Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ

মো. সাইফুদ্দীন খালেদ | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

মানুষের কল্যাণের জন্যেই সমাজ, রাষ্ট, আইন ও বিচার ব্যবস্থার সৃষ্টি। আইন ও বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসনের পূর্বশর্তই হচ্ছে মানবাধিকার বাস্তবায়ন। মানবাধিকার বিশ্বজনীন। মানুষের জন্য স্বীকৃত অধিকার যখন রাষ্ট্র দ্বারা লংঘিত হয়, তখনই আমরা বলে থাকি মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে। মানুষের জন্য স্বীকৃত অধিকার শুধু রাষ্ট্র দ্বারা লংঘিত হবে তা নয়- পরিবার ও সমাজ অথবা সঠিক আইন না থাকায় কিংবা আইনের মধ্যে জটিলতা থাকায় তার দ্বারা মানবাধিকার লংঘিত হয়ে থাকে। সেইক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বরত ব্যক্তি বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাজ হলো জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া এবং আইন প্রয়োগের যতগুলো পদ্ধতি আছে তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা এবং মানবাধিকার লংঘিত হলে বিচার প্রার্থীর বিচার সুনিশ্চিত করা। যে সকল শিশু প্রতিকূল পরিবেশে জন্মে ও বড় হয় বিশেষতঃ যারা পথশিশু, এতিম ও জেল খানায় কয়েদী/হাজতী মায়ের সঙ্গে আছে সে সকল শিশু এবং অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়া কিশোর-কিশোরী তাদের মৌলিক ও মানবাধিকার বলে কি কিছু আছে? দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের শিশুরা জীবন সম্পর্কে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অর্থ উপার্জনের জন্য বেরিয়ে পড়ে। খোলা আকাশের নিচে গাড়ির ধোয়া ও ধুলোবালি উপেক্ষা করে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি খোলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে। কেউবা মাথায় ইট বা ভারি বস্তু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। কেউ লোহা কাটার কাজে ব্যস্ত। আমাদের দেশে ভয়াবহ সমস্যা হলো এই শিশুশ্রম। তারা অসহায় ও দুর্বল বিধায় সকল নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে এবং তাদের শ্রমের সঠিক মূল্য না দিয়ে ঠকানো যায়।

এতিম, অসহায়, গৃহহীন, দুঃস্থ, দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় তাদের নিয়োগের অন্যতম কারণ হচ্ছে- তাদের দিনরাত খাটানো যায়। এতে শিক্ষা বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও পঙ্গুত্ব বরণসহ অকালে মৃত্যুর মুখেও পতিত হয় অনেক শিশু। আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ এবং গণসচেতনতার অভাবে শিশুদের এসব কাজে ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পেশার মধ্যে রয়েছে- পরিবহন (শ্রমিক টেম্পু, রাইডার, বাস, ট্রাক ইত্যাদিতে), মোটর ওয়ার্কসপ ও গ্রিল ওয়ার্কসপ, লেইদ মেশিন ইত্যাদিতে, শিপ ইয়ার্ডে, ইঞ্জিন বোট ও মাছ ধরার ট্রলারে, নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে, ক্যামিকেল কারখানায় রাজনৈতিক সহিংসতায় ও কর্মসূচিতে ব্যবহার, ধূমপান ও মাদক ব্যবসায় নিয়োগ, ইট ভাটায় ইত্যাদিতে।

আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ, আমাদের সংবিধান, শিশু আইন-১৯৭৪, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনে শিশুদের প্রতি সকল প্রকার নিষ্ঠুরতা, জোর জবরদস্তি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার এবং যেকোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেখানে দুঘর্টনার আশঙ্কা রয়েছে এবং যার ফলে তার শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এমন ধরনের কাজ থেকে শিশুর নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে। যেসব কাজ শিশুর স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর এবং যে কাজ তার শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, নৈতিক বা সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সে সকল কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারও শিশুর রয়েছে। আমাদের শ্রম আইনেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী বা কিশোর যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। তবে কোনো শিশু (চৌদ্দ বছর পূর্ণ হয় নাই এমন কোনো ব্যক্তি) যদি কোন ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। তারাও কর্মরত শিশুদের মধ্যে পড়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে বয়স অনুযায়ী শিশু অধিকার: ৭ বছরের নিচে শিশুর কোনো আইনগত দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা নেই, ৬-১০ বছরের নিচে শিশুর বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, ১২ বছরের নিচে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। ১৪ বছরের নিচে কারখানায় কাজ নিষিদ্ধ। ১৫ বছরের নিচে পরিবহন খাতে কাজ নিষিদ্ধ। ১৬ বছরের নিচে শিশু অপরাধীকে কারাগারে রাখা বেআইনি।

