দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পরিচয়ঃ হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ)। পিতা জান্নাতবাসী মৌলভী সৈয়দ মতিউল্লাহ। মাতা জান্নাতবাসীনি সৈয়দা খায়ের-উন-নেছা। ১৮২৬ সালে চট্রগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে জন্ম গ্রহন করেন। ১৯০৬ সালে সৃষ্টি জগতের এলাহীর নিকট মহামিলনে সম্মানিত হন। হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) মাইজভান্ডারী তরিকার প্রতিষ্ঠাতা।
শিক্ষা জীবনঃ হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর শৈশব কেটেছে নিজ বাড়ির মক্তবে। সে সময় চট্রগ্রামে ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সুবিধা ছিল না। তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে কলিকাতা গমণ করেন। কলিকাতা মাদরাসা থেকে হাদিছ, ফেকাহ, তাফছির, মান্তেক, হেকমত, বালাগত, উছুল আকায়েদ, ফিলছফা ও ফরায়েজ শাস্ত্রের উপর বিশেষ পান্ডিত্যে অর্জন করেন।
কর্ম জীবনঃ পড়াশুনা শেষ করে ১২৬৯ হিজরীতে যশোর জেলার বিচার বিভাগে কাজীর পদে যোগদান করেন। এজলাসে বসে বিচার কার্য পরিচালনার সময় আসামীর অপরাধের জন্য যখন দন্ড ঘোষনা করতেন তখন তিনি বিষাদে মুষড়িয়া যেতেন। মানুষের অপরাধ প্রবণতা ও দন্ডের বিধান দেখে অস্থির হয়ে পড়তেন। এ অধ্যাত্মিক মহাপুরুষ ভাবতেন, দুনিয়ার বিচারের অপরাধের দন্ড চিত্রের অবস্থা যদি এ হয়ে থাকে। তাহলে আল্লাহ বিমূখ মানুষের পরকালের অবস্থা কি হবে? পরকালে উম্মতে মোহাম্মদীর নাজাত লাভের বিষয়টি তাকে বিষমভাবে আলোড়িত করতে থাকে। হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) ব্যক্তিগত জীবনে উদার ও অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। চাকুরী জীবনের মাত্র এক বৎসরের মাথায় স্বীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করেন। এবং তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, নিজেকে দ্বীনের খেদমতে উৎসর্গ করবেন। তিনি পুণরায় কলিকাতায় আগমণ করেন এবং মুন্সী বো আলী (রহঃ) এর মাদরাসায় প্রধান মোদাররেছের দায়িত্ববার গ্রহণ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি মানুষের হেদায়াত লাভের জন্য দ্বীনি দাওয়াত ও ওয়াজ নসিহত করতেন। সে সময়ের মানুষেরা তাকে দ্বীনি মজলিসে নেয়ার জন্য পাল্কি নিয়ে আসত।
রিয়াজত ও কামালিয়াত অর্জন হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) কানে আজানের ধ্বনি আসা মাত্র নামাজের জন্য অস্থির হয়ে পড়তেন। মাত্র সাত বছর বয়স থেকে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করতেন। শৈশব থেকেই তার জগত স্রস্টার নৈকট্য লাভের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। জীবনের এক পর্যায়ে এসে হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর বংশীয় আওলাদ হযরত শাহ সূফী দেলওয়ার আলী পাকবাজের সান্নিধ্য লাভ করেন। হযরত দেলওয়ার আলী পাকবাজের ছোট ভাই হযরত আবু শাহমা ছালেহ লাহোরীর সাথে হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) খুব ঘনিষ্ট সর্ম্পক ছিল। হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর সাথে যখন হযরত আবু শাহমা ছালেহ লাহোরীর প্রথমবার দেখা হয়, বিদায় নেয়ার সময় তখন আবু শাহমা ছালেহ লাহোরী হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর সাথে মোসাফাহ করে বলেছিলেন, জীবনে