পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা শীতের কবলে দেশ। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ শীতে কাঁপছে। কোথাও কোথাও ২/৩ দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলে না। সাধারণত অন্যান্য বছর কিছুদিন শীত পড়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর জেঁকে বসা শীত কোনভাবেই কমছে না। দেশের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের কনকনে হাওয়া জনজীবন স্থবির করে ফেলেছে। শীতকালীন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঠান্ডাজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে সর্দি, কাশি ও হাঁপানিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মজুর পরিবারের মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বেশি ভুগছে শিশু। ডায়রিয়ায় গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এরপরই রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ নানা রোগব্যাধি।
বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের শীর্ষ তালিকায় অন্যতম নাম ঢাকা। দীর্ঘদিন থেকেই শীর্ষ অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকা। এ কারণেও প্রতিদিনই এ্যালার্জিজনিতসহ নানা রোগ ব্যাধি বাড়ছে। গত রোববার সকালেও রাজধানী ঢাকা আবারও শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায়। সকাল ৮টা ৪৪ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ছিল ২৫৮, যার অর্থ হচ্ছে এই শহরের বাতাসের মান ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’।
শীতকালে বাতাসের আদর্্্রতার পরিবর্তন ঘটে, বাতাসে ধুলোবালি বেশি থাকে, তাই শীতকালে এসব রোগ বেশি হয়। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে অ্যাজমা কিংবা হাঁপানি এবং শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রভাব বাড়ে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস। বিশেষ করে রোটা ভাইরাসের কারণে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার বেড়েছে। শীতে এসব রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে তারা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তথ্য সংরক্ষণ করে। এবার ৬২ জেলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখান থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় ২ হাজার ৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এরপর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগে ৮৮৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২৪৩ জন।
গত ১০ দিনে ডায়রিয়ায় ১ লাখ ৯৫ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে ৯ জন। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ১৮৪ জন, মৃত্যুবরণ করেছে ২২ জন এবং জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ. জ্বরসহ নানা রোগব্যাধিতে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৫ জন আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে ৩০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, শীতকালীন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শীতকালীন রোগের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এবার ১ নভেম্বর থেকে সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে একক রোগ হিসেবে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। এরপরই শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের শিকার হয়েছে মানুষ। এছাড়া জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ নানা রোগ-ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। জেলাভিত্তিক তৈরি করা তালিকায় দেখা যায়, কোনো জেলায় ডায়রিয়া, আবার কোনো জেলায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তবে বিগত বছরগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, নভেম্বর থেকে শীতকালীন রোগের প্রকোপ শুরু হয়। ডিসেম্বরে রোগী বেশি হয়। তবে এ বছর শেিতর ব্যপ্তি অনেক বেশি তাই এর প্রভাব এখনও পড়ছে। মার্চে গরম শুরু হলে তখন এসব রোগের প্রকোপ কমে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি) সরেজমিনে ঘুরে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। সেখানে ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৪ হাজার রোগী আইসিডিডিআর’বিতে ভর্তি হয়েছে। আইসিডিডিআরবি’র ডায়রিয়া ডিজিজ ইউনিটের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আজহারুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর শীতের এই সময়ে ডায়রিয়ায় মানুষ অধিকহারে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই হার বেশি। রোটা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে প্রতিবছর শীতকাল খুব একটা দীর্ঘ না হওয়ায় কিছুদিন রোগী বেড়ে শেষে হয়ে আক্রান্তের সংখ্যা কমে যেতো। এ বছর দীর্ঘদিন ধরে শীত চলায় রোগীর চাপ কমছেনা।
এদিকে শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতালেও রোগীর ভিড় বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের রোগতত্ত¡বিদ কিংকর ঘোষ জানান, কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগ নিয়ে বেশিরভাগ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
জাতীয় রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর বলেন, শীতকালে শিশুদের মধ্যে কমন কোল্ড অর্থাৎ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বিশেষ করে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি গরম কাপড় পরিধান করলে এটি ভালো হয়ে যায়। এছাড়া শীতকালে পানির সংকট সৃষ্টি হয়। অনেক জায়গায় মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না। বিশুদ্ধ পানির অভাবে রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়। তাই পানি পানের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি সরাসরি পাওয়া না গেলে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে তা পান করতে হবে। এছাড়া শীতে তাপমাত্রা কম থাকে। তখন কোনো খাবার উন্মুক্ত স্থানে রাখা হলে তাতে রোগ-জীবাণু সহজে বেঁচে থাকতে পারে।
ঢাকার বায়ুমান সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান এ নাসের খান জানিয়ছিলেন, মূলত চার কারণে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ছে। এগুলো ঢাকার চারপাশের উটের ভাটা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্ট ধুলা ছড়িয়ে পড়ে, যানবাহনের ইঞ্জিন থেকে নির্গত ধোঁয়া ও রাসায়নিক পদার্থ এবং শিল্পকারখানা থেকে নির্গত নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ও ধোঁয়া।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, শীতের কারণে মানুষের সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়াসহ কিছু ভাইরাসজনিত রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা যায়। বাতাসের আদর্্্রতার পরিবর্তন ঘটে, বাতাসে ধুলোবালি বেশি থাকে, তাই শীতকালে এসব রোগ বেশি হয়। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে অ্যাজমা কিংবা হাঁপানি এবং শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে যতটা সম্ভব ধূলিকণা এড়িয়ে চলতে হবে। এজন্য মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। একইসঙ্গে রোটা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কারণ শীতকালে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। অনেকে বিশুদ্ধ পানি পায় না। তাই পানিকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। তাহলে এসব রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।