চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ শেষ কিস্তি ॥
বর্ণিত আয়াতও লাইলাতুল কদরের মর্যাদা সম্পর্কিত বিষয়েই আলোচনা করা হয়েছে বলে মশহুর তাফসীরকারকগণ উল্লেখ করেছেন। বর্ণিত আয়াতে এরাতে মানুষের ভাগ্যের ফায়সালার ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সিদ্ধান্তের বিষয়ও উল্লেখ রয়েছে।
লাইলাতুল কদরের যে ফাজায়েল পবিত্র কুরআনুল কারীম ও হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণনা করা হয়েছে তা অফুরন্ত। এ মর্মে মহানবী (সা.) থেকে একটি হাদীস হজরত আবু হুরায়রা (রা.) এভাবে বর্ণনা করেছেনÑ যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাব (আত্মশুদ্ধি)-এর নিয়তে কদরের রজনীতে (সালাতে) দাঁড়ালো তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় (সহিহ আল বুখারি, হাদীস নং-১৮৭১)
লাইলাতুল কদরের এ অঢেল সওয়াব তথা ফজিলতের রজনীতে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এরমধ্যে যে অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো রয়েছে তার প্রথমটি হলো যে বিষয়টা পাবার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে তা লাভের ব্যাপারটা দীর্ঘ তথা কঠোর সাধনার মাধ্যমেই অর্জন করতে হয়। দ্বিতীয়ত: মুমিনগণ যেন রাত্রি জাগরণ তথা আল্লাহর দরবারে ধর্ণা দেয়ার স্থায়ী অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে নিছক কোনো সাময়িক বা অনুষ্ঠান সর্বস্ব ইবাদত না হয় সে দিকটার প্রতিও লক্ষ্য রাখার ব্যাপার বটে। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন ওই আমলটাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট পছন্দনীয় যা অব্যাহতভাবে করা হয়। জনৈক সাহাবী (রা.) আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর ইবাদত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.)-কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, মহানবী (সা.)-এর আমল এরূপ ছিল যা তিনি সবসময় করতেন, কখনো বাদ দিতেন না সহিহ আল বুখারি।
লাইলাতুল কদরের উপস্থিতি যে মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রজনীসমূহেই রয়েছে সে সম্পর্কে বহুসংখ্যক নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণিত আছে। এ মর্মে একটা হাদীস এ রকম হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রজনীতে তালাশ কর (সহিহ আল বুখারি, হাদীস নং-১৮৭৪)
এখন আমি ই’তিকাফ সংক্রান্ত কয়েকটি কথা বলতে চাই। ই’তিকাফ মূলত বিশেষ স্থানে অবস্থান করে একাগ্রভাবে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হওয়া। ই’তিকাফের বিশেষ দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমটি হলো ই’তিকাফ কাফের প্রধান লক্ষ্য হলো লাইলাতুল কদরের রজনীর যে অজগ্র ফাজায়েল রয়েছে তা লাভ করা। মাহে রমজানের শেষ দশকের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়ার মূল বিষয় লাইলাতুল কদরের মর্যাদাময় রাত যেন কোনোক্রমেই বাদ না পড়ে সে জন্য নিজকে নিয়োজিত করা।
এ সম্পর্কিত হাদীসগুলো মধ্যে একটি এ রকমÑ আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের মধ্যের দশদিনে ই’তিকাফ বসতেন। অতঃপর এক বছর তিনি (সে নিয়মে) ই’তিকাফে বসলেনÑ যখন একুশ তারিখের রাত আসলো। এটি এ রাত ছিল, যার ভোরবেলায় তিনি ই’তিকাফ থেকে বেরিয়ে আসলেন। তিনি বললেন যে, আমার সাথে ই’তিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশদিনে ই’তিকাফ করেÑ কেননা এই (কদরের) রাত আমাকে দেখানো হয়েছে অতঃপরতা আমার থেকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে... (সহিহ আল বুখারি, হাদীস নং-১৮৮৫)। হাদীসের এ বক্তব্যে বুঝা গেল যে, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের মধ্যেই রয়েছে যা নিরবচ্ছিন্নভাবে রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে পেতে হবে। আর রমজানের ই’তিকাফ লাইলাতুল কদরকে অšে¦ষণের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে যা মহল্লার মসজিদে ই’তিকাফ কারীগণ পালন করে থাকেন।
মাহে রমজানের এ ই’তিকাফ ব্যতিরেকে মান্নতের ই’তিকাফ থাকে ওয়াজিব ই’তিকাফ বলা হয় নফলও মুস্তাহাব ই’তিকাফ যা ই’তিকাফকারীর নিয়তের উপর নির্ভর করে। এ সমস্ত ই’তিকাফের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো মহান রাব্বুল আলামীনের সাথে গভীর সম্পর্ক বা ভালোবাসা সৃষ্টি করা। মানুষকে একদিন এ কোলাহলময় পৃথিবী ছেড়ে একাকিভাবে কবরের বাসিন্দা হতে হয়, সেখানে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া বিশ্বের কোনো প্রাণীর সাথে তার কোনোরূপ সম্পর্ক থাকবে না। এ বিষয়টাকে সামনে রেখেই মুমিনগণকে সাময়িকভাবে হলেও পরিবারের কোলাহলময় পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক আল্লাহর নিকট ধর্ণা দেয়ার পরিবেশে প্রবেশ করা কর্তব্য। যেখান আল্লাহর বান্দাগণ তাকওয়া লাভ করে বিশ্ব সংসারে এক রবের বিধান বাস্তবায়নের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে আর এটাই হলো আমার ই’তিকাফের দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয়। এ মর্মে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন তাদেরকে তো আমার নিকটই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা গাশিয়া : ২৫)। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরকে লাইলাতুল কদর ও ই’তিকাফের সওয়াব লাভের সৌভাগ্য দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।