Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বসন্তেও রঙিন কুমিল্লার হাটবাজার

মুনাফার আনন্দ দোল খাচ্ছে চাষি মনে

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

শীতের পর বসন্তেও কুমিল্লার হাট-বাজারগুলো রঙিন লাল টসটসে টমেটোয় ঠাসা। শীতের সবজি হলেও কুমিল্লা অঞ্চলে মৌসুম শেষে বসন্তকাল পর্যন্ত প্রচুর টমেটো উৎপাদিত হয়। জেলার কমপক্ষে দশ উপজেলায় এবার ১৫ ধরণের হাইব্রিড জাতের টমেটোর বাম্পার ফলনে কৃষকরা খুশি। 

বাম্পার ফলনে দাম কম হবে এমন ধারণাকে পেছনে ফেলে টমেটোয় মুনাফার অঙ্ক আশার চেয়ে বেশি ওঠেছে কৃষকের পকেটে। কুমিল্লার টমেটো চাষিদের মনে মুনাফার আনন্দ দোল খাচ্ছে। চলতি মৌসুমে কুমিল্লায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। টানা দুই মাস শীত থাকায় ইতিবাচক দিক ফুটে ওঠেছে টমেটোর ফলনে।
অপরদিকে উপযুক্ত দাম চাষীদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে তুলেছে। জমি থেকে টমেটো তোলার পর স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে শত শত ক্যারেটে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। তবে জমি থেকে টমেটো উঠিয়ে বাজারজাত করে ঢাকায় পাঠাতে চাষিদের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।
গত বছরের মতো এবারও ডেলটা, অলক, প্রসূন, অনন্যা, ঐশী, বিগল, রকি, হিরোপ্লাস, সফল, চিরঞ্জীব, নাভি, বিউটিফুল, বিএল-৬৪২ এবং অপূর্বসহ ১৫টি উন্নত হাইব্রিড জাতের টমেটো আবাদ করেছেন কুমিল্লার চাষিরা। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। টমেটো চাষে এই উপজেলা অনেক এগিয়ে রয়েছে। চান্দিনার পরে দাউদকান্দি, বরুড়া, দেবিদ্বার, বুড়িচং, কুমিল্লা সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার স্থান। এছাড়াও হোমনা, তিতাস, মুরাদনগরসহ অন্তত দশটি উপজেলাতে কমবেশি টমেটো আবাদ হয়েছে।
এসব এলাকায় উৎপাদিত টমেটো স্থান পেয়ে থাকে দেশের অন্যতম বারোমাসি সবজি বাজার ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের নিমসারে। আবার এখানকার চাহিদা মেটানোর পরও রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামেও যাচ্ছে কুমিল্লার টমেটো।
গত তিনদিনে চান্দিনা, দাউদকান্দি, বুড়িচং, দেবিদ্বার উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় চাষি ও উত্তরাঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকরা জমিতে পাকা টমেটো তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোথাও কোথাও কুমিল্লার বাইরে নেয়ার জন্য ক্যারেটে টমেটো ভরাট করে ট্রাকে উঠানো হয়। প্রতি ক্যারেটের ধারণ ক্ষমতা ২৫/২৬ কেজি। প্রতি ট্রাকে ২০০ থেকে ৩০০ ক্যারেট টমেটো নেয়া হচ্ছে।
চান্দিনার বাড়েরা গ্রামের শৌখিন কৃষক জসিম উদ্দিন নিজের ৬০ শতক জমিতে এবার প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে টমেটো আবাদ করেছেন। এ পর্যন্ত লাখ টাকার বেশি টমেটো বিক্রি করেছেন। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশিদের মাঝেও নিজের জমিতে উৎপাদিত টমেটো বিলি করেছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে জমিতে যে পরিমাণ টমেটো রয়েছে তা মধ্য মার্চে তুলবেন। সেখান থেকে বিক্রি করে আরও লাখ টাকা আসবে এমন আশা রয়েছে। কুমিল্লার অন্যান্য উপজেলার টমেটো চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তা ও পরামর্শে নিরাপদ টমেটো উৎপাদন করতে পেরেছেন।
এবার টমেটোতে রোগ-বালাই আক্রমন করেনি। আর একেবারে সঠিক সময়ে পেকেছে। অতীতের মতো পাকানোর জন্য ওষুধের প্রয়োজন পড়েনি। বর্তমানে জমিতে প্রচুর পরিমাণ টমেটো রয়েছে। এসব টমেটো পর্যায়ক্রমে মার্চ মাসের মধ্যেই পাকবে। এবার টমেটোর ভাল বাজারদর মিলেছে। চাষিরা টমেটোর বিক্রির মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত জানান, কম খরচে ভালো ফলন ও বেশি লাভ হওয়ায় টমেটোর দিকে চাষিদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত নজরদারি ও উপজেলা পর্যায়ে চাষিদের আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ সবধরণের লজিষ্টিক সার্পোট দেয়া হয়েছে। আর আবহাওয়া সময়োপযোগী হওয়ায় এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে।
কুমিল্লার বিশিষ্ট হৃদরোগ চিকিৎসক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ ইনকিলাবকে বলেন, টমেটো সোলানেসি পরিবারের লাইকোপার্সিকগনের অন্তর্ভুক্ত কোমল ও রসালো সবজি। দেশে টমেটোকে বিলাতি বেগুনও বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে। টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে বলে এটি ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেটসহ ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