পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গভীর বঙ্গোপসাগরে বিচরণশীল মাছ কৈ কোরাল। সচরাচর শীত মৌসুমে জেলেদের জাল কিংবা বিশেষ ধরনের বরশিতে ধরা পড়ে। তখন প্রকৃতির আপন নিয়মে সমুদ্রের কিছুটা অগভীর অংশের দিকে বিচরণ করে কৈ কোরালের মতো সমুদ্রের অতিকায় প্রাণী। সুস্বাদু মাছ ‘পাকা’ বা পূর্ণবয়স্ক কৈ কোরাল। তবে ধরা পড়ে কদাচিৎ। এবার জেলেদের ট্রলারে শিকার হলো সাত মণ ওজনের ঢাউস সাইজের একটি কৈ কোরাল মাছ।
গতকাল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অভিজাত-বনেদী-ধনী লোকদের বাজার হিসেবে খ্যাত কাজীর দেউড়ী কাচা বাজারে মাছের দোকানে কেটে কেটে টুকরো করে বিক্রি হয় কৈ কোরাল। কেননা এত বিশাল মাছটির একক কোনো ক্রেতা ছিলেন না। আবার চাহিদাও অনেকেরই। অতিকায় মাছটি বাজারে এসে পৌঁছার সাথে সাথেই অনেকেই কেনার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। রীতিমতো ভিড় জমে উঠে বাজারে।
সামুদ্রিক পাকা কৈ কোরালের আস্বাদ নেওয়ার বেজায় চাহিদা! এ অবস্থায় আগ্রহী ক্রেতাদের অগ্রিম অর্ডার অনুসারে তালিকা তৈরি করা হয়। কৈ কোরাল মাছের খন্ড প্রতিকেজি বিক্রি হয় ১২শ’ টাকা দরে। প্রায় পৌনে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয় পুরো মাছটি। সাধারণত ছোট ও মাঝারি সাইজের কোরাল ও কৈ কোরাল প্রতিকেজি ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। কাজীর দেউড়ী বাজারে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যেই দুয়েক কেজি থেকে চার-পাঁচ কেজি পর্যন্ত সাত মণ ওজনের পুরো কৈ কোরাল মাছটিই বিক্রি করা হয়ে যায়। মাছের মাথার অংশ, হাড়-গোড়ও বাদ যায়নি। বিভিন্ন দামে সেগুলো বিক্রি হয়। সামুদ্রিক বড় জাতের কোরাল মাছ শুধুই সুস্বাদু নয়। স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারী।
কোনো কোন ক্রেতা জানান, তারা কৈ কোরাল কিনে নিয়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে আস্বাদ গ্রহণ করবেন। শুধু তাই নয়। এর পাশাপাশি বিদেশে থাকা তাদের আত্মীয়-পরিজনের কাছেও মাছের ভুনা-রান্না কিছুটা পাঠানোর আগ্রহে।
কাজীর দেউড়ী বাজারের হারুনের মাছের দোকানে ইতোপূর্বেও মাঝেমধ্যে বড় সাইজের সামুদ্রিক মাছ বিক্রির জন্য আনা হয়। সচরাচর শীতকালে সমুদ্র শান্ত থাকায় ঢাউস আকারের মাছ ট্রলারের জালে ও বরশিতে ধরা পড়ে। গতকাল বিক্রীত মাছটি ছিল এ বাজারে চলতি মৌসুমের সবচেয়ে বড়। এটি বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে শিকার হওয়ার কৈ কোরাল মাছটি গত বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী নদীর ৪ নম্বর ঘাটে এসে পৌঁছা একটি ফিশিং ট্রলার থেকে সংগ্রহ করা হয়। সেখানে কত দামে মাছটি কেনা হয় তা জানা যায়নি। মাছটি সংগ্রহের পর ভ্যানযোগে নিয়ে আসা হয় কাজীর দেউড়ী বাজারে।
দোকান কর্মচারীরা জানান, কাটাকুটির আগে ৬ হাজার টাকার বরফ কিনে নিয়ে কৈ কোরাল মাছটি যতেœর সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় মাছটি কাটা হয়। কেটে টুকরো টুকরো করে ক্রেতাদের আগে করা তালিকা অনুযায়ী বিক্রি শুরু হয়। গরু কাটাছেড়ায় অভিজ্ঞ কসাইয়ের মতোই বিশাল আকারের মাছ কাটাছেড়ার কাজে অভিজ্ঞ তিন জন ‘মাছের কসাই’ প্রথমেই মাছটির আঁইশসহ মোটা চামড়া ছেড়া-ছাড়ানোর কাজগুলো শেষ করেন।
