Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্তে বিএসএফের অপ্রতিরোধ্য হত্যাকাÐ

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম



সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বর্বরতা ও হিং¯্রতা চরম আকার ধারণ করেছে। বিএসএফ পাখির মতো বাংলাদেশিদের গুলি করে মারছে। গুলি ও নির্যাতনে গত দুই দিনে ৬ জন নিহত হয়েছে। চলতি মাসের বিগত ১৫ দিনে নিহত হয়েছে ১০ জন। সরকারি হিসেবে গত বছর হত্যাকাÐ বেড়েছে ১২ গুণ। বিজিবি’র এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা গরু আনতে যখন সীমান্তে যায়, তখনই এ রকম ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশিরা যাতে সীমান্তে না যায়, এজন্য বিজিবি ওই সব এলাকায় সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারপরও এটা থামছে না। তিনি বলেছেন, সীমান্ত হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ ভুলবশত বা অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে, বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি অনুযায়ী তাকে বিজিবি’র কাছে হস্তান্তর করার কথা। বিএসএফ চুক্তি অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ না করে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করছে। প্রতিটি ঘটনায় বিজিবি জোরালো প্রতিবাদলিপি পাঠায়। তবে বিএসএফ দাবি করে, তার সদস্যদের ওপর যখন হামলা করা হয়, তখন প্রাণ রক্ষায় তারা প্রাণঘাতী নয় এমন গুলি করে। অন্যদিকে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় রাখার জন্য ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা হলেও ভারত তা মানছে না।

বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পরিচিত। এই সীমান্তে যত মানুষকে গুলি ও নির্যাতন করা হয়, তা আর কোনো সীমান্তে করা হয় না। আর এ ঘটনা ঘটে একতরফাভাবে বিএসএফ কর্তৃক। সামান্য ছুতায় বিএসএফ নিরীহ বাংলাদেশিদের গুলি ও নির্যাতন করে হত্যা করে। বছরের পর বছর ধরে এ হত্যাকাÐ চললেও বিগত কয়েক বছরে তা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শেষে বিজিবি প্রধান স্বীকার করে বলেছেন, সীমান্তে হত্যাকাÐ বেড়েছে। তিনি নিজেই পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছেন, ২০১৯ সালে সীমান্তে ৩৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে ২০১৯ সালে নিহত হয়েছে ৪৩ জন। এদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ৬ জন নিহত হয়েছে। অপহৃত হয়েছে ৩৪ জন। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেখানে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সমঝোতা অনুযায়ী একজনও নিহত হওয়ার কথা নয়, সেখানে প্রায় প্রতিদিনই বিএসএফ গুলি ও নির্যাতন করে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। বিষয়টি যেন সরকার মেনে নিয়েছে। সরকারের এমন আচরণের কারণেই ভারত দিনের পর দিন বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন করে চলেছে। অথচ কিছুদিন আগে নেপাল সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক এক নেপালী হত্যাকাÐ নিয়ে নেপালে সরকারসহ দেশটির সচেতন নাগরিকরা তীব্র প্রতিবাদ করে। দুঃখের বিষয়, এর উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে। সীমান্তে বিএসএফ নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারলেও সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোরালো কোনো প্রতিবাদ দেখা যায় না। বড় রাজনৈতিক দলটি প্রেস কনফারেন্স করে দুয়েকটি কথা বলে দায় সারছে। যেসব ইসলামী দল রয়েছে, তারাও পুরোপুরি নিশ্চুপ রয়েছে। সরকার ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে এমনভাবে কথা বলা হয়, যা ভারত আমলেই নেয় না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব সর্বকালের সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে বলে সরকার বার বার দাবি করলেও সেটাকে এখন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। ভারত বন্ধুত্বের জবাব দিচ্ছে সীমান্তে বাংলাদেশিদের গুলি ও নির্যাতনের মাধ্যমে। এটা কী ধরনের বন্ধুত্ব, তার কোনো জবাব সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া যায় না। ভারতকে সবকিছুতেই ছাড় দেয়ার এমন একটা মানসিকতা সরকারের মধ্যে বরাবরই রয়েছে। ভারত যা চায়, যেভাবে চায়Ñ তার সবই সরকার পূরণ করেছে এবং করছে। সীমান্তে বিএসএফ নির্বিচারে বাংলাদেশিদের মারছে, তা নিয়ে ন্যূনতম প্রতিবাদ করা হচ্ছে না। সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যার জোর প্রতিবাদ না করার কারণে বিএসএফ প্রশ্রয় পেয়ে হত্যাকাÐ চালিয়ে যাচ্ছে।

সীমান্তে বিএসএফ যেরূপ নৃশংস ও নির্মমভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন করে চলেছে, তার বিরুদ্ধে জোরালো ও কার্যকর প্রতিবাদ না করা হলে কোনোদিনই তা বন্ধ করা যাবে না। এ ব্যাপারে সবার আগে সরকারকে প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সোচ্চার হতে হবে। ভারতের এ অন্যায় কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে শুধু সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন নিয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করলেই চলবে না, তাদেরকেও প্রতিবাদ করতে হবে। দিনের পর দিন বিএসএফ খেয়াল খুশি মতো বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন করবে, আর আমরা নিশ্চুপ ও নির্বিকার থাকবো, এটা হতে পারে না। এভাবে নিশ্চুপ ও নির্বিকার থাকা উচিতও হবে না। বিএসএফের এই বর্বরতা ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সকল সচেতন মহলকে সরব ও সোচ্চার হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএসএফ

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন