পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধর্ম না উন্নয়ন? এই প্রশ্নে দ্বিতীয় বিকল্পকেই বেছে নিল ভারতের রাজধানী দিল্লি। তৃতীয়বারের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে চলেছেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। আসন কিছুটা কমলেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। এদিকে, আসন বাড়লেও ধর্মীয় মেরুকরণ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি), জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর)-এর ধাক্কায় এ বারও দিল্লির মসনদ অধরাই থেকে গেল বিজেপির কাছে। এ নিয়ে গত দুই বছরের মধ্যে সাতটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হারল প্রধানমন্ত্রী মোদির দল বিজেপি।
বুথ ফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিলই। গতকাল সকালে ইভিএম এর ভোট গণনা শুরু হতেই দিকে দিকে আপের জয়জয়কার। গণনা শেষে দেখা গেছে ৬২ টি আসন পেয়ে দিল্লিতে ফের ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করেছে আপ। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তারা পেয়েছিল ৬৭ টি আসট। বিজেপি পেয়েছে ৮ টি আসন। ভরাডুবির মধ্যে বিজেপির কাছে একমাত্র সন্ড্বেনা, গত বারের চেয়ে আসন বাড়ানো। গতবার তারা পেয়েছিল ৩ টি আসন।
জয়ের পরেই দিল্লিতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বার্তা দিতে আসেন কেজরীওয়াল। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই জয় মানুষের জয়। কাজে বিশ্বাস রেখে ভোট দিয়েছেন সকলে। নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা করেছেন।’ দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় বার আম আদমি পার্টির উপর ভরসা রাখার জন্য দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ। যারা আমাকে নিজের ছেলে বলে মনে করেন, যারা আমাদের ভোট দিয়েছেন, আজকের এই জয় তাদের জয়।’ এর পর নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকেও দিল্লিবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেন কেজরীওয়াল।
এদিকে, বিকালে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি জেপি নাড্ডা শুভেচ্ছাবার্তা জানান কেজরীওয়ালকে। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘বিজেপি এই ফল মেনে নিয়েই আগামী দিনে এগোবে। উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি বিষয়ে নজর থাকবে। বিরোধী হিসেবে আমরা গঠনমূলক ভ‚মিকা পালন করব।’ কেজরীবালকে ওই টুইটেই অভিনন্দনও জানান নাড্ডা।
গতকাল সকালে গণনা শুরুর আগেও এই ফল অনুমান করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। দিনের শুরুতেই বুথফেরত সমীক্ষার ফলকে নস্যাৎ করে দিয়ে বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি বলেন, আমরা ৪৮এর বেশি আসন পাব। বিকালে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যেয়ে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘মতদানের জন্যে ধন্যবাদ। এই জনাদেশ শিরোধার্য। আমার আশা, দিল্লির মানুষের চাহিদা পূরণ করবে নতুন সরকার।’ ভরাডুবি নিয়েও এদিন মুখ খুলেছেন মনোজ। তার কথায়, ‘আমরা হয়তো সাতটি আসন পাব। এই ধরনের ব্যর্থতা হতাশা আনে। তবে আমি আমাদের সমর্থকদের বলব, নিরাশ হবেন না। মানুষের মতকে স্বীকার করে নিতে হবে।’
কিন্তু কী এমন ম্যাজিক দেখিয়েছেন কেজরীওয়াল? প্রথম বার ৪৫ দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি কার্যত বোকামিই করেছিলেন বলে অনেকেই কটাক্ষ করেছিলেন সে সময়। কিন্তু সেটা যে লম্বা দৌড়ের প্রস্তুতি ছিল, তা বোঝা গিয়েছে গত পাঁচ বছরে কেজরীওয়ালের উন্নয়নের রাজনীতিতে। দিল্লিবাসীর জন্য বিদ্যুতের বিল প্রায় মওকুফ করে দেয়া, মহিলাদের জন্য বিনাম‚ল্য বাসযাত্রা, বিনা পয়সায় ২০ লিটার পর্যন্ত পানি দেয়ার মতো জনমুখী প্রকল্পের উপর আস্থা রেখেছেন দিল্লিবাসী। তার সঙ্গে ছিল প্রায় দুর্নীতিহীন সরকার উপহার দেয়া।
অথচ কয়েক মাস আগের লোকসভা ভোটেও ভরাডুবি হয়েছিল আপের। দিল্লির সাতটি আসনের একটিতেও জিততে পারেনি আপ। সব কটি আসন ঝুলিতে পুরেছিল বিজেপি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিধানসভা নির্বাচনে যে ভাবে আপ ফের ক্ষমতায় ফিরল, তার কৃতিত্ব একমাত্র উন্নয়নের রাজনীতি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তার সঙ্গে সিএএ, এনআরসি নিয়ে বিজেপির একগুঁয়েমি, শাহিন বাগ, জেএনইউ-তে হামলার মতো ঘটনাও দিল্লির ভোটে প্রভাব ফেলেছে বলেই মত পর্যবেক্ষকদের।
২০১৪ সালের পর ভারত জুড়ে আছড়ে পড়েছিল নরেন্দ্র মোদি ঢেউ। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই ঢেউয়ে ভাটা পড়তে চলেছে। কেননা দেখা যাচ্ছে গত দুই বছরে ৭ রাজ্যে হার হয়েছে বিজেপির। সদ্য দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে স্বপ্ন দেখে ছিল বিজিপি শিবির, কিন্তু মঙ্গলবার যত সময় এগিয়েছে, ততই সেই আশা ফিকে হয়েছে। দিল্লিসহ ১২টি রাজ্যে এখনও বিজেপি বিরোধী দলগুলির সরকার রয়েছে। এনডিএর সরকার রয়েছে অন্য ১৬টি রাজ্যে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ মানুষ এই রাজ্যগুলিতে বাস করে। কংগ্রেস নিজে বা অন্য দলের সঙ্গে জোট বেঁধে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, পাঞ্জাব, পুদুচেরিতে ক্ষমতায় রয়েছে। ডিসেম্বর ঝাড়খন্ডেও সরকার গঠনের পরে কংগ্রেসের বর্তমানে মোট ৭টি রাজ্যে সরকার রয়েছে।
এদিকে দিল্লিতে, আম আদমি পার্টি টানা তৃতীয়বারের মতো জয় নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে শাসন ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, কেরালায় সিপিআই (এম) নেতৃত্বাধীন জোট, অন্ধ্রপ্রদেশে ওয়াইএসআর কংগ্রেস, ওড়িশায় বিজেডি এবং তেলেঙ্গানায় শাসন ক্ষমতায় রয়েছে টিআরএস। আর একটি রাজ্য তামিলনাড়ু, যেখানে বিজেপি এআইএডিএমকে সঙ্গে নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিল, কিন্তু সে রাজ্যে তাদের দলের কোনও বিধায়ক নেই। সুতরাং, ওই রাজ্যেও ক্ষমতার অংশীদার নয় গেরুয়া শিবির।
অথচ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেকটাই ভাল অবস্থানে ছিল এনডিএ। বিজেপি এবং তার জোটশক্তির হাতে ১৯টি রাজ্য ছিল। তার এক বছর পরে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের মতো তিনটি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতা হারিয়েছে। ওই রাজ্যগুলিতে এখন কংগ্রেস সরকার রয়েছে। সূত্র : টিওআই, টাইমস নাউ, এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।