পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সুচির এনএলডি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার এখন গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। প্রতিবেশেী দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হককে বিশেষ দূত হিসেবে মিয়ানমারে পাঠিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোতে পররাষ্ট্র সচিব মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চিঠি অং সান সুচির হাতে তুলে দেয়া হয়। চিঠিতে অং সান সুচিকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। সুচি জানিয়েছেন, সুবিধাজনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। পররাষ্ট্র সচিবকে মিয়ানমার পাঠানোর মূল উদ্দেশ হচ্ছে, দেশটির সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। সড়ক ও বিমান যোগাযোগ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, ভ্রমণ সুবিধা, ভিসা সহজীকরণসহ নানা ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে উভয় দেশ কাজ করবে এমন বহুমুখী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা। এ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব ও অং সান সুচির মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। সে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে আগ্রহী। এখন প্রয়োজন সম্পর্ক জোরদার করার জন্য দ্রুত ও নানামুখী উদ্যোগ।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমার বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। তার সাথে বাংলাদেশের একটি বিরাট এলাকার ভূখ-গত সীমানা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবেশী হিসেবে উভয় দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা অত্যাবশ্যক। এ সম্পর্ক তাদের স্বার্থেই প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভারতের যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসন এবং প্রভাব তা থেকে বের হয়ে আসতে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে। একমুখী প্রতিবেশীর কুপমুন্ডুকতা থেকে বের হয়ে একাধিক প্রতিবেশীমুখী হওয়ার ইতিবাচক দিকে বাংলাদেশ অগ্রসর হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান রয়েছে, তেমনি মিয়ানমারেরও ভৌগলিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো মহাপরাশক্তিধর দেশ ও মিয়ানমারের সাথে সব ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য দেশও মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী হিসেবে সবার আগে আমাদের নিজেদের স্বার্থে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা অপরিহার্য। বলা বাহুল্য, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে মাঝে মধ্যে টানপোড়েন সৃষ্টি হলেও বরাবরই দু’দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক না শীতল, না উষ্ণ। দেশটি দশকের পর দশক ধরে সামরিক জান্তার অধীনে থাকায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে জোর করে ঠেলে দেয়াকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য নতুন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে কয়েক মাস আগে মিয়ানমারে বিশেষভাবে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসায় বাংলাদেশ দেশটির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হয়ে উঠে। শুধুমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যার মধ্যে আটকে না থেকে বৃহত্তর ও বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি উপলব্ধি করা বিচক্ষণতারই পরিচায়ক। বর্তমান বিশ্বে চিরশত্রু বলে কিছু নেই। যুগ যুগ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অনতিদূরে অবস্থিত যে কিউবার সাথে ‘দা-কুমড়া’ সম্পর্ক ছিল, তা এখন অত্যন্ত মধুর সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। চিরশত্রুতার অবসান ঘটিয়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বেশ জোরদার হয়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের তো শত্রু থাকারই কথা নয়। সবার সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। এ নীতিই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ‘লুক ইস্ট’ বা পূর্বমুখী অর্থনীতির যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে, তাতে সর্বাগ্রে মিয়ানমারকেই ধরতে হবে। পূর্বমুখী হতে হলে মিয়ানমার হয়েই যেতে হবে। অর্থাৎ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন এবং দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে মিয়ানমারকে গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এ হিসেবে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টির বিকল্প নেই। এতে উভয় দেশেরই লাভ। যে এশিয়ান হাইওয়ের পরিকল্পনা রয়েছে, তা বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমারের উপর দিয়েই পূর্ব এশিয়ামুখী হবে। মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে বাংলাদেশ অধিক লাভবান হবে। দেখা যাবে, ভারতের উপর একচেটিয়া নির্ভরশীলতা বা আমাদের উপর ভারতের আগ্রাসী মনোভাব অনেকটাই প্রশমিত হয়ে আসবে। প্রতিবেশীর সাথে এক ধরনের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সাধুবাদযোগ্য। প্রতিবেশীর সঙ্গে শীতল নয়, উষ্ণ সম্পর্ক এবং তা প্রসারিত করাই দেশের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। এক প্রতিবেশী নির্ভর পররাষ্ট্রনীতির অর্থই হচ্ছে, অন্য প্রতিবেশীর সাথে অন্যায্য আচরণ করা এবং বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। আমাদের পররাষ্ট্রের মূলনীতিই হচ্ছে, কারো সাথে শত্রুতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুতা। আমরা প্রায়ই এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখি। বর্তমান পররাষ্ট্র নীতিতেও এ ধরনের প্রবণতা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে নিকট প্রতিবেশী মিয়ানমারের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে পররাষ্ট্র সম্পর্ক প্রসারের একটি ইতিবাচক দিক। সম্পর্ক দৃঢ় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগ্রহে মিয়ানমারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় দেশের এ আগ্রহ ধরে রাখতে অনতিবিলম্বে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উভয় দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের সফর বিনিময় ও বৈঠক হওয়া জরুরী। আমরা আশা করবো, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ লোক দেখানো বিষয়ে পরিণত হবে না। আমরা তার এ উদ্যোগের সাফল্য কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।