পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সিমের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন নিয়ে এ পর্যন্ত নানামাত্রিক আলোচনা হয়েছে। যখন এধরনের রেজিস্ট্রেশনের সিদ্ধান্তÍ নেয়া হয় তখনই এর নেতিবাচক দিক নিয়ে কথা শুরু হয়। সচেতন মহল এধরনের রেজিস্ট্রেশনের বিপক্ষে এবং এর ঝুঁকি নিয়ে মত দিয়েছেন। অবশেষে উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়। আদালত অপপ্রয়োগ বন্ধের ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। ডাকও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অনেকটা একগুঁয়েমির কারণে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল সেই তারানা হালিম নিজেই এখন বলছেন, অন্যের আঙ্গুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা এক থেকে দেড় লাখ হবে। এ সংক্রান্ত দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, নতুন সিম কেনার জন্য আঙ্গুলে ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক হলেও এসব ছাড়া সিম কেনা যাচ্ছে বাজার থেকে। অন্যের নামে নিবন্ধিত এসব প্রিঅ্যাকটিভ সিম চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে। গত মঙ্গলবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনর্নিবন্ধনের সময়ে গ্রহকের আঙ্গুলের একাধিক ছাপ নিয়ে তার বিপরীতে অন্য সিম নিবন্ধন করে বিক্রির অভিযোগে পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহুজনকে গ্রেফতার করার পরও ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলছেন, আঙ্গুলের ছাপ কোনভাবেই সংরক্ষণ করা হয়নি। এটা করার কোন সুযোগ নেই। আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের বিষয়টি একটি অপপ্রচার। বাস্তবতা হচ্ছে সিম নিবন্ধনের এই ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়ায় এখন ভীত হয়ে পড়েছেন মোবাইল ফোন গ্রাহকরা।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের বিষয়টি শুরু থেকেই বিতর্কে পড়েছিল। আঙ্গুলের ছাপ বেহাত হওয়া একজনের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে অন্যের সিম বিন্ধন করাসহ জালিয়াতি কাজে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা ছিল সব সময়ই। তথ্য-প্রযুক্তির বিশেষজ্ঞরাও এই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রমের বিরোধিতা করেছিলেন। তারা বলেছিলেন এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধিত হলে একজন মানুষের মূল্যবান আঙ্গুলের ছাপ বেহাত হয়ে যাবে। তারা তখনই অভিমত প্রকাশ করেছেন, এই ছাপ পরবর্তীতে অপরাধমূলক কাজ কিংবা ব্যাংক লোনসহ নানা অনিয়ম জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত হবার আশঙ্কা রয়েছে। সেই আশঙ্কাই এখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দেখা যাচ্ছে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করে রেখেছে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে একজনের আঙ্গুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে অন্যজনের সিম। জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধিত এসব সিম সাধারণ মানুষের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখন কার নামে নিবন্ধিত সিম দিয়ে সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকা- পরিচালিত হবে সে আশঙ্কায় সঙ্গত কারণেই শংকিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ নিরীহ গ্রাহকরা। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন অহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক এ ব্যাপারে বলেছেন, আমরা দাবি করেছিলাম আরো সতর্কতার সাথে ভোক্তাদের আঙ্গুলে ছাপ নেয়া হোক কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন একের পর এক জালিয়াতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। লাখ লাখ সিম সাধারণ ব্যবহারকারিদের আঙ্গুলের ছাপ একাধিকবার দিয়ে চুরি করে নিবন্ধিত করে নিয়েছে জালিয়াত চক্র। তারা বলছেন, আমাদের সংগঠনের তদন্তে উঠে এসেছে এসব সিম জালিয়াতচক্র উচ্চমূল্যে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করছে। এতে করে কোন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পর নিরাপরাধ সাধারণ মানুষ ফেসে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি কেউ জানে না কার কার আঙ্গুলের ছাপ চুরি হয়েছে। কার্যত আজ গোটাজাতি জালিয়াত চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন নিয়ে যে ধরনের আশঙ্কা এবং গভীর উদ্বেগের কথা প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টিকে সে সময় গভীর বিবেচনায় নেয়নি। নিলে এর পর্যাপ্ত মনিটরিং তারা করতেন। অর্থাৎ এর সাথে যে বড় ধরনের দায়িত্বশীলতার প্রসঙ্গ রয়েছে সেটি তারা ভেবে দেখতেন। সরকারি মহলের উদাসীনতার সুযোগই গ্রহণ করেছে সন্ত্রাসীরা।
গত কিছুদিনের বিভিন্ন রিপোর্টাদী পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তথ্য প্রযুক্তির এমন কোন খাত নেই যা নিয়ে জাল-জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেনি। হ্যাকিং থেকে শুরু করে যত ধরনের অভিযোগ থাকার কথা সবগুলোই উঠেছে। ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা পর্যন্ত বেহাত হয়ে যাচ্ছে। কার্যত এর জন্য কেবা কারা দায়ী তা সত্যিকার অর্থে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। এধরনের অজস্র অভিযোগ এখন তদন্তাধীন। মোবাইল ফোন নিয়ে অতি সম্প্রতি নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এরসাথে সন্ত্রাসী অভিযোগের কথাও কোন কোন মহল থেকে বলা হয়েছে। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, নিবন্ধনের পূর্বে যে কোন অপকর্মের দায় যাদের উপর বর্তাতো এখন সিম জালিয়াতির কারণে তা অতিসহজেই পরিবর্তিত হয়ে নিরীহদের উপর পড়বে। যাকে হয়ত অভিযুক্ত করা হবে সে নিজেও জানবে না এর কারণ। এমনিতেই দেশে যে ধরনের রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চলছে তার সাথে নতুন এই অপকর্ম যুক্ত হবার আশঙ্কাও অমূলক নয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন পরিস্থিতির অবসান হবে। তার এই কথায় খুব আশ্বস্ত হবার মতো কিছু আছে বলে মনে হয় না। কারণ যখন এটি নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল তখনই তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নাগরিক উদ্বেগের নতুন যে উপাদান যুক্তহলো তা নিরসনে সংশ্লিষ্টরা কি করবেন তা স্পষ্ট করে জনগণ জানতে চায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা গভীর বিবেচনায় নিবেন বলে আমরা মনে করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।