দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আল্লাহর বন্ধু তথা মাহাবুব অলি আউলিয়াদের কোথায়ও কোন ভয় নেই। কারণ অলি আউলিয়ারা আল্লাহ তায়ালার রাজী খুশির অনুক‚লে নিজের জীবনকে পরিচালিত করে থাকেন। আল্লাহতায়ালা অসন্তোষ্ট হন বা হবেন এ ধরনের গোনাহের কাজ থেকে আল্লাহর মাহাবুব বান্দারা বিরত থাকেন। এছাড়া মুসলমান মাত্র যে বা যাহারা গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবে। তারা সকলে আল্লাহর মাহবুব বান্দা হিসেবে বিবেচিত হবেন। আল্লাহতায়ালা তাঁর মাহাবুব বান্দাদের সম্পর্কে আমাদেরকে অনেকটা ধমকের সাথে সতর্ক করে কুরআনে আয়াত নাজিল করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি, না তারা চিন্বান্বিত হবে।’ (সূরা ইউনুছ:৬২)।
হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রহ:) তাদের একজন। তিনি ১৮২৬ সালে চট্রগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে জন্ম গ্রহন করেছেন। যিনি দুনিয়া থেকে বেছাল হওয়ার মূহুর্ত পর্যন্ত মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের নির্দেশনা গুলো যথাযথভাবে মেনে চলেছেন। এবং হযরত রাসূল (সা:) এর সুন্নতের ওপর আমল করেছেন বা দৃঢ় থেকেছেন। হযরত মাওলানা আহমদ মাইজভান্ডারী (রহ:) কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন গঠন করতে পেরেছিলেন বলেই, তার বেছালের ১১৫ বছর পরও মানুষ তাকে শ্নরণ করেন। তার মাজার শরীফে মানুষ সমবেত হয়ে গোনাহ মাফের জন্য আল্লাহতায়ালার দরবারে কান্নাকাটি করেন।
হযরত মাওলানা আহমদ মাইজভান্ডারী (রহ:) ভক্ত আশেকদের নিকট গাউসূল আজম বলে অধিক পরিচিত। তার মাজার শরীফে কুরআন তিলায়াত মিলাদ-কিয়াম দোয়া দুরূদ হরদম চলছে। মাজার শরীফের পাশে নামাজের ঘর রয়েছে। নামাজ ঘরে আগন্তুক ভক্ত আশেকানরা নামাজ আদায় করে দুনিয়াবী বিপদ আপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।’ (সূরা বাকারা:১৫৩)। আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে ধৈর্য্য ও নামাজের সাহায্য প্রার্থনা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা আল্লাহতায়ালার নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল। হযরত মাওলানা আহমদ মাইজভান্ডারী (রহ:) আল্লাহর পথের গাউসূল আজম। যিনি আল্লাহর রেজামন্দি হাসিলের পথের উত্তম একজন সাহায্যকারী।
হযরত মাওলানা আহমদ মাইজভান্ডারী (রহ:) ফরজ নামাজের পাশাপাশি সালাতুত তাসবিহ ও সালাতুত তাহাজ্জুদ নামাজকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। যারা হাক্কানী অলি আউলিয়া তাদের দৈনন্দিন আমলের মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ অর্ন্তভ‚ক্ত থাকবেই। তিনি উম্মতী মোহাম্মদিকে ফরজ নামাজের পাশাপাশি সালাতুত তাসবিহ ও সালাতুত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়ার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হলো হালাল খাওয়া। রুজী রোজগার হালাল হওয়া। কারণ হালাল না খেলে ইবাদত কবুল হয় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ ! জমিনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্যে শত্রু ।’ (সূরা বাকারা:১৬৮)। অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! আহার কর আমি তোমাদের যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর।’ (সূরা বাকারা: ১৭২)। হযরত মাওলানা আহমদ মাইজভান্ডারী (রহ:) কুরাআনে দেয়া হালাল খাওয়ার নির্দেশনা মেনে নিয়ে ভক্ত আশেকান জায়েরীনদের বলেছেন, ‘কবুতরের মতো বাছিয়া খাও। হারাম খাইয়ো না। নিজ হাতে পাকাইয়া খাও।’ ইহার অর্থ হলো অন্যের দেয়া রান্না করা খাবারে হারাম মিশ্রিত থাকতে পারে।
হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রহ:) তৎসময়ে কলিকাতা মাদরাসা থেকে হাদিছ, ফেকাহ, তাফছির, মান্তেক, হেকমত, বালাগত, উছুল আকায়েদ, ফিলছফা ও ফরায়েজ শাস্ত্রের উপর বিশেষ পান্ডিত্যে অর্জন করেছিলেন। সেসময় এ অঞ্চলে আরবী শিক্ষার তেমন কোন বিশেষ সুযোগ ছিল না। তিনি ধর্মীয় জ্ঞান সম্পন্ন অলি উল্লাহ ছিলেন বিধায় তার খলিফাদের অধিকাংশই তৎসময়ের নামীধামী আলেম ওলামা ছিলেন। কর্ম জীবনের শুরুতে যশোর জেলার কাজীর দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তীতে সময়ে কলিকাতার মুন্সী বু আলী (রহ:) এর মাদরাসায় প্রধান মোদাররেছের দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বীনের খেদমতে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। সে সময়ের মানুষেরা তাকে দ্বীনি মজলিসে নেয়ার জন্য পাল্কি নিয়ে আসত।
মাওলানা আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রহ:) দুনিয়ার জিন্দেগীকে দারুল হাজন বলেছেন। তিনি নিজেকে দুনিয়ার সমস্ত ভোগ-বিলাস বিত্ত বৈভব থেকে দূরে রেখেছেন। তার নিকট আগন্তুকদের বলতেন,‘কুনজাসকের (চড়–ই পাখি) মত নিজ হুজরায় বসে আল্লাহর নাম স্মরণ কর। কুরআন তিলায়াত কর।’ অযথা বাহিরে ঘুরাঘুরি করতে নিষেধ করেছেন। কারণ অযথা ঘুরাঘুরির ফলে চোখ, হাত তথা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গোনাহ বেড়ে যেতে পারে। অন্যের সহায় সম্পত্তি ভিত্ত বৈভব দেখে নিজের মধ্যে হিংসা লোভ ক্রোধের জন্ম হতে পারে। ইহার ফলে মানুষ আখিরাতকে ভূলে দুনিয়া মুখী হয়ে যাবে। তিনি প্রায়ঃশই বলতেন ‘আমার ছেলেরা বারো মাস রোজা রাখে।’ অর্থাৎ উনার আশেক ভক্ত মুরীদগণ হাত পা চোখের গোনাহ থেকে মুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
আল্লাহতায়ালার মাহাবুব অলি হযরত মাওলানা আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রহ.) ১৯০৬ সালের দশই মাঘে বেছাল হন। প্রত্যেক বছর বাংলা মাঘের দশ তারিখ তার ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর বেছাল পরবর্তী সময়েও আশেক ভক্তরা তাকে মাইজভান্ডারী তরিকার ঈমাম বা প্রতিষ্ঠাতা মেনে নিয়ে অদ্যবধি অনুসরণ করে চলছেন। তাকে নিয়ে রচিত বিভিন্ন কালাম বা শের বাংলাদেশের সীমানা পেড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি আশেক ভক্তদের হৃদয়ে সর্বদা আলোড়িত হচ্ছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’ (সূরা বাকারা:১৫৪)। তিনি আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তার দেয়া কুরআন সুন্নাহর জীবন নির্দেশকা রয়ে গেছে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তার দেখানো পথ অনুসরণ করে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তি অর্জন করার তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখকঃ ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।