পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশীদের অত্যাচার, নির্যাতন, ধরে নিয়ে যাওয়া এবং গুলি করে হত্যা করা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে বিজিবি-বিএসফ বৈঠকে যেমন কোনো কাজ হচ্ছে না, তেমনি সরকারের তরফ থেকেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এই দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিএসএফ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অত্যাচার-নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে। গত মাসে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করার পর গত শুক্রবার বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তের দেড় কিলোমিটার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ৫ বাংলাদেশী নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে। এই ৫ বাংলাদেশী রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খরচাপা সীমান্ত এলাকায় পদ্মার চরে গবাদিপশু চরাচ্ছিল। এ ঘটনার পর আবারও বিএসএফ স্পীডবোটে এসে চার বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে বিজিবি তাদের ছাড়িয়ে আনে। ধরে নিয়ে যাওয়া ৫ রাখালকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক করলেও তাদের ফেরত দেয়া হয়নি। উল্টো বিএসএফ দাবী করেছে, যেখান থেকে তাদের ধরে নেয়া হয়েছে, সেই এলাকা তাদের সীমান্ত। ফলে ৫ রাখালের ফেরত পাওয়া নিয়ে তাদের পরিবার অত্যন্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। তারা আদৌ ফিরে আসবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশী নাগরিকদের তাদের ইচ্ছামতো ধরে নিয়ে যাচ্ছে, নির্যাতন করছে এবং গুলি করে মারছে। যখন-তখন হুটহাট করে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো কোনো প্রতিবাদ করা হচ্ছে না।
সীমান্তে বিএসএফ-এর অত্যাচার-নির্যাতন এবং হত্যার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মৃদুস্বরে হলেও মন্তব্য করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সীমান্তহত্যা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে সম্পর্ক তার মধ্যে সীমান্তহত্যা বেড়ে যাওয়া দুঃখজনক। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেছেন, সীমান্তহত্যা নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জাতীয় সংসদে বলেছেন, সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। হত্যা বন্ধে সরকার কূটনৈতিক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যকে পর্যবেক্ষকরা সৌজন্যমূলক বা কিছু বলতে হবে বলে বলা হিসেবে গণ্য করছেন। তাদের কথা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো। ভারতের বিপক্ষে যায়, এমন মন্তব্য করা থেকে তারা বিরত রয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, কার্যকর উদ্যোগ থাকলে সীমান্তে এর প্রতিফলন দেখা যেত। বিএসএফ-এর অত্যাচার-নির্যাতন কিছুটা হলেও কমত। বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের উদ্যোগ না থাকায় বিএসএফ ক্রমেই নৃশংস ও নিমর্ম হয়ে উঠছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি, বিএসএফ-এর নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। ঘটনা ঘটার পর পতাকা বৈঠকের মধ্যে তাদের ভূমিকা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে সমস্যার সমাধান হয় না। বিস্ময়কর ব্যাপার, বিএসএফ লাগাতার সীমান্তহত্যা ও অপকর্ম করলেও বিজিবি প্রায়ই বিএসএফ-এর সাথে রাখি বন্ধন, মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করে থাকে। সীমান্তে তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকলে বিএসএফ এভাবে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা-নির্যাতন ও অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারত না। যেসব নাগরিককে হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণ করা হচ্ছে, তা কি শুধু তাদের দোষ? ভারতের নাগরিকরা কি বাংলাদেশের সীমান্তে অনুপ্রবেশ করছে না? তখন কি বিজিবি তাদের গুলি, অপহরণ ও নির্যাতন করে? ভারতে এনআরসি’র কারণে ইতোমধ্যে যে শত শত ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের কি বিজিবি ঠেকাতে পেরেছে? গত এক মাসে বিএসএফ যে ১২ বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করেছে, তার কি প্রতিকার হয়েছে? দেশের মানুষ এসব প্রশ্নের যথাযথ কোনো জবাব পাচ্ছে না। দুঃখের বিষয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায়ই তার বক্তব্যে বাংলাদেশী নাগরিকদের সীমান্তে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নিজ সীমান্তে নির্ভয়ে তারা চলাচল করতে পারবে না কেন? বিএসএফ যে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে বক্তব্য নেই কোনো? বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত চুক্তিতে তো রয়েছে, কেউ ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করলে এবং ধরা পড়লে সমঝোতার মাধ্যমে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। বিএসএফ তো এ সমঝোতা মানছে না। এর সদস্যরা গুলি করে মারছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো কোন পদক্ষেপ নেই কেন?
সরকার ভারতের সাথে সর্বোচ্চ বন্ধুত্বের কথা বারবার বললেও ভারত যে তা আমলে নেয় না, তা সীমান্তে বাংলাদেশীদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়। ভারত বন্ধুত্বের জবাব দিচ্ছে গুলির মাধ্যমে। তাহলে এটা কেমন বন্ধুত্ব? কোনো দেশের সাথে কোনো দেশের এমন বন্ধুত্ব বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, প্রতিবেশীর এমন বৈরী আচরণ সত্ত্বেও আমাদের সরকার বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে বন্ধুত্বের সর্বোচ্চ নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করছে। আরও অনুতাপের যে, দেশে যত বিরোধী দল আছে, তাদের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। কেবল মুখে মুখে বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে। অর্থাৎ তারাও ভারতের বিপক্ষে যায় কিংবা ভারত অসন্তুষ্ট হয়, এমন কিছু বলতে অনিচ্ছুক। এটা দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু নয়। আমরা মনে করি, ভারতের এ ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সকলের সোচ্চার হওয়া উচিত। তার সীমান্তরক্ষী বাহিনী যখন-তখন এবং ইচ্ছামতো বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতর ঢুকে পড়বে, নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারবে-এমন আচরণ বরদাশত করা যায় না। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে সিরিয়াসলি আমলে নিতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে সীমান্তে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।