মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান বিবাদ নিরসনে আলোচিত এবং বিতর্কিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বা ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার এ পরিকল্পনা প্রকাশের পর ইসরায়েল তা সমর্থন করলেও প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘ইসরায়েল স্বার্থ রক্ষার্থে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশিত পরিকল্পনার প্রতি হাজারবার না।’ ফিলিস্তিনের এই নেতা আরও জানান, ইসরায়েলের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হতে এবং জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করে রাষ্ট্র ঘোষণা করতে ফিলিস্তিনিরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ ।
এছাড়াও ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশের পর গাজায় ‘ফাতাহ’, ‘হামাস’ এবং ‘পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন’ একযোগে বিক্ষোভ করেছে।
শান্তি চুক্তি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমার প্রস্তাবনায় দুই পক্ষই লাভবান হবে।’ কিন্তু ট্রাম্প প্রস্তাবিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’কে ‘ডিল অব শেইম’, ‘একপাক্ষিক’ এবং আক্রমণাত্মক বলে অভিহিত করেছেন আরব বিশ্বসহ অনেক দেশের নেতারা। আবার এই চুক্তির প্রশংসাও করেছে অনেকে।
এই শান্তি চুক্তি প্রকাশের পর বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘আল-জাজিরা’ এবং মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’। ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই প্রতিবেদন।
তুরস্ক : ট্রাম্প প্রস্তাবিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’র প্রতি নিন্দাজ্ঞাপন করে এটিকে ‘মৃতপ্রসব’ এবং ফিলিস্তিনের ভূমি চুরি করার পরিকল্পনা বলে উল্লেখ করেছে তুরস্ক। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জেরুজালেম আমাদের রেড লাইন। আমরা ইসরায়েলের দখল ও নিপীড়নকে বৈধতা দেওয়ার পদক্ষেপগুলোকে অনুমতি দেব না। এটি দুই দেশের মধ্যকার সমাধানের পথকে বন্ধ করেছে এবং এর লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনের ভূখন্ড ছিনিয়ে নেওয়া।’
এছাড়াও তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির কার্যনির্বাহী প্রধান নুমান কুর্তুলমুস বলেন, ‘না! ট্রাম্প। জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী এবং মুসলিম বিশ্বের হৃদয়।’
সউদী আরব : সউদী স্টেট এজেন্সির তথ্য মতে, সউদী বাদশাহ সালমান ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এক ফোনলাপে ফিলিস্তিন ইস্যু এবং ফিলিস্তিনের অধিকার নিশ্চিত করতে সউদী আরবের সমর্থন জানিয়েছে। সউদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে এই বিস্তৃত শান্তি পরিকল্পনা প্রদানের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেবে সউদী আরব। এর ফলে এই পরিকল্পনা সংক্রান্ত কোনো মতবিরোধ থাকলে তা প্রকাশ্যে আসবে।
ইরান : ট্রাম্প প্রস্তাবিত ‘শান্তি চুক্তি’কে ‘প্রতারণা, চাপিয়ে দেওয়া এবং নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনিদের উপর আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া লজ্জাজনক শান্তি পরিকল্পনাটি এই শতাব্দীর সেরা দেশদ্রোহী এবং ব্যর্থতায় পর্যবসিত পরিকল্পনা।’
ইরানের রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানির উপদেষ্টা হেসেমেদ্দিন আশেনা টুইটারে বলেন, ‘এটি জিউনিস্ট সরকার (ইসরায়েল) এবং আমেরিকার মধ্যে একটি চুক্তি। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলাপচারিতা এই এজেন্ডায় নেই। এটি কোনো শান্তি পরিকল্পনা নয় বরং চাপিয়ে দেওয়া এবং নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা।’
লেবাননের হিজবুল্লাহ : আল-মানার সম্প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’কে ‘ডিল অব শেইম’ এবং ‘জটিল এবং প্রতারণামূলক’ বলে উল্লেখ করেছে হিজবুল্লাহ। এছাড়াও এই পদক্ষেপকে মারাত্মক বিপদজনক এবং এর ফল ভয়াবহ হবে বলে হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
ইয়েমেনের হুথি : ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথির নেতা মোহাম্মদ আলী আল-হুথি জানান, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ছিল ফিলিস্তিনের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মম আগ্রাসন। তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিকল্পনা ইহুদিদের দখলকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্বারা অর্থায়িত একটি চুক্তি।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত : সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই পরিকল্পনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করছে আমিরাত।
যুক্তরাজ্য : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখপাত্র বলেছেন, এই পরিকল্পনা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘নেতারা (জনসন এবং ট্রাম্প) ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।’
মিশর : মিশর এই পরিকল্পনার প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ফিলিস্তিনকে ‘সাবধানতার সাথে চুক্তির বিষয়গুলো অধ্যয়ন’ করার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই পরিকল্পনা এমন একটি সমাধান দিয়েছে যা ফিলিস্তিনিদের সমস্ত ‘বৈধ অধিকার’ পুনরুদ্ধার করে একটি অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের পথ প্রশস্থ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।