Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শৈত্যপ্রবাহের কবলে ব্যাহত জীবনযাত্রা

তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.২

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

শীতের কামড়ে বাঘ পালানো মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহ পার না হতেই আবারও তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে দেশ। উত্তরের হিম কনকনে হাওয়ার জোর, মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় মানুষ জবুথবু। উত্তরাঞ্চল, বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ, দক্ষিণ-পশ্চিম, তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের অনেক জায়গায় সূর্যের কিরণ ও তেজ যেন ফিকে হয়ে গেছে। শীতের দাপটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দুর্ভোগ বেড়ে গেছে কর্মমুখী মানুষ, শিশু-বৃদ্ধ, স্কুল-মাদরাসার শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদেরও।

গতকাল সর্ব-উত্তরের জনপদ পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঠান্ডা হাওয়া ও কুয়াশার ঘোরে রংপুর বিভাগে দিনের বেলায় পারদ নেমে গেছে এমনকি ১৫ থেকে ১৭ ডিগ্রিতে! দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৮.৬, ঢাকায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৩.৭ এবং সর্বনিম্ন ১৩.৪ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রামে যথাক্রমে ২৫ এবং ১৭ ডিগ্রি সে.। আজ দেশের তাপমাত্রা সার্বিকভাবে হ্রাসের পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, শীতের একটি বলয় এখন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে। গতকাল দিনের বেলাতেই রংপুর বিভাগে তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে ডিমলায় ১৫, রাজারহাটে ১৬, রংপুরে ১৭.৫, তেঁতুলিয়ায় ১৭.৯, সৈয়দপুরে ১৮ ডিগ্রি সে.। রংপুরে রেকর্ড করা হয়েছে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে রাতে বা ভোর-সকালের সর্বনিম্ন পারদ ছিল ৯ ডিগ্রি সে.। পুরো রাজশাহী, রংপুর বিভাগজুড়ে গতকাল মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।

এদিকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

রংপুর বিভাগসহ মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

আমাদের সংবাদদাতারা জানায়, গতকাল রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় দেখা মেলেনি সূর্যের। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝড়ে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর ছিল ভেজা। পশ্চিমা হাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষজন শীতের কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বয়স্ক, শিশু ও ছিন্নমুল মানুষেরা। শীতবস্ত্রের অভাবে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এছাড়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ।

রংপুর : রংপুরে গতকাল চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ আর্দ্রতা কাছাকাছি আসায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কমপক্ষে আরো দু-একদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সরেজমিনে সকালে রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। শীতের কারণে রংপুরের রাস্তাঘাট ও হাট-বাজারে জনসমাগম আগের তুলনায় অনেক কম। শীতের কবল থেকে বাঁচার জন্য গ্রামাঞ্চলে লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। শীতের এই পরিস্থিতিতে মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগলসহ গবাদিপশুর অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়েছে।

এদিকে প্রচন্ড শীতের কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র লোকজন। শীতবস্ত্রের অভাবে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ নিয়ে তিন দিন ধরে দেখা মেলেনি সূর্যের। দিনভর হিমেল বাতাসে কনকনে শীত অনুভ‚ত হয়েছে। কমে গেছে দিনের সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান। সারা রাত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে। এতে সড়ক ও মহাসড়কে চালকদের যানবাহন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

নীলফামারী : গত তিন দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গতকাল সকাল ৬টায় নীলফামারী জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া দপ্তর।
সকাল থেকে আকাশ ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকায় ঘড়ির কাঁটায় দুপুর একটা বাজলেও দেখা মেলেনি সূর্যের। সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ভারী ও মাঝারি যানবাহনগুলো চলাচল করতে দেখা গেছে। মৃদু শৈত্য প্রবাহ আর হিমশীতল বাতাস বইয়ে যাওয়া তীব্র শীতে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। ফলে অধিকাংশ সময় জনশ‚ন্য থাকছে শহরের রাস্তাঘাট। তীব্র শীতে ঘর থেকে বের হতে না পারায় চমর বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষগুলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