পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সংগঠনকে গতিশীল করতে ঢাকা মহানগরকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। উত্তরে দায়িত্ব দেয়া হয় সাবেক দুই কমিশনার এম এ কাইয়ুম ও আহসান উল্লাহ হাসানকে। আর দক্ষিণে সাবেক ছাত্র নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল ও সাবেক কমিশনার কাজী আবুল বাশারকে। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল এই দুই সংগঠনের কমিটি গঠনের পর থেকেই অভ্যন্তরীণ বাঁধা, সফল হতে না দেয়ার জন্য নিজ দলের সিনিয়র নেতাদের অসহযোগিতা, রাষ্ট্রযন্ত্রের অত্যাচার-নির্যাতন সত্তে¡ও দলকে গুছিয়ে নিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এই সময়ের মধ্যে উত্তরে ২৬টি থানা ও ৫৬টি ওয়ার্ডেই কমিটি করেছে উত্তর বিএনপি। দক্ষিণের ২৫টি থানার ২১টিতে এবং ৭৫টি ওয়ার্ডের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাকীগুলোতেও চলমান রয়েছে। আর যে ৪টিতে কমিটি করতে পারেনি সেগুলো দক্ষিণে বসবাসকারী এক হেভিওয়েট নেতার কারণেই সম্ভব হচ্ছে না বলে নেতাদের সূত্রে জানা যায়।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গত ১ ফেব্রæয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি হয় মহানগরে। দুই সিটির প্রচারণায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতে প্রাণ ফিরে পায় ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে উন্মুক্ত প্রচার-প্রচারণা, মিছিল, সমাবেশের কারণে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেছেন তারা। তবে ভোটের দিনে কেন্দ্রগুলোতে নেতাদের অনুপস্থিতি সব সাফল্যকে মøান করেছে, প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তাদের সক্ষমতা নিয়েও।
যদিও ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের থানার নেতারা অভিযোগ করে বলেন, গত একযুগ ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন আর জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বিএনপি অনেকটা কাহিল। ঢাকাসহ দেশের তৃণমূলের এমন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে কমপক্ষে দুই-তিনটি মিথ্যা মামলা নেই? ঢাকার দুই সিটির সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দশটির বেশি মামলা। এরপরও তারা টিকে আছেন। এসব নেতাকর্মীদের শুধু ভোটের দিনের বিষয়টি দিয়ে বিবেচনা করলে ঠিক হবে না। তারা বলেন, ভোটের দিন কেন্দ্রে অনুপস্থিতি কি শুধু ঢাকার নেতাদের ব্যর্থতা। ঢাকায় বসবাসকারী অনেক হেভিওয়েট নেতা রয়েছেন, যারা ঢাকার ভোটার, ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তারা কেন নিজেদের ভোটটিও দিতে যাননি। ভোটের আগে থেকেই তারা ঘরে বসে থাকলে ছোট নেতারা সাহস পাবে কাদের দেখে?
ঢাকা মহানগর নেতারা জানান, ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির ৭০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হন হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। সোহেল ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবও। বাশার একাধারে বিশ বছর কাউন্সিলর এবং অবিভক্ত ঢাকার ভারপ্রাপ্ত মেয়রও ছিলেন। অন্যদিকে ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা উত্তরে বিএনপির সভাপতি হন এমএ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। দুজনই সাবেক কমিশনার। এরমধ্যে উত্তরের কাইয়ুম মামলাজনিত কারণে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির মহানগর কমিটিগুলোর মেয়াদ দুই বছর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকায় বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। দলে গতি আনতে মহানগরকে দুই ভাগ করেও আশানুরূপ ফল হয়নি। তবে কমিটিকে ব্যর্থ করার জন্যই একটি চক্র কাজ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর দক্ষিণের ২৫টি থানার মধ্যে ২১টি থানার কমিটি করা হয়েছে। বাকী মতিঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও খিলখাঁও থানার কমিটি করা যাচ্ছে না ওই ওই এলাকার একজন প্রভাবশালী নেতারা কারণে। তিনি সম্পূর্ণ কমিটিই তার পকেটের লোক দিয়ে করাতে চান। কিন্তু তাদের বাইরে যারা আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখছেন, দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন, মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন তাদের কাউকেই জায়গা দিতে চান না ওই নেতা এবং তাদের অনুসারিরা। এছাড়া দক্ষিণের কমিটি যেনো কোনভাবেই সফল না হন, আগের কমিটিতে সদস্য সচিব থাকার সময় এবং বর্তমান সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল যেনো সফল না হন এজন্য একজন নীতি নির্ধারণী নেতা, যাত্রাবাড়ী শ্যামপুর এলাকার মহানগরের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক, ডেমরা এলাকার মহানগর কমিটির নেতা ও সাবেক এমপি প্রার্থী, লালবাগ এলাকার এক মরহুম নেতার স্ত্রী সিন্ডিকেট গড়ে কাজ করছেন। দক্ষিণের যেকোন উদ্যোগের বিরোধীতা করে তা ব্যর্থ করার জন্য এই সিন্ডিকেট উঠে পরে লেগে যান বলেও অভিযোগ করেন মহানগরের নেতারা।
