Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশি কর্মীদের টাকা পাচার

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিদেশি কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে। বৈধ ও অবৈথভাবে কমপক্ষে আড়াই লাখ বিদেশি কর্মী কাজ করছে। এদের মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার পর্যটন ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা অনিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিকরা অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিজ দেশে টাকা পাচারের কারণে আমাদের রাজস্ব বিভাগ বছরে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে টিআইবি রিপোর্টে বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের রিপোর্ট এটিই প্রথম নয়। গত বুধবার প্রকাশিত টিআইবি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’। এই রিপোর্টে বিদেশিদের অর্থপাচার, অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান পরিস্থিতির পাশাপাশি অর্থপাচার, অব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির নেপথ্যে সুশাসনের অনুপস্থিতিকেই তুলে ধরা হয়েছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা সুখকর নয়। সব খাতেই মন্দা ও নেতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতেও লাখ লাখ বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে কাজ করে প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। দেশে শিক্ষিত, দক্ষ-অদক্ষ লাখ লাখ তরুণ বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে ন্যূনতম কর্মসংস্থানের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

দেশে দক্ষ, অদক্ষ জনশক্তির কোনো সংকট নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী যুবকরাও যেখানে সামান্য বেতনের চাকরির জন্য ঘুরছে সেখানে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা কোনো কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ বা দক্ষ জনশক্তি নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। সে সংখ্যা বিভিন্ন সেক্টরে কয়েক শ’ হতে পারে। কিন্তু পর্যটন ভিসায় এসে লাখ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশের চাকরির বাজার দখল করবে, এমন বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। যাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ও উদাসিনতায় দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। টিআইবি যে হিসাব দিয়েছে দেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীর সংখ্যা তার চেয়ে বহুগুণ বেশি বলে জানা যায়। বিদেশে কর্মরত আমাদের এক কোটির বেশি শ্রমিক বছরে যে পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠায় তার একটি বড় অংশই বৈধ-অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকরা নিজ নিজ দেশে পাচার করে দিচ্ছে। অন্তত ৪০টি দেশের কর্মী বাংলাদেশে কাজ করছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গেলেও এদের অন্তত ৮০ শতাংশই ভারতীয়। একদিকে ভারতের লাখ লাখ নাগরিক ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে বৈধ ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই কাজ করে বছরে শত শত কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত এলাকায় নিরীহ বাংলাদেশিরা বিএসএফ’র গুলিতে হতাহত হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় দেশের কর্মসংস্থান, টাকা পাচার, রাজস্ব আয় এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে অবৈধ বিদেশিদের অবস্থান ও নিয়োগের ক্ষেত্রে লাগাম টানতে হবে।

বাংলাদেশে ঠিক কত সংখ্যক বিদেশি কর্মী কাজ করছে, তাদের ওয়ার্ক পারমিটসহ যাবতীয় তথ্য জানাতে বিডা, বেপজা ও এনজিও ব্যুরো কর্তৃপক্ষকে গত ডিসেম্বরে নির্দেশ জারি করেছিলেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ ৬০ দিনের সময় দিয়ে এসব তথ্য উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ১ লাখ বিদেশি কর্মী কাজ করছে বলে কেউ কেউ দাবি করলেও বাংলাদেশে কত সংখ্যক বিদেশি কর্মী কাজ করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কোনো সংস্থার হাতেই নেই। তবে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিদেশি কর্মী নিয়োগের আগে উক্ত পদে স্থানীয় যোগ্য প্রার্থী খোঁজা হয় না এবং সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিয়মরক্ষার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। এতে স্পষ্টতই বোঝা যায়, বিদেশি কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত থাকে। এ ক্ষেত্রে নিয়োগকারী সংস্থার মতলববাজি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিডা, বেপজা ও এনজিও ব্যুরোর সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি বা ব্যর্থতাকে দায়ী করা যায়। লাখ লাখ বিদেশি কর্মীর অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজ করার সুযোগ থাকায় একদিকে দেশের লাখ লাখ কর্মহীন যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়েছে, অন্যদিকে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আনরেজিস্টার্ড বিদেশি নাগরিকরা দেশের নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের কর্মসংস্থান ও সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ বিদেশি কর্মীদের ফেরত পাঠাতে হবে। বৈধভাবে বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ কমিয়ে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ কারণে আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান বেশ চাপের মুখে পড়ছে। সেখানে আমাদের সীমিত অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান এমন অবারিত থাকতে পারে না। অনতিবিলম্বের এর লাগাম টেনে ধরতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিপোর্ট


আরও
আরও পড়ুন