প্রায় ২৬৪ কেজি ওজনের মাছটির মূল ‘গোশত’র বা মাংশল অংশ কেজি ১২শ’ টাকা ছাড়াও মাছের বিভিন্ন অংশ বিক্রী হয় ভিন্ন ভিন্ন দামে। ঢাউস মাছের মাথা বিক্রি হয় কেজি ৪ থেকে ৫শ’ টাকা দরে। তবে মাছের নাড়িভুঁড়ি, কাঁটা, আঁইশ ও লেজের শেষাংশ ওজনে ধরলে বাদ গেছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ কেজির মতো। মাছের মাংশল অংশগুলো বেছে নিয়ে তারপর গোশত কাটার মতো কেটে টুকরো টুকরো করা কৈ কোরাল মাছের ‘গোশত’র অংশগুলো বেচাবিক্রী শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। তার আগেই তালিকাভূক্ত ক্রেতারা এসে ভিড় জমান। সেখানে শীতের সকালবেলায় তাও ছুটির দিনটিতে গতকাল রীতিমতো উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।
বিপন্ন সামুদ্রিক মাছ
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় বঙ্গোপসাগরকে বলা হয় ‘মৎস্য খনি’। বঙ্গোপসাগরে বিজ্ঞানীরা ৩৬ জাতের চিংড়িসহ ৪৭৬ প্রজাতির মৎস্যের মজুদ সন্ধ্রান পেয়েছেন সেই ষাটের দশকের জরিপ গবেষণায়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, তেল-বর্জ্য-কার্বন ও রাসায়নিক দূষণে গভীর সমুদ্রে বিচরণশীল অতিকায় প্রাণিজগত বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত হারে মাছ শিকারের কারণেও সামুদ্রিক মাছের মজুদ ও বর্ধনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমারের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ট্রলার নৌযানগুলো সুযোগ বুঝেই লোপাট করে নিয়ে যাচ্ছে সামুদ্রিক মাছ।
বিচিত্র জাতের সুস্বাদু সামুদ্রিক মাছের দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার প্রায় বাইরে চলে গেছে। সামুদ্রিক মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছেন অনেকেই। চিংড়ি-লবস্টার, ইলিশসহ লাক্ষ্যা, কোরাল, পোয়া, রূপচাদা, কালাচাঁদা, সুরমা, ছুরি, সুন্দরী, কাইক্কা, লইট্টা, মাইট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের আহরণ এবং সরবরাহ দুইই কমে আসছে। জেলেরা জানান, সাগরে অনেক জাতের মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। জেলেরা ট্রলার নৌযান ছুটিয়ে সমুদ্রে ঘুরেফিরে আজকাল আর আগের মতো মাছ ধরে আনতে পারছে না।
কৈ কোরাল মাছ, তিমি, ডলফিনের মতো ইত্যাকার অতিকায় সামুদ্রিক প্রাণীগুলো সবমসয়ই গভীর বঙ্গোপসাগরে বিচরণশীল। অগভীর সমুদ্রে এদের জন্য খাবার, বাসস্থান এবং বিচরণের উপযোগী আবহাওয়া-জলবায়ু ও পরিবেশ-প্রতিবেশ নেই। কিন্তু বৃহাদাকার মৎস্যসহ সামুদ্রিক এই প্রাণীগুলো ইদানীং মিলছে অগভীর সমুদ্র উপকূলে। গভীর সাগরের বৃহাদাকার মাছ ও প্রাণীরা অগভীর সাগর উপকূলে এসেই কেন ধরা পড়ছে তা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহলেও।
বঙ্গোপসাগরে মাছের বিচরণ ও আহরণ হ্রাস সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. হোসেন জামাল বলেন, সমুদ্রে মাছ কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের দূষণ বড় একটি কারণ। শিল্প-কারখানার ও রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য, কার্বন সাগরে গিয়ে মিশছে। ক্ষতিকর তেল বর্জ্য পড়ছে সমুদ্রে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবও রয়েছে। সমুদ্রের পানিতে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক তারতম্য ঘটছে। অক্সিজেন ঘাটতি হচ্ছে ব্যাপক। এরফলে মাছসহ বৃহাদকার প্রাণিগুলো বাঁচার সন্ধান করতে গিয়ে দিশেহারা হয়েই এদিক-সেদিক ছুটে যাচ্ছে। তাছাড়া সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ হয়ে পড়েছে বিপন্ন। সমুদ্রে দূষণরোধে অবিলম্বে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।