করতে সমস্ত স্কুল-কলেজকে অনুরোধ করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনগুলির সঙ্গেও। নিরাপত্তার প্রশ্নটি যেহেতু বড়, তাই রাস্তার দু’ধারে দাঁড়ানোর জন্য লোক বাছাই করে, পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে ‘পাস’ দেয়ার কাজ চলছে।
তবে সূত্রের খবর, খোলা জিপে নয়, বুলেটপ্রুফ কাচের লিমুজিনের ভিতর থেকেই হাত নাড়বেন ট্রাম্প। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়ার সফর উপলক্ষে মোঘল সম্রাট শাহজাহান ও তার স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধিসৌধে তথা তাজমহলে চলছে কাদামাটির প্রলেপ থেরাপি।
যেহেতু দু’জনকে এখানে ৩৬৮ বছর আগে সমাধিস্থ করা হয়েছিল (১৬৩১ সালে মমতাজ মহল এবং ১৬৬৬ সালে শাহজাহান), এই প্রথম তাদের কবরগুলির প্রতিলিপিগুলি পরিষ্কার ভাবে দেখতে পরিষ্কার করা হচ্ছে। বাদশাহ দম্পতির আসল কবরগুলি তাদের ফলস মার্বেল রেপ্লিকার অনেক নিচে একটি কক্ষে রয়েছে। শাহজাহানের উরস-এর সময় যারা যিয়ারতে আসে তাদের জন্য প্রকৃত কবরগুলি বছরে মাত্র তিন দিনের জন্য খোলা হয়। আসল সমাধিসৌধ ২২টি সরু সিঁড়ির নিচে অবস্থিত এবং অতীতে বিদেশী কোন গণ্যমান্য ব্যক্তি আসল কবরগুলি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
এটি নিশ্চিত করে ভারতের প্রত্মতাত্তি¡ক সমীক্ষা (এএসআই) সুপারিন্টেন্ডিং প্রত্মতত্ববিদ (বিজ্ঞান শাখা), এম কে ভটনগর বলেন যে, সমাধিসৌধের চিকিৎসা গত সপ্তাহে শুরু হয় এবং শুক্রবার সন্ধ্যা অবধি শেষ হয়। ক্লে-প্যাক চিকিৎসা একটি ঐতিহ্যবাহী মিশ্রণের উপর ভিত্তি করে যা ভারতীয় মহিলারা মুখের প্রাকৃতিক আলোককে পুনরুদ্ধার করতে ব্যবহার করেন।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘চুনযুক্ত কাদামাটির একটি পুরু স্তর আক্রান্ত অংশের উপরে প্লাস্টার করা হয় এবং শুকনো রেখে দেয়া হয়। এটি শুকিয়ে গেলে ফ্লেক্সগুলি একটি নরম ব্রাশ দিয়ে পৃষ্ঠ থেকে সরানো হয় এবং পাতলা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়।
কবরের উপরে স্থাপন করা বিশাল ব্রাসের ঝাড়বাতিও ‘তেঁতুলের পানি’ দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। রাজকীয় গেটে লাল বেলেপাথরের প্ল্যাটফর্ম, চামেলি মেঝে, কেন্দ্রীয় ট্যাঙ্ক এবং স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে ঝর্ণার পথগুলির পাশগুলিও পরিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি, এএসআই দেয়াল এবং মেঝেতে থাকা অন্ধকার দাগগুলি অপসারণের জন্য স্মৃতিসৌধটি ব্যাপকভাবে পরিষ্কার করেছে।
এর আগে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি), কানপুর, এএসআই এবং মার্কিন-ভিত্তিক জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আটলান্টা) এবং উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাডিসন) তাজমহলকে বিকৃত করার পেছনের কারণগুলি অনুসন্ধান করার জন্য একটি যৌথ সমীক্ষা প্রকাশ করেছে।
স্মৃতিসৌধের ক্ষতি হওয়ার পিছনে বায়ু দূষণই আসল কারণ। তাদের রিপোর্টটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ অনুসারে, বিজ্ঞান শাখা মিনারসহ তাজমহলের পুরো প্রধান সমাধিস্থলের জন্য ক্লে প্যাক থেরাপি ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক পরিষ্কার কাজ করে আসছে।
স্মৃতিস্তম্ভটিতে অতীতে পাঁচবার কাদামাটির চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে প্রথম কাদামাটি চিকিৎসা করা হলেও, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি ২০০১ এবং ২০০৮ সালে দেয়া হয়েছিল। বিশ্ব ঐতিহ্য ভবনের অভ্যন্তরের দেয়ালকে দর্শনার্থীদের ফেলে আসা কয়েক দশকের পান ও গুটখার দাগ থেকে মুক্তি দিতে ২০১৪ সালের মে মাসে একবার পরিষ্কার কাজ পরিচালনা করা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাজমহলের চারটি মিনার এবং উত্তর পাশে আবার তাজা কাদা-প্যাক থেরাপি দেয়া হয়েছিল।
মোদির সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলবেন ট্রাম্প
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া স¤প্রতি পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) নিয়েও কথা বলবেন তিনি। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিএএ বা এনআরসি নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে একথা জানান মার্কিন ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ তুলে নিজের একান্ত মতামত জানাবেন। তিনি যেসব বিষয়ে কথা বলবেন তার মধ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রসঙ্গটিও রয়েছে। এ বিষয়েও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে কথা বলবেন তিনি, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কনফারেন্স কলের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলন হোয়াইট হাউসের ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে ভারতজুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে সে বিষয়েও সম্পূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র অবগত এবং তা নিয়ে আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্নও। তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের সময় এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন এবং একথাও মনে করিয়ে দেবেন যে গোটা বিশ্ব চায় ভারত তার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য বজায় রেখে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চলুক। সূত্র : এনডিটিভি, এবিপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।