এ প্রথম কারো সাথে মোসাফাহ করলাম। আজ আল্লাহ আমার মনের আশা পূর্ণ করেছেন। হযরত আবু শাহমা ছালেহ লাহোরী কোন একটি দিনও হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) কে না দেখে থাকতে পারতেন না। একদিন দেখা সাক্ষাত না হলে, তিনি হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর বাসায় চলে আসতেন। হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) তরিকতের উচ্চ মোকামের এ দুই আউলিয়ার সান্নিধ্যে থেকে ফয়জ বরকত লাভ করেন। একটি পর্যায়ে এসে হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) আধ্যাতিক জগতের প্রেম প্রেরণার প্রাচুর্যে আত্মভোলা হয়ে পড়েন। তিনি অধিক পরিমানে মোরাকাবা মোশাহেদার মধ্যে সময় কাটাতে থাকেন। ক্রমান্বয়ে তার জজবাতী ভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি যৎ সামান্য আহার করতেন। পানি পানের মাধ্যমে রোজা রাখতেন। হালাল হারাম মিশ্রণের ভয়ে নিজের খাবার নিজে রান্না করে খেতেন।
অমূল্য নসিহত সমূহঃ হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর নসিহত সমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল; ১). কবুতরের মত বাছিয়া খাও। হারাম খেয়োনা। নিজ সন্তান সন্তুতি নিয়ে খোদার প্রশংসা কর। ২). কুনজাসকের (চড়–ই পাখি) মত নিজ হুজরায় বসে আল্লাহর নাম স্মরণ কর। ৩). কোরআন তেলোয়াত কর। ৪). আইয়ামে বীজের রোজা রাখ (প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তরিখ)। ৫). নিজের হাতে খাবার পাকিয়ে খাও।৬). তাহাজ্জুদের নামাজ পড়িও। ছালাতুত তাসবিহ্ এর নামাজ পড়িও।
মাইজভান্ডারী তরিকার সপ্ত পদ্ধতিঃ: আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে মাইজভান্ডারী তরিকার সপ্ত পদ্ধতির স্বীকৃতি রয়েছে সর্বত্র। যা উসূলে সাবা হিসেবে ভক্ত আশেকানদের নিকট পরিচিত। মাইভান্ডারী তরিকায় প্রবর্তিত সপ্ত পদ্ধতি চর্চার মাধ্যমে যারা দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করবে, তারা খিজিরিয়া স্তরের অলির মোকাম অর্জন করতে পারে। সপ্ত পদ্ধতি চর্চার নিয়মাবলী যথা; ১). ফানা আনিল খালক (আত্মনির্ভরতা)ঃ আত্ম-চিন্তা, আত্ম-উপলদ্ধি, আত্ম-শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার জন্য নিজের অস্তিত্বের মধ্যে ডুবে নিজেকে চিনা। ২). ফানা আনিল হাওয়া (অনর্থ পরিহার)ঃ যে সকল কাজ কোন সুফল দেয়না তা থেকে বিরত থাকা। যেমন- গীবত, চোগলখোরী, পরনিন্দা ইত্যাদি ৩). ফানা আনিল এরাদা (প্রবৃত্তি প্রস‚ত ইচ্ছার বিনাস)ঃ সুখে-দুঃখে খোদায়ী ইচ্ছা শক্তির ওপর সন্তুষ্ট থাকা ও ধৈর্য ধারণ করা। ৪).মউতে আবয়্যাজ (সাদা মৃত্যু)ঃ সংযম বা কম কথা বলা, উপবাস যাপন, কম নিদ্রা, কম আহার করা। ৫).মউতে আছওয়াদ (কাল মৃত্যু)ঃ আত্ম-সমালোচনা, আত্মশুদ্ধি,অপরের নিন্দা ও সমালোচনা সহজ ভাবে গ্রহণ করা, প্রতি হিংসা ও ক্ষোভ দমন করা। ৬).মউতে আহমর (লাল মৃত্যু)ঃ লোভ, লালসা, যৌন দৃষ্টি, কামনা দমন ও সংযতকরণ। ৭). মউতে আখজার (সবুজ মৃত্যু)ঃ অল্পে তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, বাহুল্য পরিত্যাগ করা ও নির্বিলাস জীবন যাপন।
ওরশ শরিফ : প্রত্যেক বছর বাংলা সন অনুযায়ী মাঘ মাসের দশ তারিখ বাৎসরিক ওরশ শরিফ অনুষ্ঠিত হয়। দেশ বিদেশের লাখো লাখো ভক্ত আশেকান ওরশে শরিফে দুনিয়া ও আখেরাতের বরকত হাসিলের জন্য অংশ গ্রহন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।