পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পরাজয়ের জন্য স্থানীয় এমপি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির আতাঁতের ঘটনাই মূল কারণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থীরা। এজন্য তারা দলের হাইকমান্ড এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১২৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন ১৯টিতে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৮টি, বিএনপি ৯টি, জাতীয় পার্টি ২টি, ইসলামী আন্দোলন ১টিতে পাশ করেছে। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৩১টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত, বিএনপি ৭টিতে, সতন্ত্র ৫টিতে বিজয়ী হয়েছেন। অনেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা পাশ করেছেন কিন্তু মেয়র প্রার্থীরা বিএনপির মেয়র প্রার্থীর চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। আবার অনেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অনেক বেশি ভোট পেলেও দলের কাউন্সিলর প্রার্থীরা তার অর্ধেক ভোট পেয়েছেন। আবার কিছু ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর চেয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অনেক বেশি ভোট পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগ, বিদ্রোহী প্রার্থীরা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিজয়ের জন্য দলের কাউন্সিলর প্রার্থীর বিপক্ষে তো কাজ করেছেনই, কিছু কিছু জায়গায় মেয়র প্রার্থীদের বিপক্ষেও কাজ করেছেন। বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গে আতাঁত করে দলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ যা গত নির্বাচনে প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। দলের হাইকমান্ড যদি এসব ঘটনার তদন্ত করে সুষ্ঠু ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আওয়মী লীগের ভবিষ্যত রাজনীতি হুমকির মুখে পড়বে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির শাহজাহানপুর থানার দুটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীই পরাজিত হয়েছেন। এখানে বিদ্রোহীসহ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীরা যা ভোট পেয়েছেন তার চেয়ে মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস প্রায় দুই হাজার ভোট কম পেয়েছেন। আবার বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাউন্সিলর প্রার্থীর চেয়ে দুই হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। যে ভোট কাউন্সিলর প্রার্থী পেলে বিএনপির কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে যেত। এই দুই ওয়ার্ডে আওয়াম লীগ ও বিএনপির আতাঁতের বিষয়টি এখন প্রায় প্রকাশ্যে।
১২ নং ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মামুনুর রশিদ শুভ্র। তিনি ভোট পেয়েছেন ৩৯১০টি, আওয়ামী লীগ মনোনিত গোলাম আশরাফ তালুকদার ভোট পেয়েছেন ১৪৬০টি, আরেক বিদ্রোহী শেখ সেকান্দার আলী পেয়েছেন ১৪৬৫, বিএনপির প্রার্থী রুবায়েত হোসেন পাপ্পু ভোট পেয়েছেন ২৪৩৮। এখানে ফজলে নূর তাপস ভোট পেয়েছেন ৪৬৮০টি অথচ আওয়ামীলীগের বিদ্রোহীসহ প্রার্থীরা মোট ভোট পেয়েছেন ৬৮৩৯টি। তাপস প্রায় দুই হাজার দুই শো ভোট কম পেয়েছেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ভোট পেয়েছেন ৪৪৫৬টি। অথচ বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ২৪৩৮টি। মেয়রকে বিএনপির যারা ভোট দিয়েছেন তারা কাউন্সিলরকে ভোট দেননি। তাহলে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী পাপ্পু পাশ করে যেতেন।
১১ নং ওয়ার্ডে বিএনপির বিএনপির মির্জা আসলাম শরীফ ৪৬৮৯টি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। এখানে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী হামিদুল হক খান শামীম পেয়েছেন ২৬৫৮টি ভোট। অথচ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ভোট পেয়েছে ৪১৮৮টি। মেয়রকে যারা ভোট দিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দেননি। তাহলে চিত্র পাল্টে যেত।
এই দুই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির আতাঁত হয়েছে বলে প্রশ্ন অভিযোগ তুলেছেন দুই প্রার্থী গোলাম আশরাফ তালুকদার এবং হামিদুল হক খান। ঢাকা দক্ষিণের ১১ নং হামিদুল হক খান শামীম ইনকিলাবকে বলেন, ১১ নং ওয়ার্ডে কামরুজ্জামান বাবুল সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুন্নবী ভূইয়া রাজু সরাসরি বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে আতাঁত করে তার পক্ষে কাজ করেছেন। না মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার তাপস যে ভোট পেয়েছেন দলের প্রার্থী হিসেবে আমিও কাছাকাছি ভোট পাওয়ার কথা, কিন্তু তা হয়নি।
৫৩ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূর হোসেন পরাজয়ের পেছনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য সানজিদা খানমের ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির প্রার্থী মীর হোসেন মীরু কে সানজিদা খানম সমর্থন দিয়েছেন বলে এলাকায় ওপেন সিক্রেট ছিল।
বিএনপির সাথে আতাঁতের ঘটনা আরো আলোচিত ঢাকা-৫ আসনে। সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে বৃহত্তর ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান মোল্লা শ্যামল প্রকাশ্যে বিএনপির পক্ষে মাঠে ছিলেন। ৪৯ নং ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী বাদল সরদার, ৬৬ নং ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির মতিন সাউদ, ৬৯ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সালাউদ্দিন আহমেদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। নির্বাচনের দিন শামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ৬৪, ৬৫, ৬৬ সংরক্ষিত আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জি. মনিরা চৌধুরীকে মারধর করেছেন মাহফুজুর রহমান মোল্লা শ্যামল এমন অভিযোগ করেছেন মনিরা। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকেই নির্বাচনের দিন চড় থাপ্পড় দিয়েছেন প্রকাশ্যে।
এছাড়া ২৮ নং ওয়ার্ডে মো. সালেহিন, ৩০ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হাসান, ৪৫ নং ওয়ার্ডে হেলেন আক্তার, ৪৭ নং ওয়ার্ডে নাসির আহমেদ ভূইয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের মেকানিজমে পরাজিত হয়েছেন।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটির ৪৮ নং ওয়ার্ড এ দলীয় মনোননয়ন পেয়েছিলেন দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মাসুদুজ্জামান মিঠু। কিন্তু ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা, সাবেক মহানগর যুবলীগ নেতা ও খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত দেওয়ানের ষড়যন্ত্রের কারণে পরাজিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিঠু। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট নেতারা কেউ তার জন্য কাজ তো করেননি বরং বিএনপি বিজয়ী প্রার্থী আলী আকবর আলীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, নৌকা ভোট পেয়েছে ৯৩০০ আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আমি পেয়েছি ৬ হাজার দুইশো’র কিছু বেশি। বড়–য়ায় তিনটি কেন্দ্রে নৌকা ভোট পেয়েছে ২ হাজার সাতশো’র বেশি, ধানের শীষ ভোট পেয়েছে ১১৫৭। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ২১৪৬টি, আমি ভোট পেয়েছি ১১৯৭টি। নৌকা যদি এতো বেশি ভোট পায় তাহলে নৌকার প্রার্থী হিসেবে আমি প্রায় ষোল’শ ভোট কম পেলাম কিভাবে। আমাদের দলের নেতারা বিএনপির সাথে আতাত না করলে এমনটা কখনো হতো না। মিঠু আরো বলেন, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলী দেওয়ান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন আর বলেছেন শেখ হাসিনা যা বলবে তা কী সব শুনতে হবে নাকি? দন কেরামত আলী দেওয়ান। এর পর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভোট নেয়া হয়।
৪৯ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান নাঈমের কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সফিউদ্দিন মোল্লা পনু। সফিউদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের সভঅপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাড. সাহারা খাতুন প্রকাশ্যে নাঈমের পক্ষে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ডেকে ডেকে নাঈমের পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন।
এছাড়া ৩ নং ওয়ার্ডে জিন্নাত আলী মাদবর, ৬ নং ওয়ার্ডে সালাউদ্দিন রবিন, ১৪ নং ওয়ার্ডে মইজুদ্দিন, ৩১ নং ওয়ার্ডে আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ৪১ নং ওয়ার্ডে আব্দুল মতিন, ৪২ নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম পরাজিত হয়েছেন।
এদিকে কিছু কিছু ওয়ার্ডে বিপরীত ঘটনায় রয়েছে। আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা পরাজিত হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ জনগণ ব্যাপক খুশি হয়েছেন। কারণ সেসব কাউন্সিলরদের অত্যাচার, মাদক ব্যবসা, পানি, গ্যাসের লাইন নিতে রাস্তার কাটার ফি বাবদ বিশ থেকে লাখ টাকা চাঁদা দেয়া, বিভিন্ন সার্টিফিকেট নিতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হত সেসব ওয়ার্ডে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ; সেসব প্রার্থীরা পরাজিত হওয়ায় এলাকার মানুষ খুশি। আরো কিছু ওয়ার্ডে সেসব বিতর্কিতরা পরাজিত হলে সেসব ওয়ার্ডের জনগণও খুশি হতো।
ঢাকা দক্ষিণে ৭ নংওয়ার্ডে আব্দুল বাসিত খান বাচ্চু, ৫২ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ছিলেন নাছিম মিয়া। এখানে দলের বিদ্রোহী রুহুল আমিন বিজয়ী হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা এবং সাধারণ জনগণ খুশি হয়েছেন। ৬০ নং ওয়ার্ডে লুৎফর রহমান রতন পরাজিত হওয়ায় সবাই খুশি। ৬১ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ আলম দনিয়া এলাকার বড় বাড়ির যোগাযোগ রক্ষা করে নির্বাচন করায় পরাজিত হয়েছেন। বড় বাড়িতে চিহ্নিত পলাতক সন্ত্রাসীদের আখড়া। সন্ত্রাসীদের দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত ছিল। তিনি পুরনো আওয়ামী লীগার হলেও পরাজিত হওয়ায় এলাকার আওয়ামী লীগ ও জনগণ খুশি। ৬৯ নং ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান হাসু বিতর্কিত, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। এখানে বিদ্রোহী সালাউদ্দিন আহমেদ পাশ করায় সবাই খুশি। ঢাকা উত্তরে ২৯ নং ওয়ার্ডে নুরুল ইসলাম রতন পরাজিত হওয়াতে স্থানীয় জনগণ প্রফুল্ল।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।