বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে থাকা না থাকা কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দুটি প্যানেল। যার মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ নামের প্যানেল থেকে প্রতিদ্বদ্বিতা করছে ভিসিপন্থী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকরা। অন্যদিকে ভিসি বিরোধী আওয়ামী লীগের একাংশ, বিএনপি এবং বামপন্থী শিক্ষকরা ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ নামের প্যানেল গঠন করে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছে। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে চলছে নতুন মেরুকরণ।
ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ‘নির্বাচনের ফলাফলের উপর অনেকটা নির্ভর করছে ভিসির অপসারণ আন্দোলনের গতিপথ ও টিকে থাকা-না থাকার বিষয়। কারণ অতীতের ভিসি পতন আন্দোলনে শিক্ষক সমিতির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই।’
এদিকে ভিসিকে টিকিয়ে রাখতে ভিসিপন্থী শিক্ষকরা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম নিজেও গতকাল অফিসে না এসে নিজ বাসভবনে শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে বিরোধীরাও সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে জয় লাভের মাধ্যমে ভিসি অপসারণের আন্দোলনকে জোরদার করতে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তাই এবার দেখার বিষয় ভোটের রাজনীতিতে কারা এগিয়ে যাবেন।
এদিকে গত বছর শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০১৯ এর নির্বাচনে ভিসিপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল ‘বঙ্গবন্ধু আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ এর ভরাডুবি হয়েছে। ১৫টি পদের মধ্যে মাত্র ৫টি পদে জয়লাভ করে তারা। অপরদিকে সভাপতি, সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ মোট ১০টি পদে জয়লাভ করেছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিরোধী শিক্ষকদের প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ, বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকরা একজোট হয়ে এই প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
তবে নির্বাচনের পরে দল বদল করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমারসহ ৪ জন। যার কারণে ক্যাম্পাসের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতি তেমন ‘সক্রিয়’ ভূমিকা রাখতে পারেননি। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার পর শিক্ষক সমিতির পদ থেকে ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সম্পাদকসহ ৪ জন। সব মিলিয়ে বছরজুড়ে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষক সমিতির এমন অবস্থায় নতুন নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। ক্যাম্পাসের সচেতন শিক্ষকরা মনে করছেন, ‘যাদের হাত ধরে শিক্ষক সমিতি উজ্জীবিত হবে এবং ক্যাম্পাসের সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে যারা ভূমিকা রাখতে পরবে তাদেরকেই ভোট দিবেন তারা।’
শিক্ষকরা মনে করেন, ‘যদি ভিসিপন্থী প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। সেক্ষেত্রে থেমে যাবে ভিসি অপসারণের আন্দোলন। আর যদি বিরোধী প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে জোরদার হবে আন্দোলন।’ জানা যায়, ভিসিপন্থী প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন শিক্ষা ও গবেষণায় সুনাম থাকলেও ২০১৮ সালে ভিসি বিরোধী শিক্ষকদের অবরোধ চলাকালীন সময়ে বিশমাইল পরিবহন ডিপোর সামনে শিক্ষকদের সঙ্গে হাতাহাতি এবং ভিসির বাসভবনের সামনে হামলার ঘটনায় তিনি ‘প্রত্যক্ষ ইন্ধন’ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া দল বদল করে এবারই প্রথম শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আলমগীর কবির। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে বিরোধী প্যানেল থেকে জয়লাভ করেন। এমনকি তিনি ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’র সমন্বিত কমিটির দায়িত্বে থেকে দীর্ঘদিন বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরে হঠাৎ করে তিনি ভিসির আস্থাভাজন শিক্ষকে রূপান্তরিত হয়ে ভিসিপন্থী শিক্ষক গ্রæপের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে ওঠেন। এমন দলবদলের কারণে শিক্ষকদের নিকট আস্থা সঙ্কটে আছেন এই প্রার্থী।
তবে এসব বিষয়ে খুব একটা ভাবছেন না বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান। তার মতে, ‘বিতর্কিত এবং দল পাল্টানো নিয়ে যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা সবাই উন্নয়নের পক্ষে। গত বছর ভিসি সবাইকে বিশ^বিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে একসাথে কাজ করার আহŸান করেছেন। তখন থেকেই তারা আমাদের সাথে আছেন। আর এই প্যানেল মূলত করা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের কথা চিন্তা করে। যারা সামনের দিনগুলোতে এই উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলে মনে হয়েছে আমরা তাদেরই প্রার্থী করেছি।
নির্বাচনের বিষয়ে বিরোধী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা সব শিক্ষককেই আমাদের প্রেক্ষিতটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বা আন্দোলন সব কিছুতেই যেন শিক্ষক সমিতি জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করতে পারে। মূলত এটিই আমাদের ¯স্লােগান। শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের হাতেই থাকবে। এটা যেন কারো হাতিয়ার না হয়।’
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ভিসি অপসারণ আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনটি হচ্ছে ভিন্ন একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে। আন্দোলন প্রয়োজন হয় একটি চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে গিয়ে। তার আগ পর্যন্ত আমরা একটি কনস্ট্রাক্টিভ রোল প্লে করতে চাই। আমরা প্রশাসন ও আন্দোলনকারী সবার হয়েই কথা বলতে চাই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।