পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারলেনে উন্নীত করা ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় সড়কের উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চারলেনে উন্নীত সড়ক দুটি সরকারে পক্ষ থেকে এই দুই রুটের যাত্রীদের জন্য ঈদ উপহার। তিনি বলেছেন, ব্যয়বহুল এবং শ্রমসাধ্য এই কাজের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে চারলেনে উন্নীত করায় আরো ২৭৮ কিলোমিটার মসহাসড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো, যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করবে। তিনি আরো বলেছেন, সামনেই ঈদ। ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষ ঈদের ছুটিতে যাবেন গ্রামেগঞ্জে, নিজ বাড়িতে। এ দুটি মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণের ফলে এ রুটে যাতায়াতকারী ঘরমুখো মানুষের ভ্রমণ পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় নির্বিঘœ ও সহজ হবে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় তিনি আরো বলেছেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক নেটওয়ার্কে চিহ্নিত ১৪৪টি দুর্ঘটনা প্রবণ স্থানে যানবাহন চলাচল নিরাপদ করার নিমিত্তে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করণের ফলে সাড়ে ৪ ঘন্টায় যাতায়াত সম্ভব। অনুরূপভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত করতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হতো। এখন তা অর্ধেকে নেমে আসবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এসডব্লিউও (পশ্চিম) যৌথভাবে প্রকল্পটি ৪টি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করেছে। উদ্বেধনী অনুষ্ঠানে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক , সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদের সচিববৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ ,কূটনৈতিক মিশনের সদস্যরা, উন্নয়ন সহযোগীসহ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প জাতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের আওতাধীন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকার সড়কপথে যোগাযোগ সহজতর, দ্রুত, যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হতে নেয়া হয়। লক্ষ্য অর্জনে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের কাঁচপুর (মুক্তিসরণি) হতে দাউদকান্দি পর্যন্ত অংশে একমিটার প্রশস্ত ডিভাইডারসহ চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সমাপ্ত হয়েছে। দাউদকান্দি হতে চট্টগ্রামের সিটি গেইট পর্যন্ত ১৯০.৪৮ কিলোমিটার অংশকে চারলেনে প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি এডিপি অনুমোদিত প্রকল্প। মোট ১৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক নির্মাণে ১০টি প্যাকেজ ও সেতু নির্মাণে ৩টি প্যাকেজ তথা পূর্তকাজে মোট ১৩টি প্যাকেজ, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিষয়ে ১টি ও আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগে ১টি প্যাকেজ রয়েছে। অন্যদিকে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮৭ কিলেমিটার দীর্ঘ জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কটিতে মিডিয়ান নির্মাণসহ ১৫৫ টি কালভার্ট, ৫ টি নতুন সেতু, ১টি ফ্লাইওভার, ১টি রেলওভার পাস, পথচারীদের নিরাপদ সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে ৪টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়কটির ন্যূনতম প্রশস্ততা ২১.২ মিটার এবং বাজার ও বাণিজ্যিক অংশে প্রশস্ততা প্রায় ২৫-৩৫ মিটার। এ সড়কের বিশেষ দিক হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সড়কের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাস-বেসহ ৩ হাজার ৪২৫ মিটার কংক্রিট পেভমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক ব্যবহারকারীদের ভ্রমণ নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়েজনীয় সাইন সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আলোচ্য মহাসড়ক, দুটি চারলেইনে উন্নীতকরণের নানামাত্রিক ইতিবাচক প্রভাব যেমনি সাধারণের উপর পড়বে তেমনি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। যদি সড়ক নিরাপদ রাখা সম্ভব হয় তাহলে একদিকে যেমন সময় বাঁচানো যাবে তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয়ী হবে। দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী , সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
চারলেনে উন্নীতকরণ উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়েই সরকার দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটিকে চারলেনে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি ঢাকার সাথে ময়মনসিংহের যোগাযোগ সহজতর করতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত প্রায় ৮৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে মহাসড়কগুলোকে কোন অবস্থাতেই অবৈধ দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। আলোচ্য মন্ত্রীও বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছেন। এপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মহাসড়কগুলোকে অবৈধ দখলমুক্ত করা না গেলে প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবেনা। অন্যদিকে দুর্ঘটনা প্রবণনতা রোধে সিগনালিং এবং বাঁক ঘোরার ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা জরুরি। ঈদ সামনে রেখে জনগণকে খুশি করতে আলোচ্য মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করা হলেও তার প্রকৃত সুফল লাভ হবে যখন প্রকৃতই যাত্রা নির্বিঘœ হবে। প্রধানমন্ত্রীও নির্বিঘœ যাত্রার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে আন্তরিক হবেন-এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।