নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
গ্যালারিতে ঢাক-ঢোল ও তবলার সঙ্গে গর্জনের সুর, ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ’। উড়ছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা লাল-সবুজের পতাকা। উল্টোদিকে ভারতীয় পতাকার ছায়াও খুঁজে পাওয়া গেলনা। বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন! না। স্বপ্ন নয়, সত্যি।
প্রায় দশ হাজার কিলোমিটার দূরে, সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের ফাইনাল ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছে বললে অবিচারই করা হবে আকবর আলীদের। সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়নদের ১৭৭ রানে গুটিয়ে দেয়ার পর ৩ উইকেটে হারের তিক্ত স্বাদ দিয়েছে শ্রীলংকার সাবেক ক্রিকেটার নাভিদ নাওয়াজের শীর্ষ্যরা।
জাতীয় বা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশের কোনো দল আইসিসি আয়োজিত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলল এই প্রথম। সেই তুলনায় ভারত এই মঞ্চে বেশ পুরোনো। টুর্নামেন্টের মোট ১৩ আসরের সাতটিতেই ফাইনাল খেলেছে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দল, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চারটিতে। যার শেষটি ২০১৮ সালে। বিপরীতে বাংলাদেশের এর আগে সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ২০১৬-তে সেমিফাইনাল খেলা। সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম-মেহেদী হাসান মিরাজদের উত্তরসূরীরা তাই নতুন এক ইতিহাসই গড়ে ফেলল। যেই ইতিহাস মুছে দিয়েছে সাবেকদের হারের যন্ত্রণা।
আজ রোববার শিরোপাজয়ের লক্ষ্য ছিল ১৭৮ রান। ব্যাটহাতে পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান। তাদের আত্মবিশ্বাসের সামনে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছিল এবারের আসরে সব প্রতিপক্ষকে অলআউট করা ভারতীয় বোলাররা। ৮ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৪ রান। পরের ওভারে রবি বিশনোইকে মাঠের বাইরে উড়িয়ে দলীয় পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তানজিদ। কিন্তু তার তিন বল পরেই একটি গুগলি ঠিকমতো পড়তে না পেরে ভুল শর্টে ১৭ রানে ক্যাচ আউটে ফেরেন তানজিদ।
এই উইকেট হারানোর পর আরেকটি ধাক্কা বাংলাদেশ খায় ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ২৫ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হলে। দশম ওভারে আকাশ সিংয়ের বলে পায়ে চোট পান তিনি, মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কয়েক ওভার খেললেও মাঠ ছাড়তে হয়েছে। এরপর অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলে যুবারা। দলীয় সংগ্রহ ৬২ থেকে ৬৫তে যেতেই ফিরে যান মাহমুদুল হাসান জয় (৮), তৈহিদ হৃদয় (০) ও সাহাদাত হোসেন (১)। এই তিনটি উইকেটই তুলে নেন সেই রবি বিশনোই। তারপর শামীম হোসেনকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করেছেন অধিনায়ক আকবর আলী। ৭ রানে সুশান্ত মিশ্রর বলে ক্যাচ আউটে ফেরেন তিনি। বলহাতে দুর্দান্ত অভিষেক একই বোলারের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হন। অথচ বিদায়ের এক বল আগেই পেয়েছিলেন জীবন। অথচ কাজে লাগালেন কই? এরপর অধিনায়কের সঙ্গীন হন রিটায়ার্ড হার্ট থেকে ফেরা ইমন। ৪১ রানের চমৎকার একটি জুটি ভেঙে যায় বাঁহাতি ওপেনারের বিদায়ে। জয়সাওয়ালের বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ৪৭ রান করেন ইমন।
এর আগে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। সতর্ক শুরু করে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। সপ্তম ওভারে দিব্যাংশ সাক্সেনাকে (২) ফেরান অভিষেক দাস। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ভারতীয় ওপেনারের ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়। এরপর যশস্বী জয়সাওয়াল ও তিলক ভার্মার ৯৪ রানের শক্ত জুটি ভাঙেন তানজিম হাসান সাকিব। অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। উইকেটটি নেন রাকিবুল হাসান।
ভারতকে অল্প রানে আটকে রাখতে বড় ভূমিকা শরিফুলের। ৪০তম ওভারের পঞ্চম বলে ৮৮ রান করা জয়সাওয়ালকে ও পরের বলে সিদ্ধেশ বীরকেও এলবিডাব্লিউ করেন বাঁহাতি পেসার। এই ধাক্কায় ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং অর্ডার। টানা দুই ওভারে দুটি রান আউট হয়।
অভিষেক পরের ওভারের প্রথম ও শেষ বলে দুটি উইকেট নেন। বোল্ড হন আনকোলেকার (৩)। কার্তিক ত্যাগী রানের খাতা না খুলে আকবরের গ্লাভসে ধরা পড়েন। উইকেট হারানোর মিছিল কিছুক্ষণের জন্য থেমেছিল আকাশ সিংয়ের সঙ্গে সুশান্ত মিশ্রের জুটিতে। অবশ্য ৫ রানের বেশি তারা যোগ করতে পারেননি। ৪৮তম ওভারে সাকিবের দ্বিতীয় বলে ডিপ থার্ড ম্যানে সুশান্তের (৩) দারুণ ক্যাচ ধরেন শরিফুল। তাতে ২০০ রানের অনেক আগেই গুটিয়ে যায় চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেক সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। দুটি করে পান সাকিব ও শরিফুল।
সাম্প্রতিক অতীত বিবেচনায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল বাংলাদেশের জন্য ছিল প্রতিশোধের মঞ্চও। গত বছরে ভারতের কাছে দুটি ফাইনাল হেরেছে বাংলাদেশ। একটি শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনালে, আরেকটি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে। এর আগের বছর এশিয়া কাপের সেমিতেও প্রতিবেশী দেশটির কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ।
এবারের আসরে জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করা, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে একপ্রকার উড়িয়ে (১০৪ রানে জয়) দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সেমি। ধারা ধরে রেখে সেমিতে নিউজিল্যান্ডকে ২১১ রানে আটকে অভিজ্ঞতার স্ম্ফুরণে ৬ উইকেটে ফাইনাল নিশ্চিতকরণ।
ফাইনালে ওঠার পথে মাহমুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরি, কোয়ার্টারে তানজিম হাসান তামিম, তৌহিদ হৃদয় ও শাহাদাত হোসেনের ফিফটি, টুর্নামেন্টজুড়ে বাঁহাতি স্পিনে রাকিবুল হাসানের হ্যাটট্রিক ও ইনিংসে ৫ উইকেটের মতো সাফল্য, বাঁহাতি পেসে শরীফুল ইসলাম ও তানজিদ হাসান সাকিবের নিয়মিত ব্রেক থ্রু আর সর্বোপরি ধারাবাহিক উজ্জীবিত ফিল্ডিং। সব ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবারতো বিশ্ব জয়ই করে ফেলল যুবারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।