শিশুদের প্রতি সহিংসতা, অপব্যবহার ও শোষণের মতো প্রধান প্রধান যেসব হুমকি আছে সেগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে তাদের কিশোর বয়সেই। এই বয়সের শিশুদের মধ্যে প্রধানত কিশোরেরা অনিচ্ছাসত্তে¡ও দ্ব›দ্ব সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে অথবা শিশুশ্রমিক হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হয়। এসব কারণে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করা বা দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ কমে যায়। আশার কথা হচ্ছে, শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ইতোমধ্যে অনেক দরিদ্র পিতামাতাই তাদের সন্তানদের কর্মস্থলের পরিবর্তে বিদ্যালয়ে পাঠাতে শুরু করেছেন। অবশেষে বলবো, শিশুরা হচ্ছে সমাজ নামক বাগানের প্রস্ফূটিত ফুল। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে একটি শিশুবান্ধব সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং শিশু আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে। শিশুদের লেখাপড়া, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও মেধা বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের উচিত ভবিষ্যতে তাদের সুনাগরিক হবার জন্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখা।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট



 

Show all comments
  • মো: মিজানুর রহমান ২২ আগস্ট, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
    স‍্যার, বর্তমানে এসব আইনের কতটুকু বহাল আছে। বাংলাদেশ অনেক শিশু আছে যাদের তো কাজ করা বেআইনি তারা বিবাহ পযর্ন্ত করে এই যে তারা কাজের সাথে তারা সম্পূর্ণ রূপে জরিয়ে পরছে আর টাকা এতটাই বেশি হয়েছে যে বিবাহ করতেও দ্বিধা করছে না যেখানে আইনের চোখে সে নিজেই শিশু এই যে তারা লম্বা সময় ধরে কাজের সাথে জরিত আর যার ফলে মানসিকতা যাচ্ছে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন এর আগেই যদি আইন তাদের বাধা দিত। সপ্তাহে ৪২ ঘন্টা কার্যকর করত তাহলে সেরকম কিছুই হতো না। আনেকে এতটায় বেশি ইনকাম করে যে টাকা রাখার জায়গা না পেয়ে নিজের গ‍্যাং তৈরি করে। আবার আনেকে শুরু করে Fashion। ফোন দিয়ে কথা বললে খুশি হতাম অনেক কথায় আছে যেগুলো আমি জানাতে চাই। এমন কিছু কথা যা অনেকে জানে আবার অনেকে জানে না। যেগুলোর কোন আইন এখনও তৈরিও হয়নি। আমার সকল কথা শিশুদের নিয়েই।
    Total Reply(0) Reply
  • মো: মিজানুর রহমান ২২ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৩ এএম says : 0
    স‍্যার, বর্তমানে এসব আইনের কতটুকু বহাল আছে। বাংলাদেশ অনেক শিশু আছে যাদের তো কাজ করা বেআইনি তারা বিবাহ পযর্ন্ত করে এই যে তারা কাজের সাথে তারা সম্পূর্ণ রূপে জরিয়ে পরছে আর টাকা এতটাই বেশি হয়েছে যে বিবাহ করতেও দ্বিধা করছে না যেখানে আইনের চোখে সে নিজেই শিশু এই যে তারা লম্বা সময় ধরে কাজের সাথে জরিত আর যার ফলে মানসিকতা যাচ্ছে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন এর আগেই যদি আইন তাদের বাধা দিত। সপ্তাহে ৪২ ঘন্টা কার্যকর করত তাহলে সেরকম কিছুই হতো না। আনেকে এতটায় বেশি ইনকাম করে যে টাকা রাখার জায়গা না পেয়ে নিজের গ‍্যাং তৈরি করে। আবার আনেকে শুরু করে Fashion। ফোন দিয়ে কথা বললে খুশি হতাম অনেক কথায় আছে যেগুলো আমি জানাতে চাই। এমন কিছু কথা যা অনেকে জানে আবার অনেকে জানে না। যেগুলোর কোন আইন এখনও তৈরিও হয়নি। আমার সকল কথা শিশুদের নিয়েই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন