Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ (রহ.)

অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম মুহাম্মদ খান সিরাজী | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

শিরোনাম যুক্ত প্রবন্ধের প্রারম্ভে হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানীর (রহ.) কিঞ্চিত প্রশংসা করা সমীচিন মনে করি। কেননা যে মহামনীষী আল্লাহ্-রাছুলের দ্বীন-ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাকে প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে যুগপত অবদান রেখে চির স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন, তাঁর সম্পর্কে দু’একটি পরিচিতিমূলক কথা না বললেই নয়। এ উপমহাদেশে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত মহান অলীকুল সম্রাট হযরত গাউছুল আ’যম মাইজভান্ডারী আল্লামা শাহ্সূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রহ.)’র স্থলাভিষিক্ত আপন ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত গাউছুল আ’যম বাবাভান্ডরী আল্লামা শাহ্সূফী সৈয়দ গোলামুর রহমান (রহ.)’র খিলাফতপ্রাপ্ত মেঝ শাহ্জাদা সুলতানুল মাশায়েখ আল্লামা শাহ্সূফী সৈয়দ আবুল বশর মাইজভান্ডারী (রহ.)’র খিলাফতপ্রাপ্ত পুত্র হলেন হযরত শায়খুল ইসলাম, আল্লামা শাহ্সূফী সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল্-মাইজভান্ডারী (রহ.)’। তিনি নবী বংশের ৩০ তম আওলাদ ও আওলাদে গাউছুল আ’যম মাইজভান্ডারী। মাইজভান্ডার শরীফের শরাফতকে তিনি বিশ্ব পরিমন্ডলে ২০০ দুইশত বছর এগিয়ে নিয়ে গেছেন বলে আমার দাবী। তাঁর মতো যোগ্য, দক্ষ, বাগ্মী, দূরদর্শী আধ্যাত্মিক গুরু মাইজভান্ডার পরিমন্ডলে বিরল। তিনি হলেন অলিকুল সম্রাট।

মাইজভান্ডারী ত্বরীক্বা, ইসলাম ধর্মের শান্তির বাণী, আধ্যাত্মিক দীক্ষা, দ্বীনি শিক্ষার প্রচার-প্রসার, মানব চরিত্র সংশোধন ও মানবাত্মার পরিশুদ্ধি করণে তাঁর বিশ্ব বিচরণ অতুলনীয়। তাঁর পূর্ব পুরুষ সবাই ছিলেন ধর্মীয় জ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষার অধিকারী ও খ্যাতনামা আলিম-ফাজিল; ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুসলিম মনীষী। সাথে সাথে তাঁরা সকলেই ছিলেন আধ্যাত্মিক দীক্ষা গুরু ও অলিকুল সম্রাট। এদেশে উচ্চতর দ্বীনি শিক্ষার বয়স বেশী না হলেও ধর্মীয় সাধারণ ও প্রাথমিক জ্ঞানের জন্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বহু প্রাচীন। সেকালে মুসলিম রাজা-বাদশা, জমিদার, খ্যাতিমান ব্যক্তিরাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও দ্বীনি শিক্ষার প্রসারে কাজ করে গেছেন। আল্লামা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী (রহ.)’র তাঁদেরই অনুসৃত পথে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও প্রসারের কাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইরানের কবি শেখসাদী বলেন : “কে বে ইলমে নতঁওয়া খোদারা সিনাখ্ত্- অর্থ: ইলম বা ধর্মীয় জ্ঞানার্জন ব্যতীত আল­াহর পরিচয় লাভ করা যাবেনা।

দ্বীনি শিক্ষার প্রতি হুজুর কেবলার আগ্রহ ছিল প্রবল। এ প্রেরণা তাঁকে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় বিপুলভাবে উৎসাহীত করে। তাই তিনি তাঁর জন্মস্থান মাইজভান্ডার দরবার শরীফে সর্বপ্রথম দরসে নিজামী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান গড়ার সূত্রপাত করেন। পরবর্তীতে তিনি দেশে-বিদেশে তার বহু শাখা-প্রশাখার ভিত্তি স্থাপন করেন যা বর্তমানে মহা মহিরূপে গগন চুম্বি খ্যাতি অর্জনে সমর্থ হয়েছে। দ্বীনি শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর যে অকল্পনীয় আগ্রহ ও আকর্ষণ ছিল তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো- তিনি শুধু নিজ প্রতিষ্ঠানে নয়; বরং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অকাতরে বিপুল পরিমানে অর্থ অনুদান দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করতেন।

আলেম-ওলামাদের প্রতি তিনি ছিলেন আন্তরিকভাবে স্নেহাশীষ। প্রয়োজনে তাদেরকে আর্থিক সাহায্য সহযোগীতা করতেও কার্পণ্য করতেন না। তাঁর আলেম প্রিয়তার কথা সর্বজন বিদিত। তাঁরাও তাঁকে সুযোগ্য অভিভাবক হিসেবে মনে স্থান দিতেন।

মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি তিনি খুবই স্নেহ প্রবণ ছিলেন। ফলে তাদেরকে তিনি নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করতেন, খোজ খবর নিতেন এবং তাদের অভাব-অনটনে উপযুক্ত অভিভাবকের মতো সাহায্য-সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।

ইয়াতিম অনাথদের জন্য তিনি ছিলেন পিতৃতুল্য অভিভাবক। তাদের জন্য মাদ্রাসা স্থলে পৃথক আবাসিক ছাত্রাবাস তৈরী করে সেখানে বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা দান, কিতাব পত্র ও পোষাক পরিচ্ছদ প্রদানের ব্যবস্থা করে তিনি দরিদ্র-অসহায়দের লিখা পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। অনাথ ইয়াতিম ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সুবিধার্থে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যাঁর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে এ দেশের মাটিতে। এক কথায় তিনি ছিলেন একাধারে দ্বীনি মাদ্রাসা প্রিয়, আলেম প্রিয়, এতিম অনাথ প্রিয়, সুন্নিয়ত ও সুন্নি প্রিয় মহান ব্যক্তি। তাঁর এ বদান্যতা ও দয়াদ্রতা কখনো ভোলার মতো নয়।

কোরআন সুন্নাহর জ্ঞানার্জনে আবশ্যক সর্বোচ্চ সহযোগীতা, পরিবেশ সৃষ্টি, ক্ষেত্র প্রস্তুত, পরিচর্যা ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন ত্বরীক্বায়ে মাইজভান্ডারীয়ার দিকপাল, হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী (রহ.)। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ধর্মীয় শিক্ষার নামে অশিক্ষা-কুশিক্ষা, সংঘাত সৃষ্টি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ এসব অনৈতিক কাজের উর্ধ্বে উঠে বাস্তব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদার ভিত্তিতেই পরিচালনা করেন। তাঁর এ প্রতিষ্ঠান সমূহের ঈর্ষান্বিত সাফল্য দেখে তাঁর স্বতীর্থদের অনেকেই নতুন-নতুন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হন। তিনি শুধু তাঁর নিজ অংগনেই দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে ক্ষান্ত হননি; বরং দেশের প্রায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁর আন্তরিক আশীষ, প্রেরণা ও প্রচেষ্টায় ৩৮টি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অসংখ্য আলিম হাফিজ বের হয়ে ধর্ম-দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এসব দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা নৈতিকতা ও আদর্শের অনুসারী হয়ে সমগ্র দেশ ও বিদেশে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দ্বীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->