ভোটের দিনে মহানগর নেতাদের কেন্দ্রে অনুপস্থিতির অজুহাত তুলে স্থায়ী কমিটিতে মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের প্রস্তাব তুলেন স্থায়ী কমিটির এক নেতা। নতুন কমিটিতে তার পছন্দের লোকদের বসানোর বিষয়টিও আলোচনায় আসে তার পর থেকেই। সেই বৈঠকে ভোটের দিন নেতারা কে কোথায় ছিলেন, কেনো কেন্দ্রে যাননি তা বিস্তারিত তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে বৈঠকে কয়েকজন নেতা নতুন কমিটি না করে বর্তমান কমিটিকে দিয়েই কিভাবে আরো সুসংগঠিত করা যায় সেটাও চিন্তা করার কথা বলেন। কারণ একেবারেই নতুন কাউকে ঢাকা মহানগরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতৃত্বে এনে সফল হওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, যারা আমাদের ব্যর্থ বলেন; তাদেরকে বলি ব্যর্থতার মানদÐ কী? কঠিন দু:সময়ে নগর বিএনপির দায়িত্ব পেয়ে ৬ শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে জেল খেটে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দু:শাসনের বিরুদ্ধে লড়ছি। প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের দেশনেত্রী গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং তারুণ্যের অহঙ্কার দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কবল থেকে দেশবাসীকে আমরা মুক্তি দিতে চাই। এটাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। সেজন্য ঢাকা দক্ষিণ বিএনপিকে সুসংহত করতে যা কিছু করা দরকার সবই আমরা করছি এবং করে যাবো। সংগঠন কিভাবে শক্তিশালী করতে হয় সেটা আমাদের জানা আছে।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক চিত্র তুলে ধরে সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার জানান, রাজনীতির এক ক্রান্তিকালে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি। যখন শুরু হয় একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি। আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা। এরইমাঝে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন আমাদের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। টানা দশ মাস কারাভোগ করেন তিনি। ম্যাডামের হাজিরাকে কেন্দ্র করে তার গাড়িবহর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় ডিবি পুলিশ আমাকেও গ্রেফতার করে। দুই দফায় সাড়ে চার মাস জেল খেটেছি। আমার নামে ৬০ টিরও বেশি মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা। আমার ছেলেকেও কারাভোগ করতে হয়েছে। এখনো নিজ বাসায় থাকতে পারিনা। সর্বশেষ হয়ে গেল সিটি নির্বাচন। আমরা একসাথে সহ¯্র জুলুম নিপীড়নের শিকার হয়ে কোনটি ছেড়ে কোনটি ধরবো? এসবের মধ্যেও দলের সবধরনের কর্মসূচীতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছি। ২৫ টির মধ্যে ২১ টি থানা এবং ৭৫ টি ওয়ার্ডের কমিটি পুনর্গঠন করেছি। তিনি বলেন, দল পুনর্গঠন মানেই তো নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। নেতৃত্ব নতুন করে নাজিল হবে না। আমাদের মধ্য থেকেই তা বাছাই করতে হবে।
ঢাকা উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান বলেন, উত্তর সিটিতে ২৬টি থানা ও ৫৬ টি ওয়ার্ডে ফুল কমিটি ঘোষণা করেছি। আমরা এক নেতার এক পদ বাস্তবায়ন করেছি। সিটি নির্বাচনে ভোটাররা কেন্দ্রে যায়নি কেনো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ধারণা পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার নিপীড়নের কারণে সবার মাঝে ভীতি তৈরি হওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। আমি নিজে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছি। উত্তর বিএনপি ব্যর্থ নয়। তাহলে কী বলবেন যে মরহুম সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালামের মতো নেতারাও ব্যর্থ? দলের হাইকমান্ড নেতৃত্বের পরিবর্তন চাইলে করবেন। এটাতো সংগঠনের পদ্ধতি। এক্ষেত্রে আমার কোনো দ্বিমত নